Sunday, June 2

আন্তর্জাতিক আদালতে ওআইসি’র সমর্থন চাইলেন প্রধানমন্ত্রী

নিউজ ডেস্ক:

রোহিঙ্গাদের আইনী অধিকার নিশ্চিত করতে বিষয়টি আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে (আইসিজে) উত্থাপন করার জন্য ওআইসি সদস্য রাষ্ট্রসমূহের কাছ থেকে সমর্থন চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পাশাপাশি তিনি স্বেচ্ছায় তহবিল এবং কারিগরি সহায়তার মাধ্যমে মামলাটি চালু করার জন্য সদস্য রাষ্ট্রসমূহকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।

সৌদি আরবের সাফা প্রাসাদে শনিবার ওআইসির ১৪তম ইসলামিক সম্মেলনে এ সমর্থন চান তিনি। এবারের সম্মেলনের শিরোনাম ‘মক্কা সামিট: টুগেদার ফর দ্য ফিউচার’।
গত মার্চে অনুষ্ঠিত ওআইসি পররাষ্ট্র মন্ত্রীদের আবুধাবি সম্মেলনে রোহিঙ্গা ইস্যুটি আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে স্থানান্তরের পথ তৈরি করে, এ প্রক্রিয়ায় সাহায্য করার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গাম্বিয়াকে ধন্যবাদ জানান।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সম্পদের সীমাবদ্ধতা থাকা সত্ত্বেও মিয়ানমার থেকে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত ১১ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা মুসলমানকে আশ্রয় দিয়েছে বাংলাদেশ। কিন্তু মিয়ানমার রাখাইন অঞ্চলে একটি সহায়ক পরিবেশ তৈরির প্রতিশ্রুতি মেনে চলতে ব্যর্থ হওয়ায় রোহিঙ্গাদের সম্মানের সঙ্গে প্রত্যাবর্তন এখনো অনিশ্চিত।
তিনি বিশ্ব অর্থনীতি, বাস্তুতন্ত্র ও নিরাপত্তা সম্পর্কিত প্রতিকূল পরিবর্তনগুলোর চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় ব্যাপক কৌশল প্রণয়নের জন্য ওআইসি-কে আহ্বান জানান।
‘পৃথিবীর কৌশলগত সম্পদগুলোর এক তৃতীয়াংশ আমাদের কাছে রয়েছে; যার অধিকাংশই যুবক। আমরা, নিজেরাই, আমাদের সমস্যার সমাধান করতে সক্ষম হওয়া উচিত।’
সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলায় ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি অনুসরণের কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা সন্ত্রাসী ও চরমপন্থি গোষ্ঠীর মোকাবিলায় সবাইকে একসঙ্গে লড়াইয়ের আহ্বান জানান।
এসব সমস্যা সমাধানের প্রধানমন্ত্রী মুসলিম বিশ্বের জন্য চারটি ফরমুলার কথা উল্লেখ করেন- অস্ত্র সরবরাহ বন্ধ করা, সন্ত্রাসের জন্য অর্থায়ন বন্ধ করা, উম্মাহর মধ্যে বিভাগগুলো অপসারণ করা এবং সংলাপের মাধ্যমে দ্বন্দ্বের শান্তিপূর্ণ নিষ্পত্তির পথ অনুসরণ করা।
শেখ হাসিনা বলেন, এটা হৃদয়গ্রাহী, ইসলামী সহযোগিতা সংস্থা (ওআইসি) একুশ শতাব্দীর সঙ্গে নিজেদের মানিয়ে নেয়ার জন্য সংস্কার ও এর প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করছে।
‘আমরা যখন পরিবর্তন এবং মানিয়ে নেব, তখন অবশ্যই ইসলামের মূল্যবোধ- ভ্রাতৃত্ব, সাম্য এবং ন্যায়বিচারের প্রতি লক্ষ্য রাখতে হবে, যেমনটা মহানবী (স.) করেছেন।’
নিউজিল্যান্ড ও শ্রীলংকার সাম্প্রতিক সন্ত্রাসী হামলার বিষয়ে হাসিনা সমবেদনা প্রকাশ করেছেন এবং ক্রাইস্টচার্চ হামলায় ভুক্তভোগী পরিবারের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেছেন। তিনি শ্রীলংকার সন্ত্রাসী হামলার নিন্দা জানিয়েছেন, ওই হামলায় তার আট বছর বয়সী নাতি শেখ জায়ানও মারা যায়।
‘আমরা প্যালেস্টাইন, সিরিয়া এবং অন্যত্র নির্মমভাবে খুন হওয়া অসহায় মানুষের বেদনা ও যন্ত্রণা ভাগ করে নেব। এই সামিটটি জোয়ারটি চালু করার জন্য আপনার মেজেসির পরিচালকের অধীনে কোর্স সেট করুন। মুসলমানদের অহংকার ও দুর্ভোগের অবসান শুরু এখান থেকেই শুরু হোক।’
সৌদি বাদশাহ সালমান বিন আব্দুল আজিজ আল সৌদ আফগানিস্তানের উপসাগরীয় অঞ্চলের উত্তেজনা নিয়ে মুসলিম নেতাদের ঐক্যবদ্ধ অবস্থান গড়ে তোলার লক্ষ্যে ৫৭ সদস্যের রাজ্যগুলোর মধ্যে ওআইসি সম্মেলনের আয়োজন করেছিলেন।
ফিলিস্তিনি ভাই ও বোনদের জমি ও সার্বভৌম অধিকার ফিরিয়ে আনতে, মুসলিম উম্মাহর মর্যাদা ও অধিকার রক্ষা ও মুসলিম বিশ্বের জনগণের মধ্যে একাত্মতা ও সহযোগিতা জোরদার করার জন্য ওআইসির সাহায্য চেয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ফিলিস্তিনের প্রশ্ন এখনো অব্যাহত রয়েছে এবং মুসলিম জাতি ও সম্প্রদায় এখনো বিভক্ত।
শেখ হাসিনা বলেন, ইসলামিক ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকসহ ওআইসিভুক্ত অন্যান্য প্রতিষ্ঠানগুলোর সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করা প্রয়োজন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ইসলামী বিশ্বের বাজারজাত পণ্য ও পরিষেবাদিতে নতুন নতুন বিষয় উদ্ভাবনের আহ্বান জানান। তিনি ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অফ টেকনোলজি (আইটিটি) চালু করার জন্য সবাইকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন, যা বাংলাদেশ সেরা হিসেবে হোস্টিং করছে।
এ সময় বাংলাদেশ পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হকের পক্ষে ওআইআইসির ডিরেক্টর জেনারেলের পদে ভোট দেয়ার জন্য সদস্যদের সমর্থন চান প্রধানমন্ত্রী। 
১৯৬৯ সালের ২১ আগস্ট জেরুজালেমে আল-আকসা মসজিদে অগ্নিসংযোগের পর ওআইসি প্রথম সম্মেলন আহ্বান করে। 

শেয়ার করুন

0 comments:

পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়