Monday, May 6

কানাইঘাটের শিলপাটার কারিগর

মাহবুবুর রশিদ
আধুনিক যুগ শিল্পায়নের যুগ। শিল্পায়নের এই যুগে পাথর কেটে শিলপাটা তৈরি কালের আবর্তে হারিয়ে যাচ্ছে । একটা সময় ছিল শিলপাটা ছাড়া চুলায় হাঁড়িও উঠতনা। ব্যাপক চাহিদা ছিল শিলপাটার। প্রতিটি পরিবারের কাছে একটি পরিচিত নাম ছিল শিলপাটা। চিরায়ত গ্রামবাংলার শিলপাটা নিয়ে রয়েছে নানা মজার কাহিনী। এখনো গ্রাম-বাংলার অনেক পরিবার রয়েছে যারা শিলপাটায় বাটা মসলা ছাড়া রান্না খেতে পছন্দ করেনা। শিলপাটা দিয়ে শুধু মসলা বাটা নয় একসময় মেহেদী বাটা থেকে শুরু করে নানা ধরনের খাবারের ভর্তা বাটা ছিল ঘরের গৃহিনীদের কাছে প্রতিদিনের রুুটিন মাফিক কাজ। কিন্তু এখন বদলে গেছে যুগ পাড়া-মহল্লার প্রতিটি মুদির দোকানে হাত বাড়ালেই পাওয়া নানা জাতের প্যাকেটজাত মসলা আর মসলা ভাঙ্গার মেশিনত আছেই। বাণিজ্যিকভাবে মসলা ভাঙ্গার মেশিন চালু হওয়ায় শিলপাটায় মসলা বাটার গুরুত্ব একেবারেই কমে গেছে। তবে এখনো কিছুটা চাহিদা আছে বলে কানাইঘাট উপজেলা সদরের কানাইঘাট পূর্ব বাজারে শিলপাটা তৈরি করে চলছেন এক কারিগর। দীর্ঘ ১৯ বছর ধরে পাথরের সঙ্গে যুদ্ব করে চালিয়ে যাচ্ছেন তার জীবন-জীবিকা। তার নিত্য সঙ্গী হিসেবে রয়েছে হাতুড়ি আর ছেনি( ধারালো লৌহখন্ড)। তিনি সকলের কাছে শিলপাটার মিস্ত্রি নামে পরিচিত। নাম মাহমুদ আলী। বাড়ি কানাইঘাট পৌরসভার বায়মপুর গ্রামে, শিলপাটা কেনার সুবাধে কথা হয় ঐ কারিগরের সাথে,একটি পাথর পছন্দ করে আর্জেন্ট শিল-পাটা তৈরির ওর্ডার দিলাম, শুরু হল হাতুড়ি আর ছেনি দিয়ে পাথর কাটার খুটখাট,টুনটান শব্দ। ঠাওর না করলে মনে হবে কেউ বাদ্যযন্ত্র বাজাচ্ছে। পাথরের সাথে ছেনির ঘর্ষনের ফলে মাঝে মধ্যে আগুনের স্ফুলিঙ্গ ছড়াচ্ছিল। শিলপাটায় কারুকাজের জন্য হাতের কাছে রয়েছে নানা আকৃতির ছোট-বড় ছেনি একটু পর পর রদবদল করছেন ছেনিগুলো। এতে মনে হয় যেন কোন শিল্পি পাথরের গায়ে তুলি দিয়ে ছবি আঁকছেন। প্রায় আধঘন্টা অপেক্ষার পর তৈরি হয়ে গেল কারুকাজ করা শিলপাটা। মাহমুদ আলী জানান, প্রায় ৩৫ বছর আগে উপজেলা সদর থেকে আনুমানিক ১২ কিঃমিঃ উত্তরে লোভা পাথর কোয়ারিতে কাজ করতাম। ওই সময় বড় পাথর ভাঙতে গিয়ে চারকোনা টুকরো বের হতো। অনেকেই টুকরোগুলো কিনে নিয়ে শিল-পাটা তৈরি করতেন। দেখে দেখে লেগে যাই শিল-পাটা তৈরির কাজে। বর্তমানে আমার এখানে ২-৩ জন শ্রমিক প্রতিদিন কাজ করে,দিনে ৫-৬ টি শিল-পাটা তৈরী করতে পারে একজন শ্রমিক। একটি শিল-পাটা ১৫০ টাকা থেকে শুরু করে ৫০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়। প্রতিদিন দু-একটির বেশি বিক্রি হয়না। তবে বৈশাখ মাসে রথমেলা উপলক্ষে বিক্রি হয় বেশি। মাহমুদ আলীর কারুকাজ করা এ শিলপাটা সিলেটের জৈন্তা,গোয়াইনঘাট,কোম্পানীগঞ্জ সহ বিভিন্ন স্থানে পাইকারী বিক্রি হয়। মাহমুদ আলী আরো জানান, পাঁচ ছেলে চার মেয়েকে লেখাপড়া করিয়ে মানুষ করার জন্য কঠিন এই পেশায় পরিশ্রম করে চলেছি। তবে বর্তমানে এই পেশায় সংসার চালানো দায় হয়ে পড়েছে। তারপরও পুরনো কঠিন এই পেশাকে আঁকড়ে ধরে আছেন মাহমুদ আলী।

লেখকঃ-সম্পাদক:-কানাইঘাট নিউজ
 প্রতিষ্টাতা সভাপতি: কানাইঘাট লেখক ফোরাম
e-mail:mahbuburrashid68@yahoo.com
মোবাঃ ০১৭২৭৬৬৭৭২০








শেয়ার করুন

0 comments:

পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়