Thursday, May 23

প্রিয়নবীর প্রিয় আমল ইতেকাফ

শামসুর রহমান পোরশা::
ইতেকাফ আরবি শব্দ। এর শাব্দিক অর্থ এক স্থানে বসা বা অবস্থান করা। শরিয়তের পরিভাষায় আল্লাহপাকের সন্তুষ্টি লাভের লক্ষ্যে নিজেকে আটক রাখা তথা রোজাসহ মসজিদে অবস্থান করাকে ইতেকাফ বলে
ইতেকাফ রমজান মাসের অন্যতম একটি ইবাদত। মহানবী (সা.) প্রতি বছর ইতেকাফ করতেন। এটি আল্লাহপাকের নৈকট্য লাভের উৎকৃষ্ট হাতিয়ার। এছাড়া রমজান মাসে রয়েছে এমন এক রজনি, যা সহস্র মাস থেকে উত্তম। সেই রজনির পূর্ণ সওয়াব হাসিল করার জন্য ইতেকাফের গুরুত্ব ও উপকারিতা অপরিসীম।
ইতেকাফের অর্থ : ইতেকাফ আরবি শব্দ। এর শাব্দিক অর্থ এক স্থানে বসা বা অবস্থান করা। শরিয়তের পরিভাষায় আল্লাহপাকের সন্তুষ্টি লাভের লক্ষ্যে নিজেকে আটক রাখা তথা রোজাসহ মসজিদে অবস্থান করাকে ইতেকাফ বলে।
ইতেকাফের প্রকার : ইতেকাফ তিন প্রকার। যথাÑ 
১. ওয়াজিব ইতেকাফ। যদি কেউ কোনো কারণে ইতেকাফের মানত করে, চাই মানত শর্তহীন হোক বা শর্তের সঙ্গে হোক। এ ধরনের ইতেকাফ রোজাসহ আদায় করা ওয়াজিব। 
২. সুন্নত ইতেকাফ। রমজানের শেষ ১০ দশকে ঈদুল ফিতরের চাঁদ ওঠা পর্যন্ত যে ইতেকাফ করা হয় তা হচ্ছে সুন্নতে মুআক্কাদা। এ ইতেকাফ এলাকাবাসীর ওপর সুন্নতে মুআক্কাদায়ে কেফায়া। এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে যে কেউ আদায় করলে সবার পক্ষ থেকে আদায় হয়ে যাবে। তবে যদি কেউ আদায় না করে, তাহলে সবাই গোনাহগার হবে। এ ইতেকাফ রাসুল (সা.) মদিনায় আগমনের পর প্রত্যেক বছর করেছেন। শুধু এক বছর ওজরবশত তিনি ইতেকাফ করতে পারেননি। সেজন্য রাসুল (সা.) পরের বছর বিশ দিন ইতেকাফ করেন। (তিরমিজ : ১/১৬৫)।
৩. মুস্তাহাব ইতেকাফ। রমজানের শেষ ১০ দিন ছাড়া অন্য যে কোনো সময় ইতেকাফ করা মুস্তাহাব। মুস্তাহাব ইতেকাফের জন্য রোজা এবং নির্দিষ্ট কোনো সময় শর্ত নয়। এ জাতীয় ইতেকাফ সামান্য সময় কিংবা দীর্ঘ সময়ের জন্য করা যায়। তাই মসজিদে প্রবেশের সময় ইতেকাফের নিয়ত করা উচিত, এতে ইতেকাফের সওয়াবও হবে।
মহিলাদের ইতেকাফ : হাদিসে হজরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী করিম (সা.) তিরোধানের পূর্ব অবধি রমজানের শেষ দশকে ইতেকাফ করতেন। তারপর তাঁর স্ত্রীরা ইতেকাফ করেছেন। (বোখারি : ১/২৭১)।
এ হাদিসের শেষ অংশ থেকে প্রতীয়মান হয়, রাসুল (সা.) এর ওফাতের পর তাঁর সহধর্মিণীরা ইতেকাফ করতেন। এজন্য ফুকাহায়ে কেরাম বলেন, মহিলাদের জন্য গৃহকোণে নামাজের স্থানে ইতেকাফ করা মুস্তাহাব। তারা প্রয়োজন ছাড়া সেখান থেকে বের হবে না। তবে সন্তান প্রসব করলে বা গর্ভপাত হলে কিংবা ঋতুস্রাব দেখা দিলে ইতেকাফ ছেড়ে দিতে হবে। 
ইতেকাফ অবস্থায় করণীয় : ইতেকাফ অবস্থায় আল্লাহর জিকির, তাসবিহ, ইস্তেগফার, দরুদ, কোরআন তেলাওয়াত ও জ্ঞানচর্চা করা মুস্তাহাব। মসজিদে থেকে করা সম্ভব এমন সব ইবাদতই ইতেকাফ অবস্থায় করা যায়।
ইতেকাফের ফজিলত : ইতেকাফের ফজিলত সংক্রান্ত অনেক হাদিস বর্ণিত হয়েছে। হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বিধৃত, রাসুল (সা.) ইতেকাফকারীদের সম্পর্কে বলেছেনÑ ‘ইতেকাফকারী  গোনাহগুলো থেকে বিরত থাকে এবং তার জন্য নেকিগুলো লেখা হয় ওই ব্যক্তি মতো, যে বাইরে থেকে যাবতীয় সব কাজ করে।’ (ইবনে মাজাহ)।
অপর হাদিসে আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি মাহে রমজানের শেষ ১০ দিন ইতেকাফ করবে, তার আমলনামায় দুটি হজ ও দুটি ওমরার সওয়াব লিখে দেওয়া হবে।’ (বায়হাকি)।
এছাড়াও বহু হাদিসে ইতেকাফের ফজিলত বিধৃত হয়েছে। তাই আসুন আমরাও ইতেকাফের মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য লাভের সাধনায় আত্মনিয়োগ করি। 
লেখক : মুফতি, দেওপুরা সমনগর আনওয়ারুল উলুম মাদ্রাসা, পোরশা, নওগাঁ

শেয়ার করুন

0 comments:

পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়