হাবীবুল্লাহ সিরাজ ::
চলছে ঈদের কেনা-কাটা। দুই মেয়ের জন্য তিন করে ছয় সেট থ্রিপিছ, জুতা তো আছেই। বড়ো ছেলে বাদলের জন্য দুইটি টি শার্ট সঙ্গে প্যান্ট। ছোট ছেলে জয়ের জন্য এখনো কিছু কিনেনি তবে কাল বসুন্ধরা মার্কেট যাবে। ঈদের নামাজের জন্য একটি সিল্কের পাঞ্জাবী। বড়ো মেয়ের শাশুড়ির জন্য টাঙ্গাইলের টানা শাড়ি, জামাইর জন্য পাঞ্জাবী লুঙ্গি ও জুতা- এই হলো আরিফ সাবের এই ঈদের কেনা-কাটা।
ঈদ আসলে সবাই ভালো নতুন জামা কাপড় কিনবেই;
এটাই নিয়ম। এটার যেমন সামাজিক ভিত্তি আছে, তেমনি শরিয়তেও ঈদের নতুন বা ভালো
জামা কাপড়ের কথা এসেছে। আমাদের রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেন- ঈদের দিন তোমরা যথাসম্ভব ভালো পড়ো, ভালো খাও।
দীর্ঘ একমাস ত্যাগের শিক্ষা নিয়ে আমরা যখন
নিজের পরিবার পরিজন সন্তান-সন্তুতির জন্য বিশাল বাজেটেট মার্কেট করি; তখন
ত্যাগের কিন্তু কিছু আসে না। এই মার্কেটের ত্যাগের শিক্ষাটা যদি কাজে
লাগাতে চাই তাহলে আমার পরিবারের মার্কেটের সঙ্গে আমার কাজের বুয়া-আয়া, ছোট
বাচ্ছাটা যেটা সর্বক্ষণ আমার বাড়ি থাকে তাদের জন্যও বাজেট থাকতে হবে। আমি
আমার পরিবার সাজাই কিন্তু আমার অসহায় আত্মীয় স্বজনেরা অর্থের অভাব
ছেলে-মেয়েদের নতুন জামা কাপড় দিতে পারে না। আমার ছেলে-মেয়েদের জন্য একাধিক
ঈদের জামা ক্রয় করছি, অথচ আমার আত্মীয় স্বজন পারছে না।
দীর্ঘ একমাস সিয়াম সাধনা করে কী আমরা এই
শিক্ষা পেলাম? আমি ঈদের মার্কেট করি ভারত কিংবা সিঙ্গাপুরে। আমি বাজেট করি
লক্ষ টাকা। আর কেউ একশ টাকার একটি নতুন জামা কিনতে পারে না। যদি আমি এই
সামান্য ত্যাগটুকু আমার আত্মীয় স্বজনের জন্য দিতে না পারি তাহলে রমজানের
শিক্ষাগুলো নিজের অজান্তেই হারিয়ে যাবে। রহমতের এই মাস থেকে যদি অন্যের ওপর
রহমত করা শিখতে না পারি রহমতের দিনগুলো আমার জন্য ব্যর্থতাই আনলো। একজন
গরিব অসহায় মানুষকে একটি জামা দিতে হাজার টাকার প্রয়োজন হয় না। আমি যে জুতা
কিনি, এর বক্সের দাম দিয়েই অসহায়ের মুখে হাসি ফোটানো যায়। নিজের প্যাকেট
থেকে দিতে হবে এমন তো নয়, আমার জাকাতের টাকা থেকে দিয়ে দেবো, ফেতরার টাকা
থেকে দিয়ে দেবো। তাই আসুন সিয়াম সাধনার শিক্ষাটা জীবনের জন্য কাজে লাগাই।
সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকেই এগিয়ে যাই। নিজেদের
ঈদের কেনাকাটার কিছু অংশ তাদেরকেও দিই। শুধু নিজে একাজ করবো না, অন্যকেউ
উৎসাহিত করি। আমাদের সমাজে অনেক সম্পদশালী আছেন যারা নিজেদের ঈদের আনন্দ
উদযাপনে অনেক অর্থ খরচ করে। তাদের প্রতি আমাদের আবেদন- আমরা ভুলে যাব না
দিকভ্রান্ত পথহারা শিশু-কিশোর, ছেলে-মেয়েদের। ভুলে যাব না পাড়া প্রতিবেশী
গরিব-দুঃখী অভাবী লোকদের। যাদের পোশাক তো দূরের কথা খাবার কেনারও সামর্থ্য
নেই। আমরা সাধ্যমতো সব অভাবীর কথা চিন্তা করি; এগিয়ে যাই তাদের সহযোগিতায়।
যাতে ওরাও উপভোগ করতে পারে ঈদের আনন্দ। আমাদের মনে রাখতে হবে গরিব-দুঃখী
অভাবী আমরা সবাই একই সমাজ ও রাষ্ট্রেরই অংশ।
হজরত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেন, যে ব্যক্তি মানুষের প্রতি দয়া করে না; আল্লাহর তার প্রতি দয়া করে না।
অর্থাৎ গরিব দুঃখীর প্রতি সদয় হয় না আল্লাহ তায়ালাও সে মানুষের প্রতি সদয়
হবে না।
সর্বোপরি কথা হলো আমরা সবাই মানুষ।
স্রষ্টার সৃষ্টির অতুলনীয় সেরা জীব। আমাদের সমাজের সম্পদশালীদের দিকে
পুরোপুরি নির্ভরশীল না হয়ে কম-বেশি সবাই অসহায় মানুষের দিকে সুদৃষ্টি দিলে
তাদের জীবনে ঈদের আনন্দেও আসবে পরিবর্তন। ফুটবে মুখে অমলিন হাসি। ভুলে যাবে
দুঃখ-বেদনা। তারাও ভোগ করবে ঈদের আনন্দ।
খবর বিভাগঃ
ইসলাম
0 comments:
পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়