Thursday, January 1

নবী ঈসা ইবনে মরিয়ম (আ.)


মুফতি যুবায়ের আহমদ: খ্রিস্টান ও মুসলিম ধর্ম বিশ্বাসে হজরত ঈসা (আ.) আল্লাহর সম্মানিত নবী। কোরআনের শিক্ষা অনুযায়ী মুসলিম হওয়ার জন্য হজরত ঈসা (আ.) এর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করা অত্যাবশ্যক। তার পুনরাগমন উভয় ধর্মাবলম্বী তথা মানবজাতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ। আল্লাহ তায়ালা তার বৃত্তান্ত সম্পর্কে সূরা মরিয়মের ১৬ থেকে ৪০ নম্বর আয়াত পর্যন্ত বিস্তারিত বর্ণনা করেছেন। সেখানে তাঁর দুনিয়ায় আগমন থেকে শুরু করে পৃথিবী থেকে আসমানে গমন পর্যন্ত সব কর্মকান্ডের সারাংশ তুলে ধরা হয়েছে। ঈসা মাটির তৈরি : 'নিঃসন্দেহে আল্লাহর কাছে ঈসার দৃষ্টান্ত হচ্ছে আদমেরই মতো। তাকে মাটি দিয়ে তৈরি করেছিলেন এবং তারপর তাকে বলেছিলেন- হয়ে যাও, সঙ্গে সঙ্গে হয়ে গেলেন।' (সূরা আলে ইমরান : ৫৯)। ঈসার শিক্ষা : আমরা অনেকে ঈসাকে 'আল্লাহ' মনে করি এবং তার উপাসনা করি। এমন করা সঠিক নয়, তা আল্লাহ তায়ালা নিজেই কোরআনে কারিমে বলেন, 'তারা কাফের, যারা বলে যে, মরিয়মতনয় মসিহই-আল্লাহ; অথচ মসিহ বলেন, হে বনি ইসরাঈল, তোমরা আল্লাহর ইবাদত করো, যিনি আমার প্রতিপালক এবং তোমাদেরও প্রতিপালক। নিশ্চয় যে ব্যক্তি আল্লাহর সঙ্গে অংশীদার স্থির করে, আল্লাহ তার জন্য জান্নাত হারাম করে দেন এবং তার বাসস্থান হয় জাহান্নাম। অত্যাচারীদের কোনো সাহায্যকারী নেই।' (সূরা মায়েদা : ৭২)। ঈসা নিজেকে প্রভু বলেননি : আমরা অনেকে যিশুকে প্রভু বলে বিশ্বাস করে থাকি, এমন বিশ্বাস করা সঠিক নয়, কারণ ঈসা নিজেকে কখনও ঈশ্বর বলে দাবি করেননি। সূরা মায়েদার ১১৬ থেকে ১২০ নম্বর আয়াতে আল্লাহ তায়ালা এরশাদ করেন, 'যখন আল্লাহ বললেন, হে ঈসা ইবনে মরিয়ম! তুমি কি লোকদের বলে দিয়েছিলে যে, আল্লাহকে ছেড়ে তোমরা আমাকে ও আমার মাতাকে উপাস্য সাব্যস্ত করো? ঈসা বলবেন, আপনি পবিত্র। আমার জন্য শোভা পায় না যে, আমি এমন কথা বলি, যা বলার কোনো অধিকার আমার নেই। যদি আমি তা বলতাম, তবে আপনি অবশ্যই জানতেন; আপনি তো আমার মনের কথাও জানেন; কিন্তু আপনার গুপ্ত বিষয় আমি জানি না। নিশ্চয় আপনিই অদৃশ্য বিষয়ে জ্ঞাত। আমি তো তাদের কিছুই বলিনি, শুধু সে কথাই বলেছি যা আপনি বলতে আদেশ করেছিলেন। তা এই যে, তোমরা আল্লাহর দাসত্ব অবলম্বন করো, যিনি আমার ও তোমাদের প্রতিপালক। আমি তাদের সম্পর্কে অবগত ছিলাম, যতদিন তাদের মধ্যে ছিলাম। অতঃপর যখন আপনি আমাকে লোকান্তরিত করলেন, তখন থেকে আপনিই তাদের সম্পর্কে অবগত রয়েছেন। আপনি সর্ব বিষয়ে পূর্ণ পরিজ্ঞাত। (সূরা মায়েদা : ১১৬-১১৭)। ঈসাকে আল্লাহর জিজ্ঞাসাবাদ : আল্লাহ তায়ালা বলেন, 'তুমি মানুষের সঙ্গে কথা বলতে, দোলনায় এবং পরিণত বয়সেও এবং যখন আমি তোমাকে গ্রন্থ, প্রগাঢ় জ্ঞান, তৌরাত ও ইঞ্জিল শিক্ষা দিয়েছিলাম এবং যখন তুমি কাদামাটি দিয়ে পাখির প্রতিকৃতির মতো প্রতিকৃতি নির্মাণ করতে আমার আদেশে, অতঃপর তুমি তাতে ফুঁ দিতে; ফলে তা আমার আদেশে পাখি হয়ে যেত এবং তুমি আমার আদেশে জন্মান্ধ ও কুষ্ঠরোগীকে নিরাময় করে দিতে এবং যখন তুমি আমার আদেশে মৃতদের বের করে দাঁড় করিয়ে দিতে এবং যখন আমি বনি ইসরাঈলকে তোমাদের থেকে নিবৃত্ত রেখেছিলাম, যখন তুমি তাদের কাছে প্রমাণাদি নিয়ে এসেছিলে, অতঃপর তাদের মধ্যে যারা কাফের ছিল, তারা বললো, এটা প্রকাশ্য জাদু ছাড়া কিছুই নয়। আর যখন আমি হাওয়ারিদের মনে জাগ্রত করলাম যে, আমার প্রতি এবং আমার রাসূলের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করো, তখন তারা বলতে লাগলো, আমরা বিশ্বাস স্থাপন করলাম এবং আপনি সাক্ষী থাকুন যে, আমরা আনুগত্যশীল।' (সূরা মায়েদা : ১১০-১১৫)। ঈসা কি তিনের এক? : 'আল্লাহ তিনের এক' এ কথা সঠিক নয়। আল্লাহ এরশাদ করেন, 'তারা কাফের, যারা বলে যে, মরিয়মতনয় মসিহই আল্লাহ; অথচ মসিহ বলেন, হে বনি ইসরাঈল, তোমরা আল্লাহর ইবাদত করো, যিনি আমার প্রতিপালক এবং তোমাদেরও প্রতিপালক। নিশ্চয় যে ব্যক্তি আল্লাহর সঙ্গে অংশীদার স্থির করে, আল্লাহ তার জন্য জান্নাত হারাম করে দেন এবং তার বাসস্থান হয় জাহান্নাম। অত্যাচারীদের কোনো সাহায্যকারী নেই। নিশ্চয় তারা কাফের, যারা বলে, আল্লাহ তিনের এক; অথচ এক উপাস্য ছাড়া কোনো উপাস্য নেই। যদি তারা স্বীয় উক্তি থেকে নিবৃত্ত না হয়, তবে তাদের মধ্যে যারা কুফরে অটল থাকবে, তাদের ওপর যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি পতিত হবে।' (সূরা মায়েদা : ৭২-৭৪)। ঈসা প্রেরিত রাসূল ছিলেন : ঈসা (আ.) ছিলেন আল্লাহর প্রেরিত পুরুষ। আল্লাহ তায়ালা স্পষ্ট ভাষায় বলেন, তিনি শুধু একজন রাসূল ছিলেন। আল্লাহ তায়ালা বলেন, 'মরিয়মতনয় মসিহ রাসূল ছাড়া আর কিছু নন। তার আগে অনেক রাসূল অতিক্রান্ত হয়েছেন আর তার জননী একজন ওলি। তারা উভয়েই খাদ্য ভক্ষণ করতেন।' (সূরা মায়েদা : ৭৫)। ঈসা (আ.) কে আকাশে তুলে নেয়া : আল্লাহ তায়ালা বলেন, 'আর তাদের একথা বলার কারণ যে, আমরা মরিয়মপুত্র ঈসা মসিহকে হত্যা করেছি, যিনি ছিলেন আল্লাহর রাসূল। অথচ তারা না তাকে হত্যা করেছে, আর না শূলিতে চড়িয়েছে, বরং তারা এরূপ ধাঁধায় পতিত হয়েছিল। বস্তুত তারা এ ব্যাপারে নানা কথা বলে, তারা এক্ষেত্রে সন্দেহের মাঝে পড়ে আছে, শুধু অনুমান করা ছাড়া তারা এ বিষয়ে কোনো খবরই রাখে না। আর নিশ্চয়ই তাকে তারা হত্যা করেনি। বরং তাকে উঠিয়ে নিয়েছেন আল্লাহ নিজের কাছে। আর আল্লাহ হচ্ছেন মহাপরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।' (সূরা নিসা : ১৫৭-১৫৮)।

শেয়ার করুন

0 comments:

পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়