কানাইঘাট উপজেলার গোসাইনপুর গ্রামের সবজি চাষীরা সবজি চাশে ব্যাস্ত
সিলেটে এক যুগ আগেও রবি মৌসুমে শাকসবজি উত্পাদন হিসাবের মধ্যে ছিল না। কিন্তু আশার কথা, জেলার বেশ কয়েকটি উপজেলায় সম্প্রতি শীতকালীন শাকসবজির উত্পাদন বেশ বেড়েছে। নিজেদের অভিজ্ঞতায় প্রতিনিয়ত কাজ করে চলেছেন সিলেটের কৃষকরা। কর্মসংস্থান
ও বেঁচে থাকার তাগিদে এবং বাজারের চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় প্রতিকূল অবস্থায়ও শাকসবজি চাষে কৃষকদের আগ্রহ বাড়ছে। সিলেট সদর, কানাইঘাট, গোয়াইনঘাট, গোলাপগঞ্জ ও জকিগঞ্জ উপজেলায় বেশ কিছু কৃষক এখন নিয়মিত সবজি চাষ করছেন।স্থানীয় চাহিদা শেষে এসব স্থান থেকে শাকসবজি পাশের উপজেলা বা সিলেট শহর পর্যন্ত বিক্রির জন্য পাঠানো হচ্ছে। সিলেটের বাইরেও শাকসবজি রফতানি হচ্ছে। অনুসন্ধানে দেখা গেছে, ক্রেতাদের মধ্যেও স্থানীয়ভাবে উত্পাদিত টাটকা সবজির চাহিদা বাড়ছে। এসব স্থানে সংরক্ষণাগার না থাকায় ভরা মৌসুমে অতিরিক্ত সবজি নষ্ট হচ্ছে। আবার এক সময় দাম সর্বনিম্ন পর্যায়ে চলে গেলে কৃষকদের আহাজারি করা ছাড়া আর কিছু থাকে না। মাঝখানে শহরের মধ্যস্বত্বভোগী সবজি বিক্রেতারা বেশি লাভবান হচ্ছে।সবজি চাষে কৃষকদের আগ্রহের বিষয় সরেজমিন পরিদর্শনের জন্য গত ১৭ ফেব্রুয়ারি কৃষক কল্যাণ সংস্থার আয়োজনে সদর উপজেলার টুকেরবাজার ইউনিয়নের কুমারগাঁও মাঠ পরিদর্শনের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি ড. আবদুল আউয়াল। এ ছাড়া উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংক সিলেটের ডিজিএম গোলাম হায়দার, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা কৃষিবিদ মুহম্মদ মামুনুর রশিদ সরকার, আতাউর রহমান, আনা মিয়াসহ অর্ধশতাধিক কৃষক।কৃষকরা জানান, কুমারগাঁও এলাকায় কৃষকরা নানা প্রতিকূলতা সত্ত্বেও সবজি চাষ করে আসছেন। একমাত্র সেচ সুবিধা না থাকায় তারা ফসল আশানুরূপভাবে আবাদ করতে পারেন না। একটি গর্ত থেকে শুকনো মৌসুমে কিছুদিন পানি মাঠে দিতে পারলেও পরে তা শুকিয়ে গেলে পানির অভাবে মাঠের অনেক ফসল বিনষ্ট হয়ে যায়। কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি একটি গভীর নলকূপ স্থাপনে সহযোগিতার আশ্বাস দেন। বারির কর্মকর্তা জানান, এ এলাকায় শ্যালো টিউবওয়েল দিয়ে সেচ সুবিধা সম্প্রসারণের সুযোগ রয়েছে। তিনি জানান, এলাকায় মুগডাল চাষের সম্ভাবনা উজ্জ্বল। স্থানীয় কৃষকরা জানান, ভেজাল সার ও বীজের কারণে তাদের পরিশ্রম অনেক সময় বিফল হয়। বর্তমানে এ এলাকায় কীটনাশক ও রাসায়নিক সারের পরিবর্তে জৈব সার প্রয়োগ করে ভালো ফসল কীভাবে ফলানো যায়, সে সম্পর্কিত একটি উদ্যোগ কৃষককল্যাণ সংস্থা নিচ্ছে বলে সংস্থার আহ্বায়ক জানান।উল্লেখ্য, গত কয়েক যুগে সিলেটের নদীগুলোর নাব্য যেমন হ্রাস পেয়েছে, তেমনি খাল ও হাওর ভরাট হয়েছে। আবাসনের জন্য কৃষি জমি কমছে, আবার নিম্নাঞ্চলের হাওরগুলোতে ভরাট হওয়া জমি বোরো চাষের আওতায় এসেছে। খাল-নালা সংস্কারের মাধ্যমে পানি নিষ্কাশন, সেচব্যবস্থা সম্প্রসারিত হলে মত্স্য চাষও বৃদ্ধি পাবে। অন্যদিকে সিলেটে গবাদি পশুর সঙ্কট বেশি। ঘাস ও তথা গো-খাদ্যের অভাবে গবাদি পশু পালন কম। কৃষিব্যবস্থার পরিবর্তন হলে গবাদি পশু পালন বৃদ্ধি পাবে। গবাদি পশু বৃদ্ধি পেলে হালের গরুর সঙ্কট কমবে। দুগ্ধ উত্পাদনও বেড়ে যাবে। প্রাকৃতিক সার উত্পাদনের উত্স সৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনাও দেখা দেবে।কৃষিবিশেষজ্ঞদের মতে, কৃষকদের উদ্বুদ্ধকরণসহ কৃষি উপকরণ সহজলভ্য, সেচ সুবিধা বৃদ্ধি এবং একই সঙ্গে পণ্য পরিবহন, বাজারমূল্য স্থিতিশীল রাখতে সরকার প্রয়োজনীয় লজিস্টিক সাপোর্ট দিলে সিলেটের কৃষি ক্ষেত্রে উজ্জ্বল সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচিত হতে পারে।-আমারদেশ -৯মার্চ ২০১০
0 comments:
পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়