দেলওয়ার হোসেন সেলিম/মাহবুবুর রশিদ:
স্বাধীনতার ৩৯ বছর পরও সিলেটের কানাইঘাট উপজেলার ১৫০টি গ্রামে এখন পর্যন্ত বিদ্যুতের আলো পৌঁছেনি। ফলে আধুনিক তথ্য প্রযুক্তির যুগে কানাইঘাটের লক্ষাধিক মানুষ এখনো বিদ্যুতের আলো দেখেনি। ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার প্রধান উপাদান বিদ্যুৎ। বিদ্যুতের অভাবে এখানকার তরুন যুবসমাজ তথ্য প্রযুক্তি ও টেলিভিশন সহ বিভিন্ন বিনোদনমূল ব্যবস্থার সুযোগ ও মোবাইল সেট চার্জ করা যাচ্ছে না। ছাত্রছাত্রীরা পড়া লেখা করতে হিমশিম পোহাচ্ছে। কম্পিউটার, ফ্রিজ, ফ্যান চালানোর সুযোগ বঞ্চিত এখানকার আবাল বৃদ্ধ বণিতার কষ্ট দুর্ভোগ বেড়েই চলেছে। দারুণ যন্ত্রণা ও মানসিক দুশ্চিন্তা নিয়ে যেন এক অন্ধকারাচ্ছন্ন পরিবেশে কাটছে দিন, যাচ্ছে রাত। মূলতঃ কৃষি নির্ভর অর্থনীতি কানাইঘাটের অধিকাংশ অধিবাসীর। কিন্তু বিদ্যৎ সুবিধা না থাকায় ছোট বড় কলকারখানা, গবাদি পশুর খামার, পোল্ট্রি ফার্ম, ফিশারী স্থাপনের উজ্জ্বল সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও এসব স্থাপন করা যাচ্ছে না। কানাইঘাট উপজেলায় বিদ্যুতায়নের দায়িত্ব পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির। এলাকাভিত্তিক পল্লী বিদ্যুতায়ন কার্যক্রমের অধীনে ১৯৯৭ ইং সালে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২ গঠনের মাধ্যমে বিদ্যুৎ বিতরণ কার্যক্রম শুরু করে। ২০০৭ সালের প্রথম দিকে কানাইঘাট জোনাল অফিসের কার্যক্রম শুরু হয়। পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি কানাইঘাট জোনাল অফিসের আওতাধীন এ উপজেলার ৯টি ইউনিয়নে ৩১০টি গ্রাম রয়েছে। এর মধ্যে চলতি বছরের জুন মাস পর্যন্ত ১৬০টি গ্রামে বিদ্যুতায়তি হয়েছে। অবশিষ্ট ১৫০টি গ্রামে এখনো বিদ্যুতায়ন করা সম্ভব হয়নি। সিলেট মহানগরীর উত্তর-পূর্ব সীমান্তবর্তী উপজেলা কানাইঘাট। এখানকার আয়তন ৪১,৩১৮ বর্গ কিলোমিটার। কানাইঘাট উপজেলার ৯টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভায় মোট পরিবার সংখ্যা ৪১,০০০টি। বৈদ্যুতিক উপকেন্দ্র আছে ১টি (৫ এমভিএ)। পিডিবির বটেশ্বরস্থ সিলেট ৩৩ কেভি বিদ্যুৎ উপকেন্দ্রটি হচ্ছে এখানকার বিদ্যুতের উৎস। স্থানীয় গাছবাড়ী বাজার ও সড়কের বাজারে রয়েছে ২টি অভিযোগ কেন্দ্র। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, চলতি বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত কানাইঘাটে ৫২৯.৩৫ কিলোমিটার বৈদ্যুতিক লাইন নির্মিত হয়েছে। পিডিবি?র অধিগ্রহণকৃত লাইন ৬৯ কিলোমিটার। অবশ্য পিডিবি অধিগ্রহণকৃত ২০ কিলোমিটার লাইন এখনো নবায়ন হয়নি। মোট বিদ্যুতায়িত লাইব ৫৪৯.২১৭ কিলোমিটার। কানাইঘাটে এ পর্যন্ত বিদ্যুৎ সংযোগ সুবিধা সৃষ্টি হয়েছে ২০,১৮০ জনের। সংযোগ প্রাপ্ত গ্রহক সংখ্যা হচ্ছে ১৫,৭২০ জন। এর মধ্যে আবাসিক ১২,৫৭৬ জন, বাণিজ্যিক ২,১৮১ জন, শিল্প ১৯৭ জন এবং সিআইও অন্যান্য ৩৭৩ জন। অভিজ্ঞ মহলের মতে, যেহেতু পল্লী বিদ্যুতায়ন কার্যক্রমের মুখ্য উদ্দেশ্য হচ্ছে আধুনিক উৎপাদন পদ্ধতির সুযোগ বঞ্চিত পল্লী এলাকার কৃষি এবং কৃষি ভিত্তিক কুটির ও ক্ষুদ্র শিল্পের বিদ্যুৎ সরবরাহের মাধ্যমে সেখানকার আর্থ সামাজিক কর্মকাণ্ডে প্রাণ চাঞ্চল্য সৃষ্টি করে দারিদ্র বিমোচনে সহায়তা প্রদান করা। সেহেতু বিপুল সংখ্যক জনগোষ্ঠীর প্রাণের দাবী, ন্যায্য দাবী কানাইঘাট উপজেলার অবশিষ্ট গ্রামগুলোতে বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়া। এদিকে, কানাইঘাটের জনবহুল ও ঐতিহ্যবাহী ঢাকনাইল এলাকার গোয়ালজুর গ্রাম সহ ৮টি গ্রামের প্রায় ২০ হাজার পরিবার বিদ্যুতের আলো থেকে বঞ্চিত রয়েছে। উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় স্বাধীনতার পর কম-বেশি উন্নয়নমুলক কাজ হলেও গোয়ালজুর গ্রাম সহ ৮টি গ্রাম রয়েগেছে অবহেলিত। এ গ্রামগুলোর বাসিন্দারা সারা বছর দৃশ্যত দুর্ভোগের মধ্যেই বসবাস করে। শুধুমাত্র ভোটের সময় কদর বাড়ে এই এলাকাবাসীর এরপর আর জনপ্রতিনিধরা তাদের আশা-প্রত্যাশা পূরণে এগিয়ে আসেননি। এজন্যে হতভাগা এসব মানুষগুলোর জীবন চিত্র আজও বদলায়নি। বিপুল সংখ্যক জনগোষ্ঠির উন্নয়নের প্রধান অন্তরাই হচ্ছে বিদ্যুৎ। শুধুমাত্র বিদ্যুতের অভাবেই এখানকার জনসাধারণ মানবেতর জীবন-যাপন করছে। সম্ভাবনাময় এলাকার জনগণের ভাগ্যের পরিবর্তন হচ্ছে না। স্বাধীনার ৩৯ বছর পেরিয়ে গেলেও বিদ্যুতের সংযোগ লাগেনি অত্র এলাকায়। অবশ্যই কয়েক বছর পূর্বে এখানকার পার্শ্ববর্তী গ্রামসমূহে বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়া হলেও বাকী রয়েছে ৮টি গ্রাম। গোয়ালজুর গ্রামের অধিবাসীরা জানান, তারা আধুনিক যুগের মানুষের জীবনমান উন্নয়নের মূল সহায়ক বিদ্যুৎ সুবিধা থেকে রহস্যজনকভাবে বঞ্চিত রয়েছেন। অনেকেই গোয়ালজুর গ্রামটিতে বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়ার আশ্বাস প্রদান করলেও কাজের কাজ কিছুই হয়নি। কয়েক বছর আগে এ এলাকায় পল্লী বিদ্যুতায়ন কার্যক্রম শুরু হয়েছে। কিন্তু গোয়ালজুর গ্রামের পাশ দিয়ে অন্যান্য গ্রামে বিদ্যুৎ লাইন যাওয়া সত্ত্বেও আজ অবধি এ গ্রামে বিদ্যুতের ছোঁয়া লাগেনি। এমনকি বিদ্যুৎ বঞ্চিত গোয়ালজুর গ্রামসহ অন্যান্য অন্ধকারাচ্ছন্ন গ্রামসমূহের বিদ্যুৎ সংযোগের কাজ শুরু হচ্ছে না এখনো। এ ব্যাপারে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি কানাইঘাট জোনাল অফিস সূত্রে জানা যায়, পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি মাষ্টার প্ল্যান অনুযায়ী লাইন নির্মাণ কাজ করে। বর্তমানে কানাইঘাটে বিদ্যুৎ সংযোগ গ্রহণের অনেক বেশি চাহিদা থাকা সত্ত্বেও কোন বরাদ্দ পাওয়া যাচ্ছে না। তাই নতুন সংযোগ দেয়া স্থগিত রয়েছে। এছাড়া নতুন গ্রাহকদের মধ্যে কেউ নিজ খরচে বিদ্যুৎ নিতে চাইলে তাও বন্ধ করা হয়েছে। কানাইঘাট সহ সিলেট অঞ্চলে দীর্ঘ দিন ধরে বিদ্যুতের নতুন সংযোগ বন্ধ রয়েছে। এক্ষেত্রে যে সকল বাঁধা রয়েছে, সেটা অতিক্রম করে নতুন সংযোগ স্থাপনের জন্যে বর্তমান সরকারের সংশ্লিষ্টদের প্রতি জোর দাবী জানিয়ে আসছেন এ অঞ্চলের জনসাধারণ।
0 comments:
পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়