Tuesday, November 5

টাঙ্গুয়া হাওর

ফেইস-বাংলাদেশ ট্রাভেল গ্রুপের উদ্যোগে এবারের ট্রিপ ছিল ১৮-১৯ অক্টোবর টাঙ্গুয়া হাওরে। একটা অজানা আতঙ্কে যাত্রা করি। আতঙ্ক এই কারণে বলছি, শরৎকাল শেষ হেমন্ত শুরু। যদি কুয়াশা নামে আর হাওরের পানি ভাটির দিকে টান মারে তাহলে নির্দিষ্ট গন্তব্যে লঞ্চযাত্রা ব্যাহত হবে এবং ফটোগ্রাফি ভালো হবে না। যা হোক, সাত বন্ধু মিলে পৌঁছে যাই তাহিরপুর। সাংবাদিক বাবলু ভাইয়ের মাধ্যমে রেস্টহাউস, লঞ্চ সব আগে থেকেই ঠিকঠাক ছিল। সুনামগঞ্জ থেকে যেতে রাস্তায় বাঘমারা এলাকায় কয়েক কিলোমিটারব্যাপী লাল শাপলা ফুলের অরণ্য দেখে মুগ্ধ হই। বেশি মুগ্ধ রেজোয়ান ভাই। তিনি বলেন, ট্যুর সফল হয়ে গেছে আর লাগবে না। তিনি অনেক ছবি তোলেন। কিন্তু তার জন্য সামনে অপেক্ষা করছে আরও অনেক বিস্ময়। তাহিরপুর গিয়ে রেস্ট হাউসে ফ্রেশ হয়ে সকালের নাশতা সারি। পরে লঞ্চযাত্রা। লঞ্চটি একটি খাল বাঁক নিয়েই হাওরে পা রাখে। এখান থেকেই শুরু চমকের পর চমক। দূরে মেঘালয় রেঞ্জ। সারি সারি আকাশছোঁয়া সবুজ পাহাড়। ওপরে নীলাকাশ। নিচে থই থই জলরাশি, স্বচ্ছ আর নীল। মিষ্টি বাতাস গায়ে মেখে আমরা চলতে থাকি। হাওরের এক জায়গায় হিজল বনে নেমে চলে জল উল্লাস। সাঁতার কাটার ধুম। তারপর সোজা টেকেরঘাট। এখানে পৌঁছার একটু আগে দেখি বিস্ময়কর দৃশ্য, যা আগে কখনও দেখিনিÑ ছোট একটা খাল এসে মিলেছে হাওরের জলে। সে কী নীল তার জল। সূর্যের সোনালি আলোয় যেন চকচক করছে। আর তার নিচে দেখা যাচ্ছে বিচিত্র ধরনের নৃত্যমগ্ন শৈবাল। পাগল করা মোহমুগ্ধ দৃশ্য। এখান থেকে উজানে উঠি। হেঁটে যাই টেকেরঘাট। চুনাপাথরের পরিত্যক্ত খনির কাছে। আগে পাহাড় খুঁড়ে চুনাপাথর তোলা হতো। এখানে একটা বিশাল পুকুরের মতো হয়েছে। নীল তার জল। একটি বিরাট বরই গাছের নিচে আমরা একটু জিরিয়ে নিলাম। জুয়েল ভাই গেলেন বটছড়া বাজারে খাবার আনতে। তিনি খাবার নিয়ে এলে লঞ্চ ছাড়ল বারেক টিলার উদ্দেশে। সারা বিকাল হাওরে ঘুরতে ঘুরতে বাউলাই নদী হয়ে রাত ৮টায় পৌঁছলাম বারেক টিলায়। এখানে বেশিক্ষণ থাকলাম না। চা খেয়েই ফিরতি পথ ধরলাম তাহিরপুরে। সেই রাতে আকাশ ভেঙে জোছনা নেমেছিল। আমরা গান গাইতে গাইতে, গল্প করতে করতে ফিরি আমাদের ডেরায়।


রেস্ট হাউসে রাত কাটিয়ে সকালের নাশতা সেরে আবার লঞ্চে উঠি। যাব টাঙ্গুয়ার বুক চিরে মহিষখোলা। একদম হাওরের পশ্চিম প্রান্তে। এদিনও ছিল আকাশরঙিন দিন। মিষ্টি বাতাস। আহা কী আনন্দ আকাশে-বাতাসে। প্রথমে যাই উত্তর  শ্রীপুর। শ্রীপুর চমৎকার একটি জায়গা, আছে একটি ছোট্ট বাজার, আমরা বাজারে নামি। সেখানে একটি সাঁকো আছে। আমরা সাঁকোর এইপার থেকে ওইপারে যাই। ওইপার থেকে এইপারে ফিরি। তারপর চা পান শেষে আবার লঞ্চে উঠি। এবার গন্তব্য মহিষখোলার দিকে। হাওর দেখতে দেখতে আমরা পৌঁছাই মহিষখোলায়। বাজারে পুরনো একটি দোকানে আমরা মিষ্টি, সিঙ্গাড়া, চা খেয়ে ফিরতি পথ ধরি। হাওরের বড়দলপাড়ার পানিতে ঝাঁপাঝাঁপি করি। একদল জলমগ্ন বালক-বালিকার সঙ্গে পরিচিত হই। তাদের চকোলেট শনপাপড়ি দিই। তারপর তাদের একজনের কাছ থেকে গান শুনি, জলের দেশের গান। আর পানিতেই নাচতে থাকি। সন্ধ্যায় ফিরি তাহিরপুর। সুকেশ দা’র গ্রামীণ হোটেলে চমৎকার খাবার খেয়ে মটোরসাইকেলে চেপে বসি। গন্তব্য সুনামগঞ্জ। ট্রলারের মাঝি হিসেবে মহিবুল ভাই ও মাফজল চমৎকার মানুষ। ট্যুরকে আরামদায়ক ও সহজ করে দেয়ার জন্য বাবলু ভাইর প্রতি বিশেষ কৃতজ্ঞতা। এবারের ট্যুরসঙ্গী ছিলেনÑ রেজোয়ান, এলিজা, তারেক, পরী, জুয়েল, নিজাম ও শাহীন। ট্যুর সফলভাবে শেষ হওয়ায় পরম করুণাময় মহান আল্লাহপাকের কাছে অশেষ কৃতজ্ঞতা।

প্রয়োজনীয় তথ্য : ঢাকার সায়েদাবাদ থেকে সুনামগঞ্জের বাস ছাড়ে সকালে ও রাতে। ভাড়া ৫৫০ টাকা। সুনামগঞ্জ থেকে সুরমা নদীর বইটাখালী ঘাট পার হয়ে পাওয়া যাবে মোটরসাইকেল। প্রতি মোটরসাইকেলের ভাড়া ২০০ টাকা। থাকার তেমন ভালো জায়গা নেই। হাওরে বেড়ানোর জন্য ভাড়ায় লঞ্চ পাওয়া যাবে। দু’দিনের লঞ্চ ভাড়া দুই থেকে পাঁচ হাজার টাকা। আর খাওয়া-দাওয়া করা যাবে স্থানীয় বাজারে।

 লেখা : শাহীন আহমেদ   

ছবি : রেজওয়ান নোবেল 

শেয়ার করুন

0 comments:

পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়