Monday, June 30

জমি বিক্রির টাকায় আমজাদের জার্মানির পতাকা

শফিকুল ইসলাম শফিক, মাগুরা : বিশ্বকাপ ফুটবল উন্মাদনায় পিছিয়ে নেই বিশ্বসেরা ক্রিকেটার সাকিব আল হাসানের জন্মস্থান মাগুরা। ব্রাজিল সমর্থকরা যেমন বিশাল আকৃতির হাতি নিয়ে শহরে র‌্যালি বের করেছে। তেমনি আর্জেন্টিনা সমর্থকরাও বাদ্যযন্ত্র নিয়ে মিছিল করেছে। সব কিছু ছাপিয়ে গেছে জার্মান সমর্থক কৃষক আমজাদ হোসেনের ৩ কিলোমিটার লম্বা জার্মানির পতাকা।
পতাকা দেখতে আমজাদের বাড়িতে প্রতিদিন ভিড় করছে নানা বয়সী ফুটবল প্রেমীরা। ধানী জমি বিক্রি করে আড়াই লাখ টাকা দিয়ে ৩ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের বিশাল এক জার্মান পতাকা তৈরি করে রীতিমতো আলোড়ন সৃষ্টি করেছেন কৃষক আমজাদ হোসেন। পাগল এই সমর্থকের বাড়ি মাগুরা পৌর এলাকার ৩নং ওয়ার্ডের ঘোড়ামারা গ্রামে। ৫৯ বছর বয়সী আমজাদ হোসেনের ধ্যান জ্ঞান শুধু জার্মান ফুটবল দলকে নিয়ে। ব্রাজিল আর্জেন্টিনার সমর্থক বেশি হলেও জার্মানের খেলার দিন নিজ খরচে গরু জবাই দিয়ে নৈশ ভোজের মাধ্যমে বলতে গেলে এলাকার অনেককে জার্মান সমর্থক বানিয়ে ফেলেছেন তিনি।
ফুটবল পাগল আমজাদ কিভাবে জার্মানির সমর্থক বনে গেছেন সে ব্যাপারে জানিয়েছেন দ্য রিপোর্টকে। তিনি বলেছেন, ২০০৫ সালে তার পুরুষাঙ্গে পাথর ধরা পড়লে বহু ডাক্তারের ওষুধে কাজ না হওয়ায় সে নিশ্চিত মৃত্যুর পথে ছিলেন। অবশেষে মাগুরা নতুন বাজার এলাকার কবিরাজ মৃত মনোরঞ্জন বসু জার্মানির তৈরি হোমিও ওষুধ দিয়ে তাকে সেই কঠিন রোগ থেকে সম্পূর্ণ সুস্থ করে তোলেন। এর পর থেকেই জার্মানির সমর্থক।
২০০৬ সালে বিশ্বকাপ ফুটবলে জার্মানি দলের সমর্থনে ২৮০ গজের পতাকা তৈরি করেছিলেন আমজাদ। ২০১০ সালের বিশ্বকাপে সে পতাকা বাড়িয়ে ২১২০ গজে রূপান্তর করেন। এ বছর ২০১৪ বিশ্বকাপ ফুটবলে ৩৫৫০ গজ কাপড় দিয়ে ৩ কিলোমিটার লম্বা জার্মান পতাকা তৈরি করেছেন। এ জন্য তার খরচ হয়েছে আড়াই লাখ টাকা। ৫০ শতাংশ ধানী জমি বিক্রি করে এই অর্থ সংগ্রহ করেছেন তিনি।
ছোট বেলা থেকে আমজাদ হোসেন ভাল ফুটবল খেলায় জেলার বিভিন্ন মাঠে নানা দলের হয়ে হায়ারে খেলতেন। বয়সের ভারে নিজে ফুটবল খেলতে না পারলেও অল্প বয়সী ছেলেদের ৪টি ফুটবল কিনে দিয়ে তাদের সঙ্গে অধিকাংশ সময় পার করেন। বাড়িতে বিদ্যুৎ না থাকায় সৌর বিদুৎতের মাধ্যমে ১৭ ইঞ্চি সাদাকালো টেলিভিশনে খেলা দেখেন তিনি। শুধু জার্মান দলের খেলা দেখতে শহর থেকে ১০ হাজার টাকা খরচ করে ডিশ লাইন নিয়েছেন তিনি।
আমজাদের প্রত্যাশা তার দল এবারের বিশ্বকাপ জিতবে। প্রিয় খেলোয়াড় মুলার, ওজিল, ফিলিপ লাম, ক্লোসা। গ্রামের ইলাহী মোল্ল্যা, তোতা মিয়া ও আনছার আলী তার পতাকা প্রদর্শনে সহযোগিতা দিয়ে আসছেন। জার্মান দল সেমিফাইনালে ওঠলে শহরে কয়েক হাজার লোক সমাগম ঘটিয়ে পতাকা প্রদর্শন করবেন বলে প্রশাসনের কর্মকর্তাদের জানিয়েছেন তিনি।
মাগুরা জেলা ক্রীড়া সংস্থার একাধিকবার নির্বাচিত সেক্রেটরি হাজী মকবুল হোসেন বলেছেন, কৃষক আমজাদ হোসেনের জার্মান পতাকা তৈরিই ফুটবলের ব্যাপক জনপ্রিয়তা প্রমাণ করে। ৩ কিলোমিটার লম্বা পতাকা গিনিজ বুকে স্থান পেতে পারে।
- See more at: http://www.thereport24.com/article/43341/index.html#sthash.DsB3j1Wf.dpuf

শেয়ার করুন

0 comments:

পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়