Saturday, April 27

‘ঘৃণায় হিজড়া হইছি’

“পুরুষের প্রতি ঘৃণায়ই হিজড়া হইছি” এমনটাই মন্তব্য করলেন আসাদ গেটের ফুটওভার ব্রিজে ভাসমান এক দেহপসারিণী সাগরিকা।

তিনি বলেন, “ছোটবেলা থেকেই নারীর প্রতি পুরুষের অত্যাচার দেখে আমার মনে এক ধরনের ঘৃণা জন্ম নেয়।“

সে কারণে সাগরিকা ২২ বছর বয়সে ২০১০ সালে ভারতে গিয়ে অপারেশন করে পুরুষ থেকে হিজড়া হন। এতে তার খরচ হয় ৫০ হাজার টাকা। দেশে ফিরে এসে জড়িয়ে পড়েন দেহ ব্যবসায়।

সাগরিকা খুবই সাধারণ পরিবারের ছেলে ছিলেন। জীবনের নানা ঘাত-প্রতিঘাতে বার বার হোঁচট খেয়েছেন তিনি। অর্থের প্রয়োজনে একসময় চলে আসেন দেহ ব্যবসায়।

রোজ রাত ১১টা থেকে ২টা পর্যন্ত আসাদগেট ফুটওভার ব্রিজে দেহ ব্যবসা করেন তিনি। খদ্দেরপ্রতি একশ থেকে ৫০০ টাকা নেন।

সাগরিকা বলেন, “যার কাছ থেকে যেমন পারি, তেমনটাই নিই। আমার নির্দিষ্ট কোনো চাহিদা নেই।”

তিনি জানান, পুলিশ সরাসরি বাধা দেয় না। তবে খদ্দেররা এলে তাদের সঙ্গে ঝামেলা করে। এ জন্য পুলিশের প্রতি নেতিবাচক ধারণা তার।

কেন এ পেশায় এসেছেন জানতে চাইলে সাগরিকা বলেন, “পুরুষের প্রতি ঘৃণা থেকে হিজড়া হয়েছি। আবার এই পুরুষের নিয়মের কারণেই আমরা এই সমাজে থাকতে পারছি না। কারণ, পুরুষরাই তো সমাজের মাথা। তারা আমাদের রাখতে চায় না। কেউ কাজ দিতে চায় না। তাই, এ পেশায় এসেছি।“

তিনি জানান, পেশা সম্পর্কে তার পরিবারের সদস্যরা কিছুই জানে না। তার পরিবারের সবাই বরিশালে থাকেন।

অশ্রু চোখে তিনি বলেন, “বাড়ির সবাই জানে, আমি গার্মেন্টেসে কাজ করি। কিন্তু আমি তো এই হানে...। কী হরমু, কিছুই তো করার নেই।”

এ চিত্র শুধু আসাদ গেটের ফুটওভার ব্রিজের নয়, ঢাকার প্রায় প্রতিটি ফুটওভার ব্রিজেই এমন ঘটনা ঘটে বলে জানান সাগরিকা। এমন অসংখ্য সাগরিকারা প্রতিনিয়ত অন্তর্দহনে দংশিত তাদের এ অবস্থার জন্য।

জানা যায়, শুধু ফুট ওভারব্রিজই নয়, মানিক মিয়া এভিনিউতে চলে আরেক কায়দায় দেহ ব্যবসায়। মানিক মিয়া এভিনিউয়ের সামনে রাত ১০টার পর থেকেই সংসদ ভবনের সামনের ফুটপাতে হাঁটাহাঁটি শুরু করেন দেহপসারীরা।

এ সময় বিভিন্ন ব্র্যান্ডের গাড়ি এসে থামে মানিকমিয়ার ফুটপাতের পাশ ঘেঁষে। তবে এ ক্ষেত্রে খদ্দেররা কেউই গাড়ি থেকে নামেন না। নেমে আসেন তাদের দালাল বা ড্রাইভাররা। চলে দর কষাকষি। দাম মিটে গেলে গাড়িতে উঠে চলে যান নির্দিষ্ট গন্তব্যে।

ফুটওভার ব্রিজের ভাসমান দেহপসারীদের চেয়ে যেন উল্টো পথেই হাঁটেন মানিকমিয়া এভিনিউয়ের নিশিকন্যারা। এদের অনেকেই আবার বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া শিক্ষিত শ্রেণির মেয়ে বলে জানান সংসদ ভবনের সামনের ফুটপাতের দেহপসারিণী জলি (ছদ্মনাম)।

তিনি বলেন, “এখানে রাতে নামিদামি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীরা আহে। তাদের লগে আগে থেইক্যাই খদ্দেরের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ হয়। এইখান থেইকা গাড়িতে ওইঠ্যা চইলা যায়। তবে দোষ শুধু আমাগো। সবাই কেবল আমাগোই বেশ্যা কয়!”

শেয়ার করুন

0 comments:

পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়