Thursday, June 3

সুরমা এখন মৃতপ্রায় নদী চর জেগে হারিয়েছে নাব্য

এটিএমহায়দার,সিলেট

নদীর তলদেশ ভরাট হয়ে যাওয়ায় বর্ষাকাল ছাড়া সুরমা নদীতে পানি তেমন থাকে না। শুষ্ক মৌসুমে স্থানে স্থানে জেগে ওঠে চর । তখন চরে সবজি চাষ, হাঁস পালন, খেলার মাঠসহ নানা অস্থায়ী স্থাপনা গড়ে ওঠে। গত এক দশক থেকে সুরমা নদী খননের দাবি জানানো হলেও আপাতত তার কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। ‘সুরমা বাঁচাও’ পরিবেশবাদীদের এই স্লোগান এখন তেমন সোচ্চার নয়। প্রাচীন জনপদ সিলেটের গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলো সুরমা প্রবাহিত এলাকায় অবস্থিত। সিলেট নগরী ছাড়াও কানাইঘাট উপজেলা সদর, গোলাপগঞ্জ, ছাতক, দোয়ারাবাজার ও সুনামগঞ্জ জেলা সদর সুরমার তীরে অবস্থিত। ফলে সুরমার অর্থনৈতিক গুরুত্ব বর্তমানেও কোনো অংশে কমে যায়নি।সিলেট নগরী ও আশপাশের পানি সুরমা দিয়ে নিষ্কাশিত হয়ে থাকে। নগরীতে এখন বর্ষায় হরহামেশা জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। এর অনেক কারণের মধ্যে সুরমা ভরাট হয়ে যাওয়া একটি কারণ হিসেবে বিশেষজ্ঞরা ধারণা করছেন। এখন উজানে সামান্য বৃষ্টি হলেই সুরমা পানিতে ভরে যায়। পানি ধারণ ক্ষমতা কমে যাওয়ায় এ সময় নদীভাঙন তীব্র হয়। দেখা দেয় বন্যা। নালা-নর্দমা উপচে পানি ওঠে নগরীর নিম্নাঞ্চলে স্থায়ী জলাবদ্ধতার সৃষ্টি করে। অতীতে পাহাড়ি ছড়াগুলো থেকে পানি দ্রুত নদীতে নেমে পড়ত। এখন নদী স্রোতহারা হওয়ায় পানি নামে ধীরে ধীরে। ভারতের মণিপুর থেকে বয়ে আসা বরাক নদী বদরপুরের ভাঙার এবং জকিগঞ্জের আমলশীদে দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে সুরমা ও কুশিয়ারা এই দুই নাম ধারণ করেছে। এক ভাগ কুশিয়ারা করিমগঞ্জ-জকিগঞ্জ সীমান্ত বরাবর এসে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ঢুকে বিয়ানীবাজার-গোলাপগঞ্জ-ফেঞ্চুগঞ্জ-বালাগঞ্জ ছুঁয়ে মার্কুলী হয়ে মেঘনা নাম ধারণ করে বয়ে চলেছে। অপর শাখা সুরমা ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত বরাবর বাংলাদেশের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে কানাইঘাট-গোলাপগঞ্জ, বিয়ানীবাজার-গোলাপগঞ্জ, সিলেট সদর-ছাতক-দোয়ারাবাজার-সুনামগঞ্জ হয়ে মেঘনা জলধারায় গিয়ে পড়েছে। শুরুতে সুরমা কানাইঘাটের কাছে পাহাড়ি নদী লোভা ছড়ার পানি ধারণ করে ভাটিতে বয়ে নিয়ে আসে। এরপর ছাতকের কাছে জৈন্তা পাহাড়ের পানিবাহিত চেঙ্গের খালের পানি ধারণ করে। তারপর একে একে সুনামগঞ্জের ভাটি পর্যন্ত একাধিক পাহাড়ি নদীর পানি এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। ফলে সিলেট সদর পর্যন্ত সুরমায় বেশি মাত্রায় পানি শূন্যতা বিরাজ করলেও ভাটিতে যাওয়ার পথে কিছু পাহাড়ি নদীর পানির ছোঁয়ায় সুরমা প্রাণ নিয়ে টিকে আছে। কিন্তু জকিগঞ্জ থেকে ছাতকের আগ পর্যন্ত সুরমার পানি প্রবাহ কমে যাওয়ার একাধিক কারণের মধ্যে অন্যতম একটি কারণ হচ্ছে আমলশীদে এর উত্সমুখ ভরাট ও আকৃতি পরিবর্তন। বাস্তবে দেখা গেছে গত তিন দশক আমলশীদে বাংলাদেশ প্রান্তে ব্যাপক নদীভাঙনের বিপরীতে ভারত প্রান্তে চর জেগে ওঠে। এখানে বরাক ইংরেজি উল্টা ওয়াই আকৃতি থেকে সুরমা ও কুশিয়ারার সমান্তরাল আকৃতি ধারণ করার কথা, কিন্তু বাস্তবে দেখা যায় সুরমা কিছুটা ইংরেজি ইউ আকৃতি এবং কুশিয়ারা আই আকৃতি ধারণ করেছে। ভারত প্রান্তে উত্সমুখে চর সৃষ্টির কারণে বরাকের পানি সুরমায় আসার পরিমাণ গত দুই দশকে কমতে থাকে। ভরা বর্ষায় সুরমায় পানি প্রবাহ বৃদ্ধি পেলেও হেমন্তে সুরমা শুকিয়ে যেতে থাকে। বরাকের পানি সুরমার দ্বিগুণেরও বেশি কুশিয়ারা ধারণ করে থাকে। সুরমার উত্সমুখে যে বিরাট চর পড়েছে তার জন্য গত এক-দেড় যুগ থেকে স্থায়ীভাবে হারাতে থাকে নাব্য। বিগত চারদলীয় জোট সরকারের প্রথম দিকে এসব বিষয় নিয়ে বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে আলোচনা, আমলশীদ এলাকা পরিদর্শন ও তথ্য বিনিময় করা হলেও পরবর্তীকালে এসব বিষয় টেবিল বা বাস্তবে আর এগিয়ে যায়নি। সুরমা নদীর সঙ্গে সিলেটবাসীর অস্তিত্ব জড়িত। তাই সুরমা খনন হোক—এটা সবাই চায়।

শেয়ার করুন

0 comments:

পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়