Sunday, October 19

কালকিনিতে লাইবেরিয়া ফেরত ৪ প্রবাসী ইবোলা ভাইরাসমুক্ত


মাদারীপুর : মাদারীপুরের কালকিনিতে লাইবেরিয়া ফেরত ৪ প্রবাসী ইবোলা ভাইরাসমুক্ত। আতঙ্কের কিছু নেই। মেডিক্যাল বোর্ডের শারীরিক পরীক্ষা শেষে মাদারীপুরের সিভিল সার্জন ডা. বাসুদেব কুমার দাস এ কথা জানিয়েছেন। জানা গেছে, ইবোলা ভাইরাস কবলিত আফ্রিকার লাইবেরিয়া থেকে মাদারীপুর জেলার কালকিনি উপজেলার এনায়েতনগর ইউনিয়নের ফাসিয়াতলা গ্রামের আনোয়ার সরদারের ছেলে মাহবুব সরদার, বালিগ্রাম ইউনিয়নের আটিপাড়া গ্রামের ইলিয়াস হাওলাদারের স্ত্রী সেতু বেগম (২৮), তার শ্যালকের ছেলে তাসরিন উরফে সেন্টু (৮) এবং মেয়ে ঐশি (২) ইবোলা ভাইরাসের ভয়ে গত ৯ অক্টোবর দেশে ফিরে আসে। বিমানবন্দরে তাদের ডাক্তারি পরীক্ষা না হওয়ায় আত্মীয়স্বজন ও প্রতিবেশিরা তাদের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ বন্ধ করে দেন। বিষয়টি নিয়ে এলাকায় নানা গুঞ্জনসহ আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। এ ছাড়া এ সংক্রান্ত একটি সংবাদ বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। পরে বিষয়টি জানাজানি হয়ে গেলে মাদারীপুরের সিভিল সার্জনের সমন্বয়ে গঠিত একটি মেডিক্যাল টিম ফাসিয়াতলা গ্রামের মাহবুব সরদারের বাড়িতে যায়। ডাক্তাররা মাহবুবের স্বাস্থ্য পরীক্ষা শেষে নিশ্চিত হন যে মাহবুব ইবোলা ভাইরাসমুক্ত। এরপর ওই মেডিক্যাল টিম বালিগ্রাম ইউনিয়নের আটিপাড়া গ্রামের ইলিয়াস হাওলাদারের বাড়িতে যায়। সেখানে তাদের না পেয়ে বাড়ির লোকজনের মাধ্যমে জানতে পারেন তারা ঢাকায় গেছে। চিকিৎসকরা তাদের আত্মীয়স্বজনের মাধ্যমে তাদের সঙ্গে কথা বলেন এবং ইবোলা ভাইরাসমুক্ত বলে নিশ্চিত হন। এ বিষয় কালকিনি উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা প্রতিদিন এদের খবর নিচ্ছেন। এ ছাড়াও প্রতিটি গ্রামের স্বাস্থ্যকর্মীরা দিনে দুবার তাদের বাড়িতে যাচ্ছেন। সেতু বেগমের আত্মীয় রুহুল আমিন মোবাইল ফোনে জানান, ইবোলা ভাইরাসের ভয়ে তারা অনেক আগেই দেশে ফেরার চেষ্টা করছিল। কিন্তু লাইবেরিয়ার সঙ্গে বিমান যোগাযোগ বন্ধ থাকায় তারা দেশে ফিরতে পারেননি। পরে গত ৪ অক্টোবর লাইবেরিয়া থেকে বিমানে মরক্কো যান। সেখান থেকে আলজেরিয়া হয়ে দোহায় যান। দোহা থেকে কাতার কিউ-৬৩৪ নম্বর বিমানে ৯ অক্টোবর সকালে তারা ঢাকা হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছেন। একই বিমানে লাইবেরিয়া থেকে অন্য এলাকার আরো ২ যাত্রী এসেছেন। কিন্তু কোনো বিমানবন্দরে তাদের ডাক্তারি পরীক্ষা করা হয়নি। রুহুল আমিন দাবি করেন তারা ইবোলা ভাইরাসমুক্ত। লাইবেরিয়ার বিভিন্ন স্থানে আরো ১৬০ প্রবাসী কর্মরত রয়েছেন। সম্প্রতি আফ্রিকার লাইবেরিয়াসহ বেশ কয়েকটি দেশে ইবোলা ভাইরাস দেখা দেয়। প্রাণঘাতি এ রোগে গত ২ মাসে ২ সহস্রাধিক লোক মারা গেলে সেখানে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। লাইবেরিয়াতেই প্রায় ৮০০ লোক মারা গেছেন। রোগটি মহামারি আকার ধারণ করায় দেশটির সরকার গত আগস্ট মাসে দেশে সতর্ক অবস্থা জারি করে এবং ওই দেশের সঙ্গে সারা বিশ্বের বিমান যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। যে কারণে অনেক বাংলাদেশিসহ বিভিন্ন দেশের শ্রমিকরা বিপাকে পড়েছেন। আগস্ট মাসের শেষ দিক থেকে মরক্কো হয়ে লাইবেরিয়া বিমান যাতায়াত করায় কিছু প্রবাসী দেশে ফিরতে শুরু করেছেন। তবে লাইবেরিয়া থাকা ১৬০ জনের মত প্রবাসী এবং জাতিসংঘ মিশনে থাকা ১ হাজারের বেশি বাংলাদেশিসহ বাইরের কোনো দেশের কেউ ইবোলা আক্রান্ত হননি দাবি করেন কালকিনির ফাসিয়াতলা গ্রামের মাহবুব সরদার ও লাইবেরিয়ায় থাকা তার বন্ধু সেলিম হোসেন। এ ব্যাপারে মাদারীপুরের সিভিল সার্জন ডা. বাসুদেব কুমার দাস জানান, আমরা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখেছি, লাইবেরিয়া থেকে যে ৪ জন কালকিনিতে ফিরেছেন তারা ইবোলা ভাইরাসমুক্ত। আতঙ্কের কিছু নেই। আমরা আরো ২১ দিন এদের পর্যবেক্ষণে রেখে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করবো। এ নিয়ে আতঙ্ক ছাড়ানের মতো কিছু নেই। তিনি আরো জানান, ইবোলায় আক্রান্ত ব্যক্তির হঠাৎ তীব্র জ্বর হয়, খুবই ক্লান্তবোধ করেন, শরীর ব্যথা করে, মাথাধরা থাকে এবং ক্ষুধা থাকে না। কিন্তু এইসব ব্যক্তিদের এসব উপসর্গ নেই। তিনি বলেন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনা ও আন্তর্জাতিক নীতিমালা মেনেই স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মীরা বিদেশ ফেরত ব্যক্তিদের ২১ দিন পর্যন্ত পর্যবেক্ষণে রাখবে।

শেয়ার করুন

0 comments:

পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়