Friday, November 21

হাদিসের নক্ষত্র ইমাম তিরমিজি (রহ.)


হাবীবুল্লাহ আল মাহমুদ ইমাম তিরমিজি (রহ.)। বিশ্বের জ্ঞান কেন্দ্রগুলোতে আজও তার নাম শ্রদ্ধার সঙ্গে উচ্চারিত হয়। এলমের প্রতি তার গভীর অনুরাগ সত্য সন্ধানী মানুষের হৃদয় মালঞ্চে সৃষ্টি করে কৌতূহল। তার পূর্ণ নাম আবু ঈসা মুহাম্মদ ইবনে ঈসা আত তিরমিজি। ২০৯ হিজরিতে উজবেকিস্তানের তিরমিজ নামক এলাকায় তার জন্ম। তিরমিজ এলাকার অধিবাসী হিসেবেই তাকে তিরমিজি বলা হয়ে থাকে। সারা পৃথিবীতে এ নামেই তিনি পরিচিত। ইমাম তিরমিজি (রহ.) এর বাল্যকাল ছিল ইসলামী খেলাফতের স্বর্ণযুগ। ঘরে ঘরে তখন চর্চা হতো কোরআন ও হাদিস। সময়ের এ স্রোত বালক তিরমিজিকে জ্ঞানের পথে অগ্রসর হতে সহায়তা করে। বিশেষত খোরাসান ও আমু দরিয়ার ওপারের অঞ্চলগুলো তখন এলমের কেন্দ্রভূমি ছিল। ইমাম বোখারির মতো ব্যক্তিত্ব এ এলাকায় অবস্থান করছেন। বালক বয়স থেকে হাদিসের প্রতি গভীর অনুরাগ ও আগ্রহ থাকায় হাদিসের সন্ধানে তিনি শুরু করেন পদবিক্ষেপ। এলমে হাদিসের জন্য বসরা, কুফা, খোরাসান, হেজাজসহ আরও দূর-দূরান্তে গমন করেন। বিশ্ববরেণ্য মোহাদ্দেসদের শিষ্যত্ব গ্রহণে স্বল্প সময়ে তিনি এলমিবিত্তে ঈশ্বর্যবান হয়ে যান। ইমাম বোখারি (রহ.) এর মতো জ্ঞানতাপস ও তদানীন্তন বিশ্বের আরও অনেক মোহাদ্দেস থেকে তিনি এলম আহরণ করেন। ইমাম মুসলিম, কুতাইবা ইবনে সাঈদ, মুহাম্মদ ইবনে বাশ্্শার, হান্নাদ ইবনে ছারি প্রমুখ মোহাদ্দেস তার ওস্তাদদের অন্তর্ভুক্ত। হাদিস এমন সাধারণ কোনো বিষয় নয় যে, যে কেউ হাদিস বর্ণনা করলেই তার বর্ণনা গ্রহণযোগ্যতা লাভ করবে। এর জন্য প্রয়োজন তাকওয়া, মাহাত্ম্য, ব্যক্তিত্ব ও প্রখর মেধা। ইমাম তিরমিজি (রহ.) কে আল্লাহ তায়ালা সবই দান করেছেন। তার মেধা সম্পর্কে বর্ণিত হয় যে, একবার এক শায়খ দুটি সহিফা তার কাছে প্রেরণ করেন। ঘটনাক্রমে পরবর্তীকালে ওই শায়খের সঙ্গে তার সাক্ষাৎ লাভ হয়। সাক্ষাৎকালীন তিনি চাইলেন শায়খ থেকে সরাসরি হাদিসগুলো শ্রবণ করে নিতে। এ প্রস্তাব শায়খের কাছে পেশ করলে আনন্দের সঙ্গে তিনি তা গ্রহণ করেন এবং বললেন, আমি পাঠ করছি সহিফা দেখে, তুমি মিলিয়ে নাও। ইমাম তিরমিজি (রহ.) তখন ব্যক্তিগত কাগজপত্রের মধ্যে সহিফা দুটি পেলেন না। ভেবেচিন্তে দুটি সাদা কাগজ নিয়েই বসে গেলেন এবং খুব একাগ্রতার সঙ্গে হাদিস শ্রবণ করতে লাগলেন। হঠাৎ কাগজ দুটির ওপর শায়খের দৃষ্টি পড়ে। এতে শায়খ বিরক্ত হয়ে বলে ওঠেন, আমার সঙ্গে কি ঠাট্টা করা হচ্ছে? ইমাম তিরমিজি (রহ.) বিনীতভাবে সমস্যাটি ব্যক্ত করেন এবং বলেন, শায়খ! আপনার কপি আমার কাছে না থাকলেও সেখানকার সবগুলো হাদিস ভালোভাবে আমার হৃদয়পটে সংরক্ষিত আছে। শায়খ তার কথায় আশ্বস্ত হতে পারলেন না। বললেন, শোনাও তো দেখি! ইমাম তিরমিজি (রহ.) একে একে নির্ভুলভাবে সবগুলো হাদিস শুনিয়ে দিলেন। ইমাম তিরমিজি (রহ.) এর স্মৃতিশক্তির প্রখরতা দেখে তিনি বিস্মিত হয়ে যান। ইমাম তিরমিজি (রহ.) সম্পর্কে বলে ওঠেন, তোমার মতো এমন স্মৃতিধর লোক আমি কখনও দেখিনি। ইমাম বোখারি (রহ.) এর মতো ব্যক্তিত্ব ইমাম তিরমিজি (রহ.) সম্পর্কে অনেক প্রশংসামূলক উক্তি করেছেন। তার প্রতিজ্ঞা, এলমের প্রতি আগ্রহ ও সচেতনতার ফলে ইমাম বোখারি (রহ.) বলেন, তুমি এলমি ক্ষেত্রে আমার থেকে যতটুকু উপকৃত হয়েছ আমি তোমার থেকে তার চেয়ে বেশি উপকৃত হয়েছি। ইমাম বোখারি (রহ.) এর এ উক্তিকে অতিশয়োক্তি মনে হলেও অধ্যাপনায় যারা নিযুক্ত এর মর্ম কেবল তারাই বুঝতে সক্ষম। কারণ একজন প্রতিভাবান ও আগ্রহী শিক্ষার্থীর নিগূঢ় প্রশ্ন ও চৈতন্যের ফলে পাঠদাতার জ্ঞানে নেমে আসে সমৃদ্ধি। আরও মজার ব্যাপার হলো, ইমাম বোখারি (রহ.) ইমাম তিরমিজি (রহ.) এর সূত্রে দুটি হাদিসও বর্ণনা করেন। ইমাম তিরমিজি (রহ.) মুসলিম জাতির কল্যাণে লিখে যান অগণিত মূল্যবান গ্রন্থ। উল্লেখযোগ্য রচনাবলির মধ্যে তিরমিজি ও শামায়েলে তিরমিজিই প্রসিদ্ধ ও আলোড়ন সৃষ্টিকারী। তিরমিজিতে ৩ হাজার ৮১২টি হাদিস জমা করেন। এ কিতাব সম্পর্কে প্রখ্যাত মোহাদ্দেস শাহ আবদুুল আজিজ মোহাদ্দেসে দেহলভী (রহ.) বলেন, হাদিস শাস্ত্রের উপকারিতার পরিপ্রেক্ষিতে এ কিতাবটি অন্যসব কিতাবের ওপর শ্রেষ্ঠত্বের দাবিদার। কারণ এর বিন্যাস খুবই সুন্দর ও চমৎকার। এতে ফকিহদের মাজহাব এবং সেইসঙ্গে সবার দলিলের বর্ণনা আছে। তাছাড়া এতে কোনো তাকরার বা পুনরাবৃত্তি নেই। কীর্তিমান এ মহান পুরুষ আজীবন হাদিসের আলো বিতরণ করে ২৭৯ হিজরির ১৩ রজব আপনভূমি তিরমিজে ইন্তেকাল করেন। ইন্তেকালের সময় তার বয়স হয়েছিল ৭০ বছর। জন্মস্থান উজবেকিস্তানের তিরমিজ এলাকায় তাকে কবরস্থ করা হয়।

শেয়ার করুন

0 comments:

পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়