Tuesday, June 11

নেত্রকোনার বেখৈরহাটির ‘ডোল’ কারিগরদের দুর্দিন

নেত্রকোনা: কৃষিজীবী গ্রামীণ পরিবারের একটি অপরিহার্য উপকরণ ‘ডোল’। ধান উৎপাদনের পর তা ডোলের সাহায্যে গোলায় সংরক্ষণ করা হয়। এজন্য প্রত্যেক কৃষক পরিবারেই ডোলের প্রয়োজন পড়ে। কুটির শিল্পীরা বিশেষ দক্ষতার সঙ্গে বাঁশ-বেত দিয়ে এসব ডোল তৈরি করেন। কিন্তু প্লাস্টিক পণ্যের চাহিদা বৃদ্ধিসহ বাঁশ-বেতের সঙ্কট ও দুর্মূল্যের কারণে ডোল শিল্পের সঙ্গে জড়িতদের এখন দুর্দিন চলছে। প্রতিযোগিতার বাজারে টিকতে পারছেন না তারা। বাধ্য হচ্ছেন পেশা ছাড়তে।
নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলার দলপা ইউনিয়নের বেখৈরহাটি এলাকাটি এক সময় ডোল শিল্পের জন্য প্রসিদ্ধ ছিল। ডোলের বাজার হিসাবে সুনাম ছিল বেখৈরহাটি বাজারের। ওই এলাকার দৈলা, ভাদেড়া, কড়েহা, হোসেন নগর, বীর আহাম্মদপুর, বাহাগুন্দ এবং সহনাটি গ্রামের তিন শতাধিক নারী-পুরুষ ডোল শিল্পের সঙ্গে জড়িত ছিল। বর্তমানে এদের সংখ্যা ১শ’র বেশী নয়। 
দৈলা গ্রামের রেজিয়া খাতুন, লাল মিয়া ও ভাদেড়া গ্রামের ইদ্রিস মিয়াসহ কয়েক জন কারিগরের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ডোল তৈরি করা হয় মড়াল বাঁশ দিয়ে। প্রথমে আস্ত বাঁশ সাইজ মতো কেটে টুকরো করা হয়। পরে টুকরো বাঁশ থেকে বেত তোলার পর একটি একটি করে বুনে তৈরি করা হয় ডোল। ধানের ওজনের চাপে ডোল যাতে ভেঙ্গে না যায়Ñ সেজন্য চারপাশ চতুর্ভূজ আকৃতির ঘন ঘন বাঁশের ফ্রেম দিয়ে বেঁধে দেয়া হয়। ভাল বাঁশের তৈরি ডোল দশ বছরেও নষ্ট হয় না। একেকটি ডোলের ধারণ ক্ষমতা থাকে কমপক্ষে দশ থেকে সর্বোচ্চ ৫০ মণ পর্যন্ত। এক শ্রেণীর পাইকার বেখৈরহাটি বাজার থেকে এসব ডোল কিনে নিয়ে তা নেত্রকোনা, ময়মনসিংহ ও কিশোরগঞ্জের বিভিন্ন বাজারে বিক্রি করেন। আকারভেদে একটি ডোলের দাম পড়ে ৫শ থেকে তিন হাজার টাকা পর্যন্ত।
কিন্তু নানা কারণে সে ঐতিহ্যটি আজ হারাতে যাচ্ছে। দিন দিনই কমে যাচ্ছে বাঁশের তৈরি ডোলের চাহিদা। এর বিকল্প হিসাবে ইতিমধ্যে বাজারে এসেছে প্লাস্টিক-চটের ডোল। এটি তুলনামূলক অনেক সস্তা। পরিবহনও সহজ। অন্যদিকে ডোল তৈরির জন্য আগে স্থানীয় বাজারেই বাঁশ পাওয়া যেতো। এখন বাঁশ কিনতে হয় অনেক দূর-দূরান্ত থেকে। এছাড়া বাঁশের দামও চড়া। অল্প পূঁিজতে এখন আর কাজটি করা যায় না। এসব কারণে পেশা ধরে রাখতে পারছেন না কারিগররা। 

স্থানীয়রা জানান, বাঁশ-বেতের এই কুটির শিল্পটি ধরে রাখতে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা প্রয়োজন। এ ক্ষেত্রে তাদের প্রয়োজনীয় পুঁিজ এবং অন্যান্য নিত্য প্রয়োজনীয় (যেমন: কুলা, ডালা, ঢাকি, ঝুড়ি, চাটাই, ধারি, ঝাড়– প্রভৃতি) ও সৌখিন পণ্য তৈরির প্রশিক্ষণ দিয়ে সহযোগিতা করা যেতে পারে। (ডিনিউজ)

শেয়ার করুন

0 comments:

পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়