Monday, December 8

বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন ২০১৪


হুমায়রা ইসলাম: ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৪ তারিখে মন্ত্রিসভা বৈঠকে নীতিগত অনুমোদন পেল 'বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন-২০১৪'-এর খসড়া। প্রস্তাবিত খসড়া আইনে নারীর বিয়ের বয়স ১৮ থেকে কমিয়ে ১৬ এবং পুরুষের জন্য ২১ থেকে কমিয়ে ১৮ বছর করার প্রস্তাব করা হয়েছে। ১৯২৯ সাল থেকে আইনিভাবে আগের বয়সসীমা ২১/১৮ চালু আছে। সরকার বাল্যবিয়ে নিরোধের নামে এই আইন পাস করার পথে হাঁটলেও সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, এর ফলে বাল্যবিয়ে আইনগত ভিত্তি পেতে যাচ্ছে। এই প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর আআমস আরেফিন সিদ্দিক বলেন, 'সরকারের এই সিদ্ধান্তের পেছনে যুক্তি থাকলেও দেশের সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় নারীর বিয়ের বয়স ১৮ এবং পুরুষের বিয়ের বয়স ২১ বছর হওয়াটাই বাঞ্ছনীয়। একবিংশ শতাব্দীতে মানুষের গড় আয়ু বেড়ে যাওয়ায় এবং দাম্পত্য জীবন, পরিবার, সমাজ তথা রাষ্ট্রের সার্বিক উন্নয়নের লক্ষ্যে বিশ্বের সমসাময়িক উন্নত রাষ্ট্রের সঙ্গে তাল মিলিয়ে শিক্ষা ও নারীর ক্ষমতায়নের উদ্দেশ্যে সরকারের বিয়ের বয়সসীমা না কমিয়ে বরং বাল্যবিয়ে রোধে কঠোর পদক্ষেপ নেয়াটাই যুক্তিযুক্ত বলে আমি মনে করি।' তার সঙ্গে একাত্মতা পোষণ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উইমেন অ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজ বিভাগের চেয়ারম্যান তানিয়া হক বলেন, 'সরকারের এ সিদ্ধান্ত সম্পূর্ণ অযৌক্তিক ও ভিত্তিহীন বলে আমি মনে করি। কেননা এ সিদ্ধান্তের ফলে ভবিষ্যতে নারীরা আরও কোণঠাসা হয়ে পড়বে এবং একই সঙ্গে নারীর পাশাপাশি পুরুষরাও বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিশেষত শিক্ষা ক্ষেত্রে উন্নতি থেকে পিছিয়ে পড়বে। সরকারের এ সিদ্ধান্ত নিজেদের প্রগতিশীল সরকার প্রমাণ করার অপচেষ্টা ছাড়া আর কিছুই নয়। কেননা বিয়ের বয়সসীমা কমানোর ফলে সরকারের পক্ষে এটি প্রমাণ করা সহজতর হবে যে, বর্তমানে বাংলাদেশে বাল্যবিয়ে হার আগের তুলনায় অনেকাংশে হ্রাস পেয়েছে।' সরকারের এ সিদ্ধান্তের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উইমেন অ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজ বিভাগে অধ্যয়নরত ইফফাত রুম্মান আনিকা, মাহফুজা শাহানা এবং মিনহাজ উদ্দীন শিবলী। তাদের মতে, 'সরকারের এ সিদ্ধান্ত জাতিসংঘ শিশু অধিকার সনদ ১৯৮৯-এর সঙ্গে সাংঘর্ষিক। যেখানে অনূর্ধ্ব ১৮ বছর বয়স পর্যন্ত সবাই শিশু, বাংলাদেশে একজন ব্যক্তি যেখানে ১৮ বছর বয়সে ভোটাধিকার লাভ করেন, সেখানে বিয়ের বয়সসীমা নারীর জন্য ১৬ ও পুরুষের জন্য ১৮ বছর করাটা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। এর ফলে গর্ভধারণ ঝুঁকি, যৌতুক প্রথা বেড়ে যাবে_ সর্বোপরি নারীর ক্ষমতায়ন বাধাগ্রস্ত হবে।' একই বিভাগে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থী আবুল হুসাইন এ ব্যাপারে বলেন, 'সরকারের এ সিদ্ধান্তের ফলে পুরুষরা শিক্ষাসহ অন্যান্য ক্ষেত্রে অগ্রগতি থেকে পিছিয়ে পড়বে। এর ফলে তারা পরবর্তী সময়ে জনসম্পদে পরিণত না হয়ে পরিবারে তথা দেশের বোঝা হয়ে দাঁড়াবে।' বিবাহের বয়সসীমা সম্পর্কে দু'জন সাধারণ অভিভাবকের মত জানতে চাওয়া হয়। তাদের একজন সরকারের এ সিদ্ধান্তে একাত্মতা পোষণ করে বলেন, 'বাংলাদেশে বর্তমানে ধর্ষণ, যৌন নিপীড়নের মতো ঘটনা বেড়ে যাওয়ায় সার্বিক প্রেক্ষাপট বিবেচনায় বিয়ের বয়সসীমা কমানোর ব্যাপারে সরকারের এ সিদ্ধান্ত যুক্তিযুক্ত।' অন্যজন এ ব্যাপারে ভিন্নমত পোষণ করে বলেন, 'যেহেতু জনগণের কল্যাণের উদ্দেশ্যেই সরকার কর্তৃক এ পদক্ষেপ গৃহীত হয়েছে, কাজেই সরকারের উচিত জনগণের কথা মাথায় রেখে এ সিদ্ধান্ত কার্যকরের আগে যাচাই করা এবং বিয়ের বয়সসীমা না কমিয়ে জনগণকে বাল্যবিয়ে রোধে অধিকতর সচেতন করে তোলা।'

শেয়ার করুন

0 comments:

পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়