সাহিদা আফরিন মিথিলা ::
ভ্রমণপিপাসু মনের ক্ষুধা মিটাতে আমরা অনেক সময়ই বিভিন্ন স্থানে ঘুরতে যাই, আবার কখনো বা নেমে পড়ি অজানার উদ্দেশ্যে। ভ্রমণ যাদের নেশা তারা শত ব্যস্ততার মাঝেও খুঁজে বের করে নেয় ভ্রমণের জন্য কিছুটা সময়।
বাংলাদেশে ভ্রমণের জন্য রয়েছে বিভিন্ন ঐতিহাসিক, প্রত্নতাত্ত্বিক ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্যমণ্ডিত জায়গা।
প্রত্যেকেই তার রুচিমত জায়গায় ঘুরতে ভালোবাসেন। যারা বিশেষভাবে ঐতিহাসিক
জায়গায় ঘুরতে ভালোবাসেন তাদের আমরা আজ পরিচয় করিয়ে দেবো বিশেষ এক জায়গার
সঙ্গে।

বিশেষজ্ঞদের অনুসন্ধান অনুযায়ী জানা যায় যে, দেউলটি বিশ শতকের গুপ্ত যুগে নির্মিত। রাজা ভরত এই দেউলটি নির্মাণ করেন। তিনি ছিলেন তৎকালীন একজন প্রভাবশালী রাজা। তিনি ভদ্রানদীর তীরবর্তী এলাকাসহ সুন্দরবনের অনেকাংশে রাজস্ব আদায় করতেন। নিজ স্মৃতি ধরে রাখার জন্য তিনি ভরত ভায়না নির্মাণ করেন।
ভরত দেউলটি ইতিহাস ও ঐতিহ্যের এক অনন্য প্রতীক।
ভরত রাজার দেউলের অবস্থান
বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় খুলনা বিভাগের যশোর জেলার কেশবপুর উপজেলার গৌরিঘানা ইউনিয়নের ভরতভায়না গ্রামে অবস্থিত এই ভরত রাজার দেউল।
ইতিহাসে উল্লেখ আছে যে, প্রত্নস্থানটিতে ১২ দশমিক ২২ মিটার উঁচু এবং ২৬৬ মিটার পরিধি বিশিষ্ট একটি ঢিবির অস্তিত্ব ছিল। ১৮৮৯ সালে ব্রিটিশ সরকারের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সুপারিন্টেন্ডেড কাশিনাথ দীক্ষিতের মতে, দেউলটি ৫০ ফুটের অধিক উঁচু এবং এর ব্যাস ৯০০ ফুটের অধিক।
স্থানটি খনন করার জন্য ১৯৮৪-২০০১ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ সরকারের
প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ পর্যায়ক্রমে সাত অর্থ বছরের অর্থ বরাদ্দ পায়। এরপর তারা
সেখানে খননকার্য চালায়। স্থানটি খননের ফলে দেউলটির পূর্ণ অবয়ব সামনে আসে।
মানুষ এখন দেউলটি পূর্ণভাবে দেখতে পায়।

প্রটিটি কক্ষের দেয়াল তিন থেকে তের মিটার পর্যন্ত চওড়া। এখানে ব্যবহৃত অনেক ইটের দৈর্ঘ ৩৬ সেন্টিমিটার থেকে ৫০ সেন্টিমিটার। ইটগুলো দেখলে মনে হবে সেগুলি হাত দিয়ে তৈরি।
স্থানীয়দের মতে, এই সপ্তকটির উপরিভাগে বৌদ্ধদের একটি উপাসনালয় ছিল। প্রাসাদটির চারপাশে তিন মিটার চওড়া রাস্তা রয়েছে। ধারণা করা হয় যে, বৌদ্ধ ভিক্ষুরা পূণ্য অর্জনের জন্য উপাসনালয়ের চারপাশে প্রদক্ষিণ করতেন।
এখানে চারটি দেয়ালে যে ঘরগুলি ছিল সেগুলিতে বৌদ্ধ ভিক্ষুরা বাস করতেন বলে ধারণা করা হয়।
স্থানীয়দের কাছে আরো জানা যায় যে, এখানে খননকার্য চলাকালীন বেশকিছু জিনিসপত্র ও পুরাকীর্তি উদ্ধার করা হয়। সেগুলির মধ্যে পোড়া মাটির বাঘের মুখমন্ডল, মানুষের মুখমন্ডল, দেব-দেবীর মূর্তির ভগ্নাংশ উল্লেখযোগ্য।

প্রত্নতাত্ত্বিক এই জিনিসগুলো এখন খুলনা বিভাগীয় জাদুঘরে সংরক্ষিত আছে।
বিরাট এক প্রাচীন বটবৃক্ষ আগলে রেখেছে ভরতের দেউলের একাংশ। যার পাশ দিয়ে বয়ে চলেছে ভদ্রা নদী।
ভরত দেউলের প্রকৃত ইতিহাস সম্পর্কে পুরোপুরি এখনো জানা যায়নি। বিশেষজ্ঞরাও এর পূর্ণ ইতিহাস উদঘাটন করতে পারেনি। তবে স্থানটির পূর্ণাঙ্গ খনন কাজ সম্পন্ন হলে এর প্রকৃত ইতিহাস জানা যেতে পারে বলে বিশেষজ্ঞদের ধারণা।
সূত্র:
ডেইলি বাংলাদেশ
খবর বিভাগঃ
ফিচার
0 comments:
পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়