Friday, December 19

যে জীবন জলে ভাসে


রাকিব মোজাহিদ: সকাল, দুপুর, রাত- সারাটা সময় সমুদ্রের সঙ্গে। কখনও উত্তাল সমুদ্র, কখনওবা নিস্তরঙ্গ মন নিয়ে সমুদ্রের সঙ্গে চলা। শুধু সমুদ্র জয়ের গল্প এটা নয়, নীল সমুদ্র সঙ্গে নিয়ে চলার গল্পও বটে। চলা, বলা, ভাসা, কিংবা ভেসে থাকার চেষ্টা- পুরোটাই সমুদ্রের মধ্যে। সকালের আলো ফোটে জাহাজের ডেকে চায়ে কিংবা কফির সঙ্গে, বিকালের ক্লান্ত সূর্য বিদায় নেয় ডেক থেকেই। আবার নিঝুম রাত্রি নামে চাঁদের আলো নিয়ে- এ হলো একজন 'নাবিকের সমুদ্র যাপনের চিত্র'। কেমন লাগে সেই সময়গুলো যখন জাহাজে করে সমুদ্র পাড়ি দেয়া হয়, এমন প্রশ্ন দিয়েই শুরু হয় ওমর মাসুদের সঙ্গে কথোপকথন। পাঠক সেই প্রশ্নের উত্তরের প্রথম দিককার কথাগুলোই 'নাবিকের সমুদ্র যাপনের চিত্র' হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে। এমন প্রশ্ন বোধহয় একটু আনমনাই করে দিয়েছিল মাসুদকে। 'ঋতু যেমন রঙ বদলায়, তেমনি ক্ষণে ক্ষণে রঙ বদলায় সমুদ্র। সমুদ্রের এমন বদল আর বিশালতা আমাকে এ ক'টা মাস মুগ্ধ করেই রেখেছিল বলা যায়', এমন কথা দিয়ে শেষ হয় মাসুদের উত্তর। এবার মাসুদের পরিচয়টা দিয়ে দেয়া যাক। শাহ মেরিন একাডেমি থেকে মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ে এখন 'জায়া অফসর' কোম্পানির হয়ে কাজ করছেন তিনি। তার মতো যারা মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ে শিপে যান, তাদের বলা হয় ইঞ্জিনিয়ার ক্যাডেট। আবার জিসান আদনানের মতো যারা নটিক্যাল সায়েন্স পড়ে শিপে যান, তাদের বলা হয় নটিক্যাল ডেক ক্যাডেট। এবার একটা গুমর ফাঁস করে দেয়া যাক। আপনার ফেসবুকে যদি কোনো মেরিন ইঞ্জিনিয়ার লিখে থাকেন 'ফিলিং অ্যালন' বিশ্বাস করবেন না, একদম বিশ্বাস করবেন না। কেন করবেন না এর কারণটা বলে নিই। জিসানকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, জাহাজে অবসর সময়গুলো কেমন করে কাটে? এমন প্রশ্নের উত্তরে জিসান বলেন, 'এই ধরুন এক শিপে তো শুধু আমরা বাঙালিরাই থাকি না। অন্যান্য দেশের ইঞ্জিনিয়ার কিংবা ক্যাডেটরাও থাকে। তাদের সঙ্গে চুটিয়ে আড্ডা হয়। বারবি কিউ করা হয়।' আপনি বলুন একে কি একা থাকা বলে? জাহাজের গল্প কি এখানেই শেষ হবে? আরেকটু এগিয়ে নেয়া যাক তবে। সিজান আর মাসুদের সঙ্গে যখন কথা হচ্ছিল তখন রাত ১০টা। রাতের সমুদ্র? 'এ এক অসাধারণ সময়', জিসানের ভাষায়। 'এই ধরুন যেদিন আকাশ পরিষ্কার আর আকাশে তারা আছে, চাঁদ আছে- সেই রাতে সমুদ্র কেমন ভয়াবহ সুন্দর হতে পারে কল্পনা করতে পারেন?' রাতের সমুদ্র কেমন-এমন প্রশ্নে উল্টো প্রশ্ন করেন মাসুদ। মাসুদের সেই 'ভয়াবহ সুন্দর' কল্পনা করতে হলো না। এর বর্ণনা এলো জিসানের কাছ থেকে, 'যদি সমুদ্র উত্তাল থাকে তো ফেনায় থাকা ফসফরাসকে স্বর্ণ মনে হবে। আর সমুদ্র যদি শান্ত থাকে তো সেই নীল সমুদ্রে সোনালি আলো আপনার কল্পনার রাজ্যকেও হার মানাবে আমার বিশ্বাস।' পাঠক যারা এ কল্পনার রাজ্য প্রতিদিন পাড়ি দিচ্ছেন তাদের একজন তো আপনিও হতে পারেন; নাকি? এ রাজ্য ভ্রমণকারী হতে কী থাকতে হবে। জিসানের ভাষায়, 'খুব মেধাবী হওয়ার দরকার নেই। তবে লেগে থাকার ক্ষমতা থাকতে হবে।' তবে পড়াশোনা কতটুকু? উচ্চমাধ্যমিকের পর মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং ও নটিক্যাল সায়েন্স পড়ার সুযোগ আছে বাংলাদেশ মেরিন একাডেমিসহ বেশ কয়েকটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে। 'কেউ যদি চায় ভালো কোনো ক্যারিয়ার গড়তে, তবে বেছে নিতে পারে মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং। কেননা প্রচলিত পড়ার মতো এদের পড়াশোনা নয়। আবার কাজের ক্ষেত্রটাও আলাদা', বলেন মাসুদ। আর চাহিদা? এমন প্রশ্নে জিসানের উত্তর, 'আমাদের আন্তর্জাতিক বাজারের কথা চিন্তা করতে হবে। বাংলাদেশের কেএসআরএম কিংবা বসুন্ধরাসহ কয়েকটি শিপ আছে, যারা পরিবহনের কাজ করে। কিন্তু সারা বিশ্বে কতগুলো শিপ পরিবহন কিংবা অন্যান্য কাজ করে- তার কী ইয়ত্তা আছে?' পাঠক পড়ার সুযোগ থাকলে আপনিও বেছে নিতে পারেন মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং কিংবা নটিক্যাল সায়েন্স। অন্যান্য মেরিনারের মতো আপনার জীবনযাপনের সুযোগ হতে পারে নীল, উত্তাল কিংবা নিস্তরঙ্গ সাগরে।

শেয়ার করুন

0 comments:

পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়