Wednesday, September 4

অমুসলিম ভাইদের দাওয়াত দেয়ার গুরুত্ব

মাওলানা ওমর ফারুক  ::

মনে করুন! যদি কোনো অমুসলিম ভাইকে প্রশ্ন করা হয়, বলুন তো দেখি ইসলাম কাদের ধর্ম? নিশ্চই তিনি উত্তরে বলবেন, মুসলমানদের ধর্ম। একই প্রশ্ন যদি কোনো মুসলমান ভাইকে বলা হয়, তারাও উত্তর দিবে এতো আমাদের ধর্ম। কিন্তু একটু বুকে হাত রেখে চিন্তা করুন, আদৌ এই উত্তরটি কি সঠিক? 

আসুন এর বাস্তবতায় পৌঁছাতে আমরা কোরআনে হাকিমের মাঝে গভীরভাবে চিন্তা করি।

কোরআনে কারিমে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা তার ইবাদতের হুকুম দিতে গিয়ে ইরশাদ করেন, ‘হে মানুষ সকল! তোমরা তোমাদের সেই প্রতিপালকের ইবাদত করো, যিনি তোমাদের এবং তোমাদের পূর্ববর্তীদের সৃষ্টি করেছেন, যেন তোমরা তাকওয়া অবলম্বন করতে পারো।’ 
এই আয়াতে আল্লাহ তায়ালা ‘আন নাস’ শব্দ ব্যবহার করেছেন। যার অর্থ হে মানবগণ! এখানে ‘আন নাস’ শব্দের মাঝে রাসূলে কারিম (সা.) থেকে নিয়ে কিয়ামত পর্যন্ত যতো মানুষ পৃথিবীতে আসবে সকলেই এই মানুষের অন্তর্ভুক্ত। এখানে না আছে কোনো যুগের শর্ত, না আছে কোনো অঞ্চল নির্দিষ্ট? বরং সকল মানুষকে আল্লাহ তায়ালা নির্দেশ দিচ্ছেন ‘হে মানব সকল! পৃথিবীতে ৬’শ কোটি মানুষ, সকলেই মানুষের অন্তর্ভুক্ত। কিন্তু প্রশ্ন হলো, ৬’শ কোটি মানুষ সকলেই কী আল্লাহর ইবাদত করে? অথবা কমপক্ষে এতোটুকু কী তাদের জানা আছে যে, আমাদেরকে এক আল্লাহর ইবাদত করতে হবে? যদি উত্তর ‘না’ হয়। তাহলে কোনো মুসলমানের পক্ষ থেকে অমুসলিম ভাইদের কাছে এ কথা পৌঁছানো হয়েছে কী? তবে এ গুরু দায়িত্বটি কাদের?
এমনিভাবে যদি প্রশ্ন করা হয়, মুহাম্মাদ (সা.) কাদের নবী? হিন্দু ভাইদের পক্ষ থেকে উত্তর আসবে তিনি মুসলমানদের নবী। তারা বলবে, আমাদের অবতার তো শ্রীকৃষ্ণ ও রামের রূপ ধারণ করে এসেছিলেন। তদ্রুপ খ্রিষ্টান ভাইদের পক্ষ থেকে উত্তর আসবে, তিনি হলেন মুসলমানদের নবী। আমাদের নবী ঈসা (আ.)। ঠিক মুসলমানদের পক্ষ থেকেও উত্তর আসবে তিনি তো আমাদেরই নবী। আচ্ছা এই উত্তরগুলো কি সঠিক? রাসূল (সা.) কি শুধু মুসলমানদেরই নবী? 
আসুন! আমরা কোরআনে হাকিম থেকে জানি, কোরআন এ ব্যাপারে কী বলে? কোরআনে হাকিমে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘হে নবী! আপনি বলে দিন, হে মানবজাতি! আমি তোমাদের সকল মানুষের জন্য রাসূল হিসাবে প্রেরিত হয়েছি।’ (সূরা: আরাফ, আয়াত: ১৫৮) অর্থাৎ হিন্দু, বৌদ্ধ, জৈন, ইহুদি, খ্রিষ্টান ইত্যাদি, এদের সকলেরই নবী হলেন হজরত মুহাম্মাদ (সা.)। এখন প্রশ্ন হলো, আদৌ কী তারা জানে যে, হজরত মুহাম্মাদ (সা.) তাদেরও নবী? 
রাসূলুল্লাহ (সা.)-কে কোরআন দান করা হয়েছে। যদি হিন্দু ভাইদের জিজ্ঞাসা করা হয়, বলুন তো কোরআন কাদের কিতাব? উত্তরে তারা বলবে, এটা মুসলমানদের কিতাব। আমাদের কিতাব হলো গীতা, রামায়ণ ইত্যাদি। খ্রিষ্টান ভাইয়েরা এমন প্রশ্নের উত্তরে বলবে, আমাদের কিতাব তো হলো বাইবেল, আর কোরআন হলো মুসলমানদের কিতাব। ইহুদীরা একই প্রকার উত্তর প্রদান করবে।
এবার আমরা দেখি কোরআন এ ব্যাপারে কী বলে। কোরআনে হাকিমে আল্লাহ তায়ালা এরশাদ করেন, ‘বরকতময় রমজান মাসে সকল মানুষের হেদায়াতের  জন্য কোরআন অবতীর্ণ করা হয়েছে।’ শুধু মুসলমানদের হেদায়াতের জন্য নয়। অর্থাৎ এই মহা পবিত্রগ্রন্থ সকল মানুষের জন্য হেদায়াতনামা। এখন প্রশ্ন হলো ৬ শ’ কোটি অমুসলিম ভাই-বোন তারা কী জানে যে এই কিতাব তাদের জন্যও পথ প্রদর্শক? এর উত্তরে আপনি নিজেই বলবেন, অবশ্যই তারা জানে না। আমরা জানি। আমরা কী তাদের কাছে এই বার্তাটি পৌঁছিয়েছি? 
এক অমুসলিম ভাইকে বলা হলো, কোরআন তোমাদের জন্যও পথ প্রদর্শক, হেদায়াতনামা। সে খুবই আশ্চর্যের সঙ্গে বলল, এটা যদি আমাদের কিতাব হতো, তাহলে এতোদিন তোমরা আমাদেরকে দাওয়াত দাওনি কেনো? উত্তরে বলা হলো, এ কথা অধিকাংশ মুসলমানও জানে না। মুসলিম-অমুসলিম সকল মানুষকে অন্ধকার ও পথভ্রষ্টতা থেকে বাঁচানোর জন্য এই কিতাব অবতীর্ণ করা হয়েছে। শুধু মুসলমানদের জন্য অবতীর্ণ করা হয়নি। 
উল্লিখিত আয়াত তিনটিকে যদি একটু মনোযোগ দিয়ে পড়ি তাহলে এ কথা স্পষ্ট হয়ে যাবে, এই আয়াতগুলোতে ‘আন্নাস’ শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। এই আয়াতগুলো একত্রে আমরা এভাবে বুঝতে পারি।
ইবাদত (সকল মানুষের জন্য)।
রিসালাত (সকল মানুষের জন্য)
ঈমান (সকল মানুষের জন্য)
মুসলিম (সকল মানুষের জন্য)
এর উদ্দেশ্য হলো, সকল মানুষকে আল্লাহর ইবাদত করতে হবে। চাই সে হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান যেই হোক না কেনো। হজরত মুহাম্মদ (সা.) মুসলিম-অমুসলিম সকল মানুষের নবী এবং কোরআন পুরো দুনিয়ার সকল মানুষের জন্য পথ প্রদর্শক। চাই সে যে কোনো ধর্মেরই হোক না কেনো।
এখানেও সেই একই প্রশ্ন উঠবে, বাস্তবে এসব কিছু জানে কারা? কারা এর বাহক? প্রকৃতপক্ষে আমরা মুসলমানরাই এ ব্যাপারে জ্ঞাত। আমরাই এর ধারক-বাহক। এখন প্রশ্ন জাগে, তাহলে এই মুসলমানদেরকে সৃষ্টি করা হয়েছে কেনো? 
কোরআনে কারিম এই প্রশ্নের উত্তর এভাবে দেয়। ‘তোমরাই সর্বোত্তম জাতি। তোমাদেরকে বের করা হয়েছে মানুষের কল্যাণের জন্য। তোমরা মানুষকে সৎকাজের আদেশ দাও এবং অসৎ কাজ হতে নিষেধ করো। এবং আল্লাহর ওপর বিশ্বাস স্থাপন করো।’ (সূরা: আলে-ইমরান, আয়াত: ১১০) অর্থাৎ বিশ্বের মানুষকে আল্লাহ তায়ালা দু‘ভাগে বিভক্ত করেছেন। ১. উত্তম জাতি। ২. মানুষ। অর্থাৎ ২০০ কোটি মুসলমান যারা উত্তম জাতি। আর বাকি ৬০০ কোটি অমুসলিম ‘মানুষ’। ২০০ কোটি মুসলমান উত্তম জাতি, ৬ শ’ কোটি অমুসলিম মানুষকে সৎকাজের আদেশ দিবে এবং অসৎ কাজ থেকে বাধা দেবে। 
উল্লেখিত আয়াতের তাফসিরে মুফাস্সিরগণ লিখেছেন : উত্তম জাতি হওয়ার জন্য তিনটি শর্ত ।
১. সৎকাজের আদেশ করা ।
২. অসৎকাজের নিষেধ করা ।
৩. আল্লাহর প্রতি ঈমান আনা ।
একটু চিন্তা করি, আমরা কি এই তিনটি শর্তের ওপর আমল করছি? যদি উত্তর নেতিবাচক হয়, তাহলে কী আমরা উত্তম জাতি? যদি উত্তর হয় ‘না’ তাহলে এই জাতিকে উত্তম জাতি হওয়ার জন্য তিনটি শর্ত: উত্তম জাতি বানানোর ফিকির করতে হবে কি না? এ জন্য আমাদের সৎকাজের আদেশ এবং অসৎ কাজের নিষেধ অর্থাৎ ইসলাম ধর্মের দাওয়াত ও তাবলিগ করতে হবে। যদি আমরা এই জিম্মাদারি আদায় না করি, তাহলে আমাদের ওপর আল্লাহর কঠিন শাস্তি আসতে পারে। আল্লাহর দরবারে দোয়া করি, তিনি যেন উম্মতকে তাদের জিম্মাদারির হক আদায় করার তৌফিক দান করেন। 

শেয়ার করুন

0 comments:

পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়