Thursday, November 6

অযত্ন-অবহেলায় পড়ে আছে ফেনীতে মুক্তিযুদ্ধে সম্মুখ সমর দুটি স্মৃতিস্তম্ভ


আবদুল্লাহ আল-মামুন, ফেনী: ফেনীর পরশুরামের চিথলিয়া ইউনিয়নের সলিয়া ও ছাগলনাইয়ার শুভপুর এলাকায় ‘মুক্তিযুদ্ধে সম্মুখ সমর স্মৃতিস্তম্ভ’ দুটি অযত্ন আর অবহেলায় নষ্ট হওয়ার উপক্রম হয়েছে। গণপূর্ত বিভাগ ও সংশ্লিষ্ট কাজের ঠিকাদারের ভাষ্যমতে স্মৃতিস্তম্ভ দুটির নির্মাণ কাজ শেষ। শুধু রংয়ের কাজ বাকী রয়েছে। এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, স্মৃতিস্তম্ভ দুটি এখনো হস্তান্তর হয়নি। কিন্তু কাজের সমুদয় বিল পরিশোধ করা হয়েছে। জেলা গণপূর্ত বিভাগ সূত্র জানায়, সরকার ২০০৫ সালে সমগ্র দেশবাসীসহ নতুন প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্ধুদ্ধ করতে এবং মুক্তিযুদ্ধের ঐতিহাসিক স্মৃতি সংরক্ষনের জন্য ১৯৭১ সালে দেশের যে সব স্থানে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর সাথে মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মুখ যুদ্ধ হয়েছে সে সব স্থানে সম্মুখ লড়াইয়ের স্মৃতি ফলক নির্মানের উদ্যোগ গ্রহন করে। তারই ধারাবাহিকতায় ফেনীর পরশুরামের বিলোনীয়া সীমান্ত সংলগ্ন গ্রাম বাউরখুমা এবং ছাগলনইয়া উপজেলার শুভপুর পুলের পাশে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিস্তম্ভ নির্মানের জন্য স্থান নির্বাচন করে। ফেনী গণপূর্ত বিভাগ ২০০৯ সালের প্রথমে বিলোনীয়া স্মৃতি স্তম্ভের জন্য ৩৮ লাখ ৩৯ হাজার টাকার একটি প্রাক্কলন তৈরী করে। একই বছর সংশোধিত প্রাক্কলন তৈরী করা হয় ৫০ লাখ ৩৯ হাজার টাকা। ২০১০ সালে সংশোধিত প্রকল্পে বিলোনীয়া স্মৃতি স্তম্ভের জন্য ৩০ লাখ ২০ হাজার এবং শুভপুর স্মৃতিস্তম্ভের জন্য ৩০ লাখ ৯৮ হাজার টাকা অনুমোদিত হয়। ২০১০ সালে বাউরখুমা গ্রামের স্মৃতিস্তম্ভের দরপত্র আহ্বান করে কাজটি দেয়া হয় ‘অমি এন্টারপ্রাইজ’ নামে একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে। কিন্তু এরপরই বাউরখুমার নির্বাচিত স্থানের জমি সংক্রান্ত জটিলতা দেখা দেয়। ফলে পুনরায় স্মৃতিস্তম্ভের জন্য স্থান নির্বাচন করা হয় চিথলিয়া ইউনিয়নের ‘সলিয়া’ গ্রামে। এতে শুধু স্থান পরিবর্তনই হয়নি, নতুন করে দরপত্রের মাধ্যমে ঠিকাদারও পরিবর্তন করা হয়েছে। ২০১১ সালে সলিয়া স্মৃতিস্তম্ভের নির্মান কাজ ২৭ লাখ ২৯ হাজার টাকায় মেসার্স একরামুল হককে কার্যাদেশ প্রদান করা হয়। কাজের মেয়াদ কাল দেয়া হয় বার মাস বা এক বছর। ফেনীর গণপূর্ত বিভাগ সলিয়া ও শুভপুর স্মৃতিস্তম্ভ দুটির জন্য পৃথক দরপত্র আহ্বানের মাধ্যমে কার্যাদেশ প্রদান করে। কাজের সামগ্রিক তদারকির দায়িত্বও ছিল গণপূর্ত বিভাগের। মুক্তিযুদ্ধের সম্মুখ লড়াইয়ের স্মৃতিস্তম্ভ নির্মানের জন্য উভয় স্থানে প্রথমে ৫০ শতাংশ করে জমি নেয়ার কথা থাকলেও পরে ২৬ শতক করে জমি নেয়া হয়। সলিয়া এলাকায় ২৬ শতক জমি অধিগ্রহনের ব্যয় হয় ১০ লাখ ৩৬ হাজার ২৩৮ টাকা। তবে শুভপুর এলাকায় সড়ক বিভাগের জমিতে হওয়ায় জমি অধিগ্রহনের প্রয়োজন পড়েনি। এদিকে ছাগলনাইয়ার শুভপুর পুলের কাছাকাছি ঢাকা-চট্টগ্রাম পুরাতন মহাসড়কের পাশে স্মৃতি স্তম্ভের নির্মানের জন্য মাহবুবল হক রিপনের মালিকীয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান আরাধনা এন্টারপ্রাইজকে ১৯ লাখ ১৭ হাজার টাকায় ১৩/০৯/০৯ ইং তারিখ কার্যাদেশ প্রদান করা হয়। কাজের সময়সীমা ছিল ৬ মাস। শুভপুরে প্রথম বার দরপত্রে কাজের কিছু অংশ বাদ পড়ায় পরবর্তীতে ১৫/৬/১১ ইং আলাদা দরপত্রের মাধ্যমে ৮ লাখ ৪৯ হাজার টাকার কার্যাদেশ দেওয়া হয় মেসার্স চৌধুরী এন্টারপ্রাইজের মালিক বাবুল চৌধুরীকে। কিন্তু শুভপুরের প্রথম ও দ্বিতীয় দফার কাজ মেসার্স চৌধুরী এন্টারপ্রাইজ ও আরাধনা এন্টারপ্রাইজ পেলেও কাজ সম্পন্ন করার দায়িত্ব নেয় মেসার্স একরামুল হক। গত বৃহস্পতিবার সরেজমিনে শুভপুর স্মৃতিস্তম্ভ এলাকায় গিয়ে দেখা গেল, স্মৃতি স্তম্ভ সম্পূর্ন অযতেœ-অবহেলায় পড়ে রয়েছে। এটি দেখাশোনার কেউ নেই। স্মৃতি স্তম্ভের একটি অংশ আগাছা আর লতাপাতায় ঢেকে গেছে। স্মৃতি স্তম্ভের গায়ে অথবা সামনে মুক্তিযুদ্ধের কোন কথাই লেখা নেই। গ্রামের মাধ্যমিক স্কুলে পড়ুয়া আবুল হোসেন নামে এক শিক্ষার্থী এবং করিম উল্যা নামে একজন বয়স্ক লোককে স্মৃতি স্তম্ভটি দেখিয়ে সেটা কি জানতে চাওয়া হয়ে তারা দুই জনের কেউ কোন সঠিক উত্তর দিতে পারেনি। তাদের দুজনের বক্তব্যে জানা গেল- স্মৃতি স্তম্ভটিতে বসার মত সুন্দর স্থান হওয়ায় বিকেলে বা সন্ধ্যায় স্থানীয় কিছু যুবকের আড্ডা দেয়ার সুবিধা হয়েছে। এতে বুঝা গেল মুক্তিযুদ্ধে সম্মুখ সমর স্মৃতি স্তম্ভ নির্মানে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি এবং ইতিহাস জানানোর সরকারের প্রকল্প কোন কাজেই আসেনি। শুভপুর ও চিথলিয়ার সলিয়াতে স্মৃতি স্তম্ভ নির্মান ও হস্তান্তরে দেরী হওয়ার কারন প্রসঙ্গে ফেনী গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী আমিনুর রহমান জানান, দরপত্র ও কার্যাদেশ দেয়ার পর ঢাকা থেকে স্মৃতি স্তম্ভের মূল ডিজাইন পেতে দেরী হয়েছে। তিনি জানান, কাজ শতভাগ শেষ হয়েছে। বিলও পরিশোধ করা হয়েছে। তবে রংয়ের কাজটা বাকী রয়েছে। রংয়ের কাজ শেষ করে সহসাই ঠিকাদার থেকে স্মৃতি ফলক দুটি বুঝে নেয়া হবে। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মেসার্স একরামুল হকের ব্যবস্থাপক শম্ভু বৈষ্ণব বলেন, কাজ শেষ, কর্তৃপক্ষ যখন চাইবে- তখনই রংয়ের কাজ শেষ করে হস্তান্তর করা হবে।

শেয়ার করুন

0 comments:

পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়