Friday, April 26

কাঁকড়া চাষ করে স্বাবলম্বী মংলার নাছিমা

মাত্র এক বছর আগেও নাছিমা বেগমের সংসারে অনেক অভাব ছিল। অভাব যেন সারাক্ষণ তাকে ঘিরে রাখতো। তার স্বামী আব্দুর রশিদ শেখ যে কয় টাকা আয় করতো সেই টাকা দিয়ে তার সংসার চলতো টানাটানি করে। কিন্তু কাঁকড়া চাষ করে তিনি সফলতা পেয়েছেন, হয়েছেন স্বাবলম্বী।

তার ব্যাবসায় এখন অনেকেই টাকা বিনিয়োগ করতে আগ্রহ দেখাচ্ছে।

নাছিমার স্বামী আব্দুর রশিদ শেখ জানান, বড় মেয়ে ময়না এখন ৩য় শ্রেণীতে লেখাপড়া করে, ১৩ মাসের ছেলে রাব্বি জন্য দুধ কিনতে পারছে। তাদের সংসার ভালোই চলছে।

হাসোজ্জ্যল মুখে নাছিমা বেগমও জানালেন, সরকারের “একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্প” এর অধীনে ২০১১ সালের জানুয়ারিতে গাববুনিয়া গ্রাম উন্নয়ন সমিতির সদস্য হিসাবে যোগ দেন। এরপর ২০১২ সালের জুন মাসে তিনি জানতে পারেন সরকার তাদের সহজ ও সামান্য সুদে ঋণ দিবে।

একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্প থেকে ২০১২ সালের জুলাই আসে নাছিমা বেগম ঋণ নেয় ১০ হাজার টাকা এবং তার এক আত্বীয়ের কাছ থেকে আরও ঋণ নেয় ১০ হাজার টাকা । মোট ২০ হাজার টাকা দিয়ে কাঁকড়া কেনার অর্ডার দেওয়া হয়। কাঁকড়ার জন্য খাদ্য হিসাবে দেওয়া হয় শামুক ও গুড়া মাছ। মাত্র ২০-২৫ দিনেই বিক্রির উপযুক্ত হয় কাঁকড়া।

তিনি আরও জানান, নিয়মিত সঞ্চয় এবং ঋণের কিস্তি পরিশোধ করছেন তিনি। ঋণের কিস্তি শোধ হলে পুনরায় আবার বেশী করে টাকা ঋণ নেবেন।

নাছিমাকে দেখে চিলা ইউনিয়নের গাববুনিয়া এলাকার অনেক সদস্যই এখন কাঁকড়া চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছে। নাছিমার ঘেরে এখন অনেকেই পুঁজি বিনিয়োগ করতে আগ্রহ দেখাচ্ছে।

উপজেলা যুব উন্নয়ন অফিসার মো. সেলিম বাংলানিউজকে জানান, মংলাসহ উপকূলীয় এলাকার কাঁকড়া অনেক সু-স্বাদু ,তাই এ এলাকার কাঁকড়ার  চাহিদাও বেশী।  অনেক দেশে কাঁকড়া রফতানি হয়ে থাকে। বিশেষ করে  থাইল্যান্ডে বেশি রফতানি হয়। এজন্য তার দফতর ২ দিনের প্রশিক্ষণ দিয়েছিল এসব সমিতিভুক্ত  কাঁকড়া চাষী সদস্যদের।          

উপজেলা পল্লী উন্নয়ন কর্মকর্তা মো. আবদুস সোবহান বাংলানিউজকে জানান, একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্প থেকে ইতোমধ্যে সম্পদ সহয়তা হিসাবে ১শ জন সদস্যকে একশটি গরু, ৪৪ জন সদস্যকে ঘর তৈরির টিন, ৯০ জন সদস্যকে শাক-সবজির বীজ, ১২০ জন সদস্যকে গাছের চারা বিতরণ করা হয়। এবং মাছ চাষ, কাঁকড়া চাষ, হাঁস-মুরগী ও গবাদী পশু পালন এবং নার্সারী খাতে ১ হাজার ১১ জন সদস্যকে প্রায়  ৮৯ লাখ টাকা ঋণ হিসেবে  বিতরণ করা  হয়েছে।

এ ব্যাপারে মংলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও পরিবেশবিদ ড. মিজানুর রহমান বাংলানিউজকে জানান, একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্পটির সদস্যদের বিভিন্ন পেশায় কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য উৎসাহিত করা হচ্ছে। তবে, তিনি পরিবেশের স্বার্থে কাঁকড়া চাষ লবন পানিতে না করে মিষ্টি পানিতে করতে চাষীদের পরামর্শ দিয়েছেন।

মংলা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ ইদ্রিস আলী বাংলানিউজকে জানান , গ্রামের অবহেলিত জনগোষ্টি যাতে অপরের ওপর নির্ভর থাকতে না হয় সেজন্য তার উপজেলাতে কাজ চলছে। নাছিমা বেগমের মতো অনেক গরীরদেরকে বাছাই করে ঋণ দেওয়া হযেছে। একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্পটি আরও সম্প্রসারিত করা গেলে অচিরেই গ্রাম ও শহরের জীবনযাত্রা সমান হয়ে যাবে। সফলতা অজর্নকারী নাসিমাসহ সবাইকে তিনি সাধুবাদ জানিয়ে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ ইদ্রিস আলী মনে করেন, ঋণের টাকা যারা কাজে লাগিয়েছে তারা সফলতা অর্জন করেছেন।

একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক ড. প্রশান্ত কুমার রায় জানান , একজন সদস্য ২শ টাকা প্রকল্পে জমা দিলে সরকারও ২শ টাকা কল্যান অনুদান দিচ্ছে। টাকা রাখা হচ্ছে ব্যাংকে। তাই ব্যাংকও এ টাকার লাভ দিচ্ছে। এসব কিছুই পাচ্ছে সদস্যরা। ঋণ নিয়ে আয় করবে এবং টাকাও সঞ্চয় হবে যা দিয়ে এক সময় সদস্যরা স্বাবলম্বী হবে এটাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ‘স্বপ্ন ’। একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্প এমন ভাবে সম্পসারিত হচ্ছে  যার ভবিষ্যত খুবই ভাল।

বাগেরহাট-৩ (মংলা-রামপাল) আসনের সংসদ সদস্য হাবিবুন নাহার বাংলানিউজকে জানান, মহাজোট  সরকার সব সময় ভাল কাজ করে আসছে। অসহায় ও গরীব মানুষের কথা চিন্তা করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা “একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্প” চালু করেছেন। গ্রামীণ জনগোষ্টি যাতে অবহেলিত না থাকে সেই লক্ষ্যে তিনিও কাজ করছেন, আগামীতেও করে যাবেন বলে জানান।

জন কল্যাণকর এ প্রকল্পটি যাতে বন্ধ  না হয় এজন্য তিনি ‘একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্প ’কে স্থায়ী করণের জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।

শেয়ার করুন

0 comments:

পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়