Tuesday, December 30

ওষুধ কারিকুরির পাঠ


আধুনিক হয়েছে চিকিৎসা বিজ্ঞান। আবিষ্কার হয়েছে নতুন নতুন ওষুধ। বিস্তর অধ্যয়ন হচ্ছে ওষুধ নিয়ে। অন্যান্য দেশের মতো আমাদের দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেও পড়াচ্ছে ফার্মেসি। কী পড়ছে, কেন পড়ছে কিংবা কাজের ক্ষেত্র কোথায় শিক্ষার্থীদের- এ নিয়ে আজকের আয়োজন : 
রাকিব মোজাহিদ: প্রবাদে আছে, 'যদি হয় রোগ-বালাই, গাছের কাছে চলো ভাই'। সময় বদলে গেছে; এখন বোধহয় এভাবে আর কেউ বলেনও না কিংবা বিশ্বাসও করেন না। আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের হাত ধরেই বিশ্বাসের এ বদল হয়েছে বলা যায়। চিকিৎসকরা তো অসুখ ধরেন আর ওষুধ লেখেন, ওষুধ আসে কোথা থেকে? এ ওষুধ তৈরির পেছনে এক দল মানুষ নিরলস পরিশ্রম করে যান- তারা হলেন ফার্মাসিস্ট। বাস্তবিক অর্থে তাদেরও কবিরাজ বলা যেতে পারে। এটা স্বীকার করেছেন ইউনিভার্সিটি অব ডেভেলপমেন্ট অল্টারনেটিভের ফার্মেসিপড়ুয়া শিক্ষার্থী মিজানুর রহমান। 'স্নাতক পড়ার শেষের দিকে আমাদের বাধ্যতামূলক রিসার্চ করতে হয়। এ সময় গাছের শিকড়-বাকড় নিয়ে আমাদের কাজ করতে হয়,' বলেন মিজানুর। তার মানে আপনাদেরও কবিরাজ বলা যেতে পারে, এমন প্রশ্নে তার উত্তর, 'হ্যাঁ, ...বলতে পারেন।' পাঠক বুঝতেই পারছেন, সরল স্বীকারোক্তি আসেনি তার কাছ থেকে। তবে তাদের কাজের ধরন কিন্তু তাই বলে। এই যেমন ধরুন ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসেফিকের শিক্ষার্থী আদনান পড়াশোনার ধরন উল্লেখ করে বলেন, 'আমাদের মাঝে মাঝে বিভিন্ন এলাকায় বিভিন্ন রোগ সম্পর্কে জানতে হয়। কোন কোন রোগটা বেশি হচ্ছে, কেন হচ্ছে- এসব। আবার এ অসুখগুলো সারাতে কোন কোন ওষুধ কাজ করবে সে নিয়েও বিস্তর পড়তে হয়, জানতে হয়।' আদনানের কথা থেকেই বিস্তর জানা যায় ফার্মেসির অধ্যয়ন সম্পর্কে। ফার্মেসি তাদের পড়তে হয় ফার্মাকোলোজি সম্পর্কে, যেখানে কোন ওষুধ কীভাবে কাজ করে তা সম্পর্কে জানা যায়। এছাড়াও আছে মেডিসিনাল ক্যামেস্ট্রি, যেখানে পড়ানো হয় ওষুধ তৈরিকারক রাসায়নিক পদার্থ সম্পর্কে। বিষয়গুলো বেশ মজাই লাগে আদনানের। 'আমরা যেমন রোগ সম্পর্কে জানছি, তেমনি জানছি ওষুধ তৈরির পদ্ধতি সম্পর্কে। এটা আমার কাছে বেশ আনন্দদায়ক। অনেকটা রহস্য উদ্ঘাটনের মতো', বলেন মিজানুর। 'আবার অ্যাডভান্স মেডিসিনাল ক্যামেস্ট্রিতে পড়ানো হয় নিত্যনতুন যেসব ওষুধ তৈরি হচ্ছে, সেসব নিয়ে। এটা আরও মজার বিষয় বলা যেতে পারে। তার কারণ হলো, নতুন অসুখ ধরা পড়ছে। সেগুলোর নতুন ওষুধ আবিষ্কার হচ্ছে। কী থেকে অসুখটা হচ্ছে, কোন কোন ওষুধ এর প্রতিষেধক হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে- সে সম্পর্কে জানা যায়', যুক্ত করেন মিজানুর। তাদের কাছ থেকে জানা যায়, ওষুধ কোম্পানিগুলোতে কোন সেক্টরে কাজ করেন তারা। আদনান জানান, ওষুধ প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানের কোয়ালিটি অ্যাসুয়োরেন্স, কোয়ালিটি কন্ট্রোল, ম্যানেজমেন্ট ডেভেলপমেন্ট সেকশনে কাজ করেন ফার্মাসিস্টরা। আর কাজের ক্ষেত্রটা কেমন, এমন প্রশ্নে আমাদের উত্তরদাতা ফার্মাসিস্ট শফিউল আলম শিকদার। কাজ করছেন ল্যাব এইড ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের সিনিয়র এক্সিকিউটিভ (প্রডাকশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট) হিসেবে। তার ভাষায়, 'কাজের সুযোগ আছে। এখন একটা সম্পৃক্ত অবস্থার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে আমাদের পেশাটা। অনেক ফার্মাসিস্ট বের হচ্ছে, ফলে চাহিদা কম। কিন্তু এ অবস্থা থাকার কথা নয়।' এবার আসা যাক বিস্তারিত প্রসঙ্গে। শফিউল আলম জানান, ওষুধ তৈরি ছাড়াও তাদের বড় কাজের ক্ষেত্র হলো হসপিটাল ফার্মেসি এবং কমিউনিটি ফার্মেসি। প্রশ্নের উদয় হতে পারে এটা আবার কেমন? এ প্রশ্নে উত্তর দিয়েছেন তিনি। 'বিশ্বের বিভিন্ন দেশে একজন রোগী আগে পরামর্শ করেন ফার্মাসিস্টের সঙ্গে। সেই ফার্মাসিস্ট পাঠান একজন ডাক্তারের কাছে। ডাক্তার ওষুধ লেখার পর সেই ফার্মাসিস্ট আবার ওষুধ রিভিউ করে দেন। এটা হলো হসপিটাল ফার্মেসির কাজ', বলেন শফিউল আলম। এবার আসা যাক কমিউনিটি ফার্মাসিস্ট প্রসঙ্গে। শফিউল আলম বলেন, 'কমিউনিটি ফার্মাসিস্ট হিসেবে যিনি কাজ করেন তার দায়িত্ব হলো, রোগের চাহিদা অনুযায়ী ওষুধ তৈরি করে দেয়া।' তিনি আরও জানান, বাংলাদেশে বিভিন্ন হাসপাতালে এ ব্যবস্থা করা হলে প্রায় সাড়ে সাত হাজার ফার্মাসিস্ট প্রয়োজন হবে। সেটা শিগগিরই হবে বলে প্রত্যাশা তার। এ তো গেল আগামীর প্রত্যাশা। বর্তমান সময়ের প্রাপ্তি? এবার যুক্ত হন ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী তাসপিয়া। 'আমাদের দেশে এখন ৩০০-র অধিক ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানি আছে। এ প্রতিষ্ঠানগুলোতে আমাদের কাজের সুযোগ আছে। আবার এর মধ্যে কয়েটি প্রতিষ্ঠান দেশের বাইরে ওষুধ রফতানি করছে। তার মানে আমরা দেশের রফতানিতেও অবদান রাখছি। এটা একটা বড় পাওয়া', বলেন তাসপিয়া। যারা পড়ছেন বা এরই মধ্যে কর্মজীবনে প্রবেশ করেছেন, কাজের ক্ষেত্র অবশ্যই আছে- তবে সেটা নিজের যোগ্যতাবলে দখল করে নিতে হবে।

শেয়ার করুন

0 comments:

পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়