মুফতী মুহাম্মাদ আল-মাদানী ::
বিংশ শতাব্দীর শেষ পাদলগ্নে ও একবিংশ শতাব্দীর সূচনাপর্বে বাংলাদেশের হাদীস চর্চা, গবেষণা ও অধ্যয়নের ইতিহাসে দেশবরেণ্য যে কয়জন গবেষক ও শিক্ষাবিদ ইলমে হাদীসের শিক্ষার প্রচার ও প্রসারে কীর্তিমান অবদান রেখে উজ্জ্বল প্রতিভার স্বাক্ষর রেখে গেছেন,তাদের মধ্যে বিশিষ্ট হাদীস সেবক,তাফসীর কারক ও ফিকাহবিদ,জ্ঞানের অত্যুজ্জ্বল শিখা,ইলমের অমূল্য ভান্ডার প্রফেসর অধ্যক্ষ আল্লামা আব্দুশ শাকুর শিবনগরী (রহ) ছিলেন শীর্ষস্থানীয়।
অধ্যাপক আল্লামা আব্দুশ শাকুর শিবনগরী (রহ) ছিলেন বাহরুল উলুম, গভীর জ্ঞানের অধিকারী,অগাধ জ্ঞান ভান্ডারের ধারক বাহক। তাঁর মধ্যে রয়েছে অসাধারণ ইলমী দক্ষতা ও যোগ্যতা মাদরাসা-ই-আলিয়া ঢাকার শিক্ষকমন্ডলীর মধ্যে তাঁর দারসের ঢং,বর্ণনাভঙ্গি, বক্তৃতা পদ্ধতি অনন্য ব্যতিক্রমধর্মী। তাঁর প্রদত্ত লেকচার গুলি ছিল গবেষণাধর্মী। তিনি নিজেই প্রচুর লেখাপড়া করতেন।হাদীসের বিভিন্ন শরুহাত (ব্যাখ্যাগ্রন্থাবলী) অধ্যয়ন করে তার সারসংক্ষেপ সংগ্রহ করে নিতেন।বিভিন্ন মাযহাব থেকে হানাফী মাযহাবের প্রতিষ্ঠা ও প্রাধান্য প্রদানের প্রমাণ্য আলোচনার অবতারণা করতেন। তাঁর প্রদত্ত লেকচারগুলি শুনার জন্য শিক্ষার্থীগণ অধির আগ্রহের সহিত অপেক্ষণ করতেন। সে সময়ে মাদরাসা-ই-আলিয়া ঢাকা এর বহু সংখ্যক ছাত্র কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় সমূহের বিভিন্ন বিভাগে অধ্যয়নরত ছিল।কিন্তু যখন আল্লামা আব্দুশ শাকুর শিবনগরী (রহ) এর ক্লাস আরম্ভ হতো তখন ছাত্রগণ কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের চলাকালীন ক্লাস ছেড়ে তাঁর ক্লাসে উপস্থিত হতো। তাঁর জ্ঞান গবেষণাসুলভ বক্তব্য শুনে শিক্ষার্থীগণ পরিতৃপ্ত হতো।তাঁর পাঠদানের স্টাইল ছিল অসাধারণ। হাদীস বিশারদ আল্লামা আব্দুশ শাকুর শিবনগরী (রহ) এর লেকচারের আরো অন্যতম একটি গুন ও বৈশিষ্ট্য ছিল তাঁর বক্তব্যের মধ্যে ছিল মুফতি সৈয়্যদ আমীমুল ইহসান মুজাদ্দেদী বারাকাতী (রহ) এর ইলমী পান্ডিত্য, ফেকহী ও ইজতেহাদী প্রতিভা বিনয়-উদারতা ও লিল্লাহিয়াতের ছাপ।তিনি তাঁর শিক্ষক মন্ডলীর মধ্যে মুফতি সৈয়্যদ আমীমুল ইহসান সাহেব ও আল্লামা কাশগড়ি সাহেবের অবদানের কথা আজীবন অকপটে স্বীকার করতেন। কৃতজ্ঞতাভরে তাদের উভয়ের ইহসানের কথা বারবার স্মরণ করতেন। তিনি তাদের শিষ্যত্বের কথা তাঁর শিষ্যদের কে সগর্ভে নিঃসংকোচচিত্তে ব্যক্ত করতেন।
আল্লামা আব্দুশ শাকুর শিবনগরী (রহ) তার স্বীয় উস্তায মুফতি সৈয়্যদ আমীমুল ইহসান সাহেবের উক্ত রীতি ও পদ্ধতি অবলম্বনে সিদ্ধহস্ত ছিলেন।তিনি তাঁর লিখিত ডায়েরি ও পান্ডুলিপি নিয়ে ক্লাসে আসন গ্রহণ করে অনর্গল মূল্যবান লেকচার ও বক্তৃতাসম্ভার পেশ করতেন। মনে হতো যেন তাঁর পবিত্র যবান থেকে অমূল্য রত্ন ও মুক্তা ঝরছে। ছাত্ররা গভীর উৎসুকের সহিত তাঁর প্রদত্ত লেকচারগুলি শুনতো, আহরণ করে নিতো অমূল্য ধনজ্ঞান ভান্ডার,সমৃদ্ধচিত্তে জ্ঞান পিপাসা নিবারণ করতো।
আল্লামা আব্দুশ শাকুর শিবনগরী (রহঃ) মুফতী সৈয়দ আমীমুল ইহসান মুজাদ্দেদী বারাকাতী (রহঃ) এর নিকট মুজাদ্দেদীয়া নকশবন্দীয়া তরীকতের ইযাযত গ্রহণ করেছেন।
আল্লাহ তাআলা তাঁকে জান্নাতে আলা মাকাম দান করুন। তাঁর কবরের উপর নাজিল করুন আল্লাহ পাকের রহমতের বারিধারা।
লেখক: কলামিস্ট ও গবেষক।
0 comments:
পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়