ঢাকা : সিদ্ধান্ত নেয়ার ভার তাদের কাঁধে অতীতেও পড়েছিল। ইতিহাস সাক্ষী বেশির ভাগ সময়ই তাদের সিদ্ধান্ত সঠিক ছিল না। বাংলাদেশে জামায়াতে ইসলামী নেতাদের আরও একবার কঠিন পরীক্ষার সামনেই পড়তে হচ্ছে। সিদ্ধান্ত নেয়ার দায়িত্ব এসে পড়ছে তাদের ওপর। নির্বাচন কমিশনে গিয়ে আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ কেন বলেছিলেন বাংলাদেশে কোন যুদ্ধাপরাধী নেই তা এখনও রহস্যই রয়ে গেছে। তার ওই উক্তির দীর্ঘদিন পর বাংলাদেশের রাজনীতিতে ফিরে আসে যুদ্ধাপরাধ ইস্যু। আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের অঙ্গীকার করা হয়। নবম সংসদ নির্বাচনের অন্যতম টাম্পকার্ড ছিল এ ইস্যুটি- যে নির্বাচনে অংশ নিতে রাজি ছিলেন না বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। জরুরি শাসনে বিএনপি তখন রীতিমতো বিপর্যস্ত। বিশেষ আদালতের সাজার কারণে নির্বাচনে অযোগ্য হয়ে পড়েন দলটির অর্ধশতাধিক নেতা। এ কারণে ঠিক সে সময়ে নির্বাচনে যেতে চায়নি বিএনপি। কিন্তু জামায়াতের পক্ষ থেকে বারবার চাপ দেয়া হয় বেগম জিয়াকে। যে চাপের কারণে অনেকটা বাধ্য হয়েই সে নির্বাচনে অংশ নেয় দলটি। এমনকি নির্বাচনের দিন সকালেও জামায়াতের এক শীর্ষ নেতা বিএনপিকে চাপ দেয় যেন নির্বাচন বর্জনের মতো সিদ্ধান্ত নেয়া না হয়। এরপরের ইতিহাস সবার জানা। নির্বাচনে ভূমিধস জয় লাভ করে আওয়ামী লীগ। যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে একে একে গ্রেপ্তার হন জামায়াতের শীর্ষ পর্যায়ের সব নেতা। শুরুতে দলটি এ নিয়ে রাজপথে তেমন কোন প্রতিক্রিয়া না দেখালেও রায় ঘোষণার সময় থেকে রাজপথে সহিংস প্রতিরোধ তৈরি করে জামায়াত-শিবির। সরকারের পক্ষ থেকেও দেখানো হয় সর্বোচ্চ প্রতিক্রিয়া। রাজপথে নামলেই পুলিশের গুলির মুখে পড়তে হচ্ছে জামায়াত-শিবিরকে। দলটির কয়েক শ’ নেতাকর্মীকে জীবন দিতে হয়েছে এ পর্যন্ত। জেলখানাগুলো যেন এখন জামায়াতখানা। দলের হাজার হাজার নেতাকর্মী ঘরছাড়া। এ অবস্থায় যুদ্ধাপরাধের বিচার এখন এক গুরুত্বপূর্ণ পর্যায়ে উপনীত হয়েছে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল এ পর্যন্ত জামায়াতের তিন নেতার বিরুদ্ধে রায় ঘোষণা করছে। রায়ের অপেক্ষায় আছে জামায়াতের সাবেক আমীর গোলাম আযম এবং সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের মামলাটি। আপিল বিভাগে চূড়ান্ত শুনানি চলছে জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আবদুল কাদের মোল্লার। ইতিহাসে জামায়াতের ভুলের ভুরি ভুরি নজির রয়েছে। ১৯৪৭ সালে ভারত বিভক্তির বিরোধিতা করেছিল দলটি। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করা নিশ্চিতভাবেই জামায়াতের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় ভুল। মুক্তিযুদ্ধকালীন ভুলের স্বীকারোক্তি দিয়ে জাতির কাছে ক্ষমা প্রার্থনার বিষয়টি নিয়ে জামায়াতে অনেকবারই আলোচনা হয়েছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এ ব্যাপারে আর সিদ্ধান্ত হয়নি। দলটি এখন পর্যন্ত জাতির কাছে কোন ধরনের ক্ষমা প্রার্থনাও করেনি। যদিও জামায়াতেরই কেউ কেউ মনে করেন যুদ্ধাপরাধের ইস্যুটি শেষ হয়ে গেলে তা দলটির জন্য এক ধরনের সুবিধাও বয়ে আনতে পারে। কারণ, দলের বেশির ভাগ সদস্যেরই জন্ম হয়েছে মুক্তিযুদ্ধের পরে। যুদ্ধাপরাধের বিচার এখন এক যুগসন্ধিক্ষণে উপনীত হয়েছে। আর পর্যবেক্ষকরা খেয়াল রাখছেন, দশম সংসদ নির্বাচনের দিকে- সংবিধান অনুযায়ী ২০১৪ সালের জানুয়ারির মধ্যে যে নির্বাচন হওয়া কথা। তবে বিরোধী দলগুলোর পক্ষ থেকে সাফ জানিয়ে দেয়া হয়েছে, তত্ত্বাবধায়ক সরকার না হলে তারা নির্বাচনে অংশ নেবেন না। তবে শেষ পর্যন্ত কি হয় তা-ই এখন দেখার বিষয়। তত্ত্বাবধায়ক সরকার না হলে বিএনপি কি নির্বাচনে যাবে? বিএনপি নির্বাচনে না গেলে সে নির্বাচনে জামায়াত কি অংশ নেবে? এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়ার ভার জামায়াত নেতাদের কাঁধে। দেখা যাক সঠিক না ভুল সিদ্ধান্ত নেয় জামায়াত নেতৃত্ব। সূত্র: মানবজমিন
খবর বিভাগঃ
বিশেষ খবর
রাজনীতি
সর্বশেষ সংবাদ
0 comments:
পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়