Saturday, November 1

সত্যের ঝান্ডা বাহী নবী পরিবার


মোহাম্মদ মাকছুদ উল্লাহ মহররম ও আশুরা এলে মুসলিম সমাজে আহলে বাইতকে অত্যন্ত গুরুত্বসহ স্মরণ করা হয়। কারণ এ আশুরার দিনে আহলে বাইতকে নিয়ে কারবালা প্রান্তরে এমন এক নিষ্ঠুর হত্যাকান্ড সংঘটিত হয়েছিল, যা ইতিহাসের গতিধারাকে বদলে দিয়েছিল। এদিন ইয়াজিদের স্বৈরাচারী আচরণের জঘন্যতা সব সীমা অতিক্রম করে গিয়েছিল। তার আগ্রাসনে আহলে বাইতের অধিকাংশ সদস্য শাহাদাতবরণ করেছিলেন। অথচ আহলে বাইতের প্রতি সম্মান প্রদর্শন, আহলে বাইতকে ভালোবাসা ঈমানের অংশ। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বর্ণনা করেছেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, তোমরা আল্লাহকে ভালোবাস। কেননা তিনি তোমাদের স্বীয় নেয়ামত দ্বারা আহার করান। আর আল্লাহর ভালোবাসার জন্য তোমরা আমাকে ভালোবাস এবং আমার ভালোবাসার জন্য আমার আহলে বাইতকে ভালোবাস। (তিরমিজি)। অন্য এক হাদিসে হজরত জায়েদ ইবনে আরকাম (রা.) বর্ণনা করেছেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, আমি তোমাদের মাঝে এমন জিনিস রেখে যাচ্ছি তোমরা দৃঢ়ভাবে তা ধারণ করলে, আমার পরে তোমরা কখনও পথভ্রষ্ট হবে না। তার একটি অন্যটি অপেক্ষা অধিক মর্যাদাপূর্ণ ও গুরুত্বপূর্ণ। আল্লাহর কিতাব যা আসমান থেকে জমিন পর্যন্ত প্রসারিত সুদৃঢ় রশি আর আমার পরিবার তথা আহলে বাইত। এ দুটি কখনও বিচ্ছিন্ন হবে না হাউজে কাউসারে আমার সঙ্গে মিলিত না হওয়া পর্যন্ত। অতএব তোমরা ভেবে দেখ, আমার পরে তোমরা এতদুভয়ের সঙ্গে কেমন আচরণ করবে? (তিরমিজি)। আহলে বাইতের প্রতি ভালোবাসা ঈমানের অংশ হওয়ার কারণ মহান আল্লাহ বিশেষভাবে তাঁর রাসূলের পরিবারকে ঈমানের পূর্ণাঙ্গতার পরাকাষ্ঠা হিসেবে, ইসলামের নিখুঁত নমুনা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেছেন। এরশাদ হয়েছে, 'হে নবী পরিবার! আল্লাহ কেবল চান, তোমাদের থেকে অপবিত্রতা দূর করতে এবং তোমাদের সম্পূর্ণভাবে পবিত্র করতে।' (সূরা আল আহজাব : ৩৩)। একবার হজরত হোসাইন (রা.) হজরত জায়েদ ইবনে আরকাম (রা.) কে বললেন, হে জায়েদ! আপনি বহু কল্যাণ সঞ্চয় করেছেন। রাসূলুল্লাহ (সা.) কে দেখেছেন, তাঁর হাদিস শুনেছেন, তাঁর সঙ্গে জিহাদে অংশগ্রহণ করেছেন এবং তাঁর পেছনে সালাত আদায় করেছেন। হে জায়েদ! আপনি বহু কল্যাণ লাভ করেছেন। আপনি রাসূলুল্লাহ (সা.) থেকে যে হাদিস শুনেছেন তা বর্ণনা করুন। তখন হজরত জায়েদ বললেন, হে ভাতিজা; আমি বৃদ্ধ হয়েছি, আর রাসূলুল্লাহ (সা.) এর সাহচর্যের জামানা প্রাচীন হয়ে গেছে এবং রাসূলুল্লাহ (সা.) এর যেসব হাদিস আমি সংরক্ষণ করেছিলাম তার কিছু ভুলেও গেছি। অতএব যে হাদিস আমি নিজে বর্ণনা করি তা গ্রহণ কর আর যা আমি বর্ণনা করতে চাই না সেজন্য কষ্ট কর না। অতঃপর তিনি বললেন, একবার মক্কা ও মদিনার মধ্যবর্তী 'খুম' নামক একটি কূপের কাছে দাঁড়িয়ে রাসূলুল্লাহ (সা.) খুতবা দিলেন। তিনি বললেন, হে লোক সব! আমিও একজন মানুষ। খুব সম্ভব অতি সত্বর আমার কাছে প্রতিপালকের কাছ থেকে বার্তাবাহক এসে যাবে, আমাকে তোমাদের ছেড়ে পরপারে পাড়ি জমাতে হবে। তবে আমি তোমাদের কাছে দুটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ জিনিস রেখে যাচ্ছি। একটি আল্লাহর কিতাব। তাতে হেদায়েত ও নূর রয়েছে। তোমরা আল্লাহর কিতাবকে সুদৃঢ়ভাবে ধারণ করো। তিনি আল্লাহর কিতাব ধারণ করার জন্য তাগিদ করলেন ও উৎসাহ দিলেন। অতঃপর তিনি বললেন, আমার আহলে বাইতকে রেখে যাচ্ছি। আমি তোমাদের আমার আহলে বাইত সম্পর্কে আল্লাহকে স্মরণ করিয়ে দিচ্ছি। এ কথা রাসূলুল্লাহ (সা.) তিনবার বললেন। হজরত হোসাইন (রা.) একদা বললেন, হে জায়েদ! রাসূলের আহলে বাইত কে? রাসূলুল্লাহ (সা.) এর পত্নীরা কি আহলে বাইত নন? জায়েদ (রা.) বললেন, রাসূলের পত্নীরা তাঁর আহলে বাইত, তবে তারাও রাসূলের আহলে বাইত যাদের ওপর সদকা গ্রহণ করা হারাম। হোসাইন (রা.) বললেন, তাদের মধ্যে কে কে আছেন যাদের ওপর সদকা গ্রহণ করা হারাম? হজরত জায়েদ বললেন, তারা হলেন আলী (রা.) এর পরিবার, আকিল (রা.) এর পরিবার, জাফর (রা.) এর পরিবার এবং আব্বাস (রা.) এর পরিবার। হজরত হোসাইন (রা.) জিজ্ঞেস করলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) এর পরে এদের সবার ওপরই কি সদকা গ্রহণ করা হারাম? হজরত জায়েদ বললেন, হ্যাঁ। (ইবনে কাসির)। ৬৮০ খ্রিস্টাব্দে আশুরার দিনে ইয়াজিদের নৃশংসতায় রাসূলের আহলে বাইতের অধিকাংশ সদস্য শাহাদাতবরণ করেছিলেন, যা ইসলামের ইতিহাসের এক কলঙ্কিত অধ্যায়। হজরত হোসাইন (রা.) রাসূলে করিম (সা.) কর্তৃক প্রবর্তিত সাম্যমূলক ইসলামী খেলাফত ব্যবস্থার বিরুদ্ধে ইয়াজিদের স্বৈরাচারী রাজতন্ত্রকে মেনে নিতে পারেননি। তিনি ইসলামী সমাজকে রাসূলের আদর্শিক ধারায় ফিরিয়ে আনতে আহলে বাইতকে নিয়ে জীবন উৎসর্গ করেছিলেন। তাই মুসলিম উম্মাহর জন্য আশুরার শিক্ষা হলো আহলে বাইতের প্রতি ভালোবাসার মাধ্যমে অর্থাৎ জুলুম-নির্যাতন, অত্যাচার-নিপীড়ন, দুরাচার-দুঃশাসনের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়ে ঈমানকে পরিপূর্ণ করা। লেখক : রাজশাহী কলেজ কেন্দ্রীয় মসজিদ

শেয়ার করুন

0 comments:

পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়