Friday, October 31

ভার্চুয়াল স্টেডিয়ামে লিগ অব লিজেন্ডস


হাসান শাহরিয়ার হৃদয় যেন প্রিমিয়ার লিগের ফুটবল ম্যাচ। ৪০ হাজার দর্শক গ্যালারিতে বসে গলা ফাটিয়ে সমর্থন জোগাচ্ছেন প্রিয় দলকে। খেলছেন সব সুপারস্টার খেলোয়াড়। শুধু তা-ই নয়, করপোরেট স্পন্সর থেকে শুরু করে মিলিয়ন ডলারের পুরস্কারও রয়েছে ম্যাচে। ওপরের বাস্তবতা বাস্তবের নয়, একটি কম্পিউটার গেমের। আর এ খেলার একমাত্র উপকরণ মাউস। লিগ অব লিজেন্ডস ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়নশিপ-২০১৪ এর ফাইনাল ছিল এটি। অনলাইন মাল্টিপ্লেয়ার গেম বা ই-স্পোর্টস হওয়া সত্ত্বেও মূলধারার যে কোনো খেলার মতো এতেও উত্তেজনা ছিল তুঙ্গে। সিউলের ওয়ার্ল্ড কাপ স্টেডিয়ামের ফাইনালে মুখোমুখি হয়েছিল স্টার হর্ন রয়্যাল ক্লাব এবং স্যামসাং হোয়াইট। আর বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে টেলিভিশনের সামনে বসে এটি উপভোগ করেছেন কয়েক লাখ গেমপ্রেমী। ২০১৪ সালের চ্যাম্পিয়নশিপে জিতেছে হো-স্যানের দল স্যামসাং হোয়াইট। পুরস্কার হিসেবে পেয়েছে ১০ লাখ ডলার। লিগ অব লিজেন্ডস মূলত একটি টিম গেম। প্রতি টিমে সদস্য পাঁচজন, যাদের পাঁচটি ভিন্ন ভিন্ন চরিত্র হয়ে খেলতে হয়। প্রতিটি চরিত্রকে বলা হয় চ্যাম্পিয়ন। একেক চ্যাম্পিয়নের ক্ষমতা একেক রকম। কারও শক্তি অনেক, কিন্তু সহজে দম ফুরিয়ে যায়; কেউ খুন করতে পারদর্শী, কিন্তু সহজে মারা পড়ে; আবার কেউ দীর্ঘসময় বেঁচে থাকতে পারে, কিন্তু বিশেষ কোনো ক্ষমতা নেই। খেলাটির মূল লক্ষ্য প্রতিপক্ষের চ্যাম্পিয়নদের কাবু করে কোনো বিশেষ জিনিস ছিনিয়ে নেয়া। প্রত্যেক চ্যাম্পিয়নের মধ্যে বোঝাপড়া ও সমন্বয়ের মাধ্যমেই তা সম্ভব। লিগ অব লিজেন্ডস গেমটির নির্মাতা ক্যালিফোর্নিয়ার রায়ট গেমস। বর্তমানে প্রায় ৩ কোটি গেমার প্রতিদিন এটি খেলে। একসঙ্গে ৭ কোটি মানুষ খেলার রেকর্ডও আছে। একে এখনকার সবচেয়ে বড় ই-স্পোর্টস বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। সময় নিয়ন্ত্রণ ও স্ট্র্যাটেজির কারণে গেমটি তুমুল জনপ্রিয় বলে নির্মাতারা মনে করেন এবং বিনামূল্যে যে কেউ এটি খেলতে পারেন। তবে বাড়তি ফিচারগুলো ব্যবহারের জন্য অর্থ ব্যয় করতে হয়। আর এ বাড়তি ফিচার বিক্রি থেকে গেমটির বার্ষিক আয় ৬০ কোটি ডলারেরও বেশি। গেমটির প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান জানায়, তাদের বেশিরভাগ খেলোয়াড় পুরুষ। অবশ্য মেয়েদের কয়েকটি টিম রয়েছে। গ্র্যান্ড ফাইনালের দর্শকদের মধ্যেও পুরুষের সংখ্যা অনেক বেশি ছিল। সব খেলায় যেমন তারকা থাকে, এতেও আছে। সেরা খেলোয়াড়রা এরই মধ্যে খ্যাতি ও প্রতিপত্তির দিক থেকে অনেক এগিয়ে গেছেন। তাদের পোস্টার পেতে রীতিমতো ভক্তদের মধ্যে হুড়োহুড়ি পরে যায়। বড় বড় স্পন্সররাও তাই দ্রুত আকৃষ্ট হয়ে পড়েন এ ই-স্পোর্টসের প্রতি। লিগ অব লিজেন্ডসের অন্যতম তারকা সান হো-স্যান নিজের ব্যাপারে বলেন, 'সবাই যখন দুপুরের খাবার খায়, তখন আমি ঘুম থেকে উঠি। চ্যাম্পিয়ন হতে চাইলে প্রতিদিন অন্তত ১০ ঘণ্টা প্র্যাকটিস করতে হবে। ২২ বছর বয়সী এ যুবক জানান, এটাই তার ক্যারিয়ার। গেমিংয়ের মাধ্যমেই জীবনধারণ ও যাপন করায় খানিকটা অদ্ভুত হয়ে গেছেন তিনি।

শেয়ার করুন

0 comments:

পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়