নিজস্ব প্রতিবেদক :
সিলেটের ঐতিহ্যবাহী সাহিত্য প্রতিষ্ঠান কেন্দ্রীয় মুসলিম সাহিত্য সংসদ (কেমুসাস), সিলেট-এর উদ্যোগে অষ্টমবারের মতো সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে ‘শেকড়ের সন্ধানে অভিযাত্রা ২০২৫’। গত ২৫ ডিসেম্বর (বৃহস্পতিবার) দিনব্যাপী এই অভিযাত্রায় মরমি কবি ইবরাহিম আলী তশ্না (রহ.) ও বহু গুণীজনের স্মৃতিবিজড়িত জনপদ কানাইঘাট সফর করেন কেমুসাসের পৃষ্ঠপোষক সদস্য, জীবনসদস্য ও সাহিত্যামোদীসহ মোট ১০১ জন অভিযাত্রী।
সকালে কেমুসাস প্রাঙ্গণে অভিযাত্রার উদ্বোধন করেন সংগঠনের সাবেক সভাপতি ও সিলেট প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি হারুনুজ্জামান চৌধুরী। উদ্বোধন শেষে অভিযাত্রী দল সিলেট থেকে কানাইঘাটের উদ্দেশে যাত্রা করে।
অভিযাত্রার অংশ হিসেবে প্রথমে মরহুম মরমি কবি ইবরাহিম আলী তশ্না (রহ.)-এর কবর জিয়ারত করেন অতিথিরা। পরে কবির উত্তরসূরি কবি সরওয়ার ফারুকীর ব্যবস্থাপনায় অংশগ্রহণকারীদের জন্য মধ্যাহ্নভোজের আয়োজন করা হয়।
বিকেলে কবি ইবরাহিম আলী তশ্না (রহ.) কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত উমরগঞ্জ ইমদাদুল উলুম মাদরাসার মাঠে অনুষ্ঠিত হয় ‘মরমি কবি ইবরাহিম আলী তশ্নার জীবন ও কর্ম’ শীর্ষক আলোচনা সভা। শেকড়ের সন্ধানে উপকমিটির আহ্বায়ক কবি সালেহ আহমদ খসরুর সভাপতিত্বে এবং উপকমিটির সদস্যসচিব, কেমুসাসের সাহিত্য ও গবেষণা সম্পাদক কামরুল আলম ও ক্যালিগ্রাফার জাহেদ হোসাইন রাহীনের যৌথ সঞ্চালনায় সভায় বক্তব্য দেন কেমুসাসের সাবেক সভাপতি হারুনুজ্জামান চৌধুরী, সাবেক সহসভাপতি কবি কালাম আজাদ, বর্তমান সহসভাপতি আফতাব চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক সেলিম আউয়াল, সাবেক সাধারণ সম্পাদক দেওয়ান মাহমুদ রাজা চৌধুরী, বিশিষ্ট কবি সালেহ আহমদ, দৈনিক নয়াদিগন্তের সিলেট ব্যুরো চিফ আবদুল কাদের তাপাদার, লাইব্রেরি সম্পাদক কবি নাজমুল আনসারী, সহ-লাইব্রেরি সম্পাদক কবি ইশরাক জাহান জেলী, কার্যকরী পরিষদের সদস্য কবি কামাল তৈয়ব অ্যাডভোকেট এবং উমরগঞ্জ ইমদাদুল উলুমের মুহতামিম মাওলানা আফতাব উদ্দিন।
মরমি কবি ইবরাহিম আলী তশ্নার পরিবারের পক্ষ থেকে স্বাগত বক্তব্য দেন কবি সরওয়ার ফারুকী। অনুষ্ঠানে তশ্না সংগীত পরিবেশন করেন শিল্পী আলী হায়দার। শুরুতে পবিত্র কুরআন তেলাওয়াত করেন হাফিজ আবুল কালাম।
বক্তারা বলেন, মরমি কবি ইবরাহিম আলী তশ্না ছিলেন সিলেট অঞ্চলের একজন প্রখ্যাত সুফি সাধক, গীতিকার ও আধ্যাত্মিক চিন্তাবিদ। ফকিরি, দেহতত্ত্ব ও কামতত্ত্বভিত্তিক নিগূঢ় দর্শনে সমৃদ্ধ তাঁর গান বাংলা সুফি সাহিত্যে এক অনন্য সংযোজন। তাঁর রচিত গ্রন্থ ‘অগ্নিকুণ্ড’ আধ্যাত্মিক সাহিত্যচর্চায় বিশেষ গুরুত্ব বহন করে। তিনি হজরত শাহজালাল (রহ.)-এর সফরসঙ্গী শাহ তকী উদ্দীনের বংশধর ছিলেন এবং আজীবন মানবিক ও আধ্যাত্মিক চেতনার প্রচারে নিবেদিত ছিলেন।
বক্তারা আরও বলেন, ‘শেকড়ের সন্ধানে অভিযাত্রা’ কেবল একটি ভ্রমণ কর্মসূচি নয়; বরং এর মাধ্যমে আমাদের সাহিত্য, সংস্কৃতি ও ইতিহাসের শেকড়ে ফিরে যাওয়ার এক গুরুত্বপূর্ণ সুযোগ সৃষ্টি হয়। নতুন প্রজন্মের কাছে মনীষীদের জীবন ও কর্ম তুলে ধরতে এ ধরনের আয়োজন কার্যকর ভূমিকা রাখছে।
অনুষ্ঠান শেষে কবি ইবরাহিম আলী তশ্নার স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে তাঁর আদর্শ ও সাধনার ধারাকে আগামী প্রজন্মের মাঝে ছড়িয়ে দেওয়ার অঙ্গীকার ব্যক্ত করা হয়।
উল্লেখ্য, অভিযাত্রীদের অভ্যর্থনা জানাতে কানাইঘাটের বিভিন্ন সড়কে তোরণ স্থাপন করা হয় এবং অনুষ্ঠানস্থল উমরগঞ্জ ইমদাদুল উলুম মাদরাসা প্রাঙ্গণ নান্দনিক সাজে সাজানো হয়। বিশেষ আকর্ষণ হিসেবে প্রদর্শিত হয় কবি ইবরাহিম আলী তশ্নার হাতের লেখা, তাঁর ব্যবহৃত সিলমোহর, কানাইঘাট অঞ্চলের লেখকদের গ্রন্থ, ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের ইতিহাস এবং কবির জীবন ও কর্মভিত্তিক বিভিন্ন ফেস্টুন। আলোচনা সভা শেষে ‘শেকড়ের সন্ধানে অভিযাত্রা ২০২৫’ উপলক্ষে প্রকাশিত দৈনিক সুরমা মেইল পত্রিকার বিশেষ ক্রোড়পত্রের মোড়ক উন্মোচন করা হয়।

0 comments:
পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়