Thursday, February 7

পৃথিবীর শেষ প্রান্তে হেঁটে যেতে কত সময় লাগবে?

কানাইঘাট নিউজ ডেস্ক:

আমাদের মনে একটা প্রশ্ন সব সময় ঘুরপাক খায় আর তা হচ্ছে এই পৃথিবীর শেষ প্রান্ত কোথায়? আর কী আছে সেই শেষ প্রান্তে? একজন মানুষের পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে যেতে কতক্ষণ সময় লাগবে? এই কারণটা একজন মানুষের পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে যেতে হয়তো আজীবন লেগে যাবে। 

যদিও এই কথাটা সত্যি কিন্তু আসল কারণটা হলো আমরা যদি মহাবিশ্বের বাইরে দিকে একটা সরলরেখা ধরে ক্রমাগত বিরামহীনভাবে অনন্তকাল ধরে যেতে থাকি তারপরও আমাদের পক্ষে কখনোই মহাবিশ্বের শেষ সীমানায় পৌঁছানো সম্ভব হবে না। বরং আমরা যে জায়গা থেকে শুরু করেছিলাম সেখানে আবার ফিরে আসার সম্ভাবনা রয়েছে। একটি উদাহরণের মাধ্যমে আমরা খুব সহজেই পৃথিবীর সীমানা বের করতে পারবো। 
ধরুন আপনি একটি ফুটবল হাতে নিলেন এবং সেই ফুটবল এর উপর একটি পিঁপড়া ছেড়ে দিলেন, আর পিঁপড়াকে বললেন এই ফুটবলের শেষ সীমানা খুঁজে বের করো। আসলে সেটা কি কখনো ফুটবল এর শেষ সীমানা খুঁজে বের করতে পারবে? কোনদিনও না, কারণ গোলাকার জিনিসের শেষ সীমানা খুঁজে বের করা সম্ভব নয়। আসলে মানুষ কেন পৃথিবীর শেষ প্রান্তে পৌঁছাতে পারে না, তার কারণ হলো আইনস্টাইনের আপেক্ষিকতার সূত্র সাথে যদি আমরা সামাঞ্জস্য করি তাহলে বুঝতে পারব যে, স্পেসটা অদ্ভুতভাবে বাঁকানো বা মোচড়ানো, যেটা আমাদের পক্ষে সঠিকভাবে কল্পনা করা সম্ভব হয় না। 
সহজ করে বলা যায়, মহাবিশ্বটা বিশাল এবং নিরন্তর প্রসারিত হচ্ছে। এমন কোনো বুদবুদের ভেতর ভেসে বেড়াচ্ছে না। আমরা যখন বলি যে স্পেস প্রসারিত হচ্ছে আসলে সেটা ভুল। বিখ্যাত পদার্থবিজ্ঞানী এবং নোবেল পুরস্কার বিজয়ী স্টেফেব ওয়াইন বারগের ভাষায় সৌরজগৎ বা তারকালোকগুলো প্রসারিত হচ্ছে না এবং স্পেস নিজেও প্রসারিত হচ্ছে না। বরং তারকালোকগুলো একে অপর থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। মহাবিশ্বটা একি সঙ্গে বাউন্টলেস কিন্তু ফাইনাইট। এটা বোধগম্য করা আমাদের অন্তরজ্ঞানের জন্য একটা বিশাল চ্যালেঞ্জ। 
জীববিজ্ঞানী জেভিএস হ্যান্ডেল মজা করে বলেছিলেন, মহাবিশ্বটা আসলে আমরা যতটুকু ভাবি সেটা তার থেকেও অনেক  বেশি অস্বাভাবিক। বা যতটুকু আমাদের ইম্যাজিন করার ক্ষমতা আছে তার থেকেও অনেক বেশি অস্বাভাবিক। স্পেসের বক্রতার ব্যাপারটা ব্যাখ্যার জন্য একটা উদাহরণ ব্যবহার করা যেতে পারে। ধরুন এমন একজন লোক যে কিনা একটা সমতল পৃথিবীতে বাস করে এবং জীবনে কখনো কোন গোলাকার জিনিস দেখেনি। তাকে যদি আমাদের পৃথিবীতে এনে ছেড়ে দেয়া হয় এবং সে আমাদের পৃথিবীর শেষ সীমানায় পৌঁছানোর জন্য হাঁটা শুরু করে তবে সে কোনদিনও খুঁজে পাবে না। সে হয়তো একসময় যেখান থেকে শুরু করেছিলেন সেখানে আবার ফিরে আসবে। 
এই ব্যাপারটা নিঃসন্দেহে তাকে কিংকর্তব্যবিমূঢ় করে ফেলবে। সে কিছুতেই বুঝে উঠতে পারবে না এটা কিভাবে সম্ভব। আমরা হচ্ছি আরও উঁচু মাত্রার স্পেস এর মধ্যে সেই সমতল ভূমির হতবুদ্ধির মানুষটির মতো। মহাবিশ্বের এরকম কোনো স্থান নেই যেখানে আমরা দাঁড়িয়ে বলতে পারব এটা হচ্ছে এর শেষ সীমানা সে রকম কোনো কেন্দ্র ও নাই যেখানে দাঁড়িয়ে আমরা বলতে পারব এটাই হচ্ছে এর শেষ সীমানা। সেই রকম কোন কেন্দ্রও নাই যেখানে দাড়িয়ে আমরা বলতে পারব যে এইতাই হচ্ছে সেই জায়গা যেখান থেকে সবকিছুর শুরু হয়েছিল বা এটাই হচ্ছে মহাবিশ্বের আমাদের কেন্দ্রবিন্দু। 
আমাদের জন্য মহাবিশ্বটা ততদূর লম্বা যতদূর পর্যন্ত আলো মহাবিশ্ব সৃষ্টির পর থেকে আজ পর্যন্ত পৌঁছাতে পেরেছে। এই দৃশ্যমান বিশ্ব যেটা সম্পর্কে আমরা জানি বা যেটা নিয়ে কথা বলতে পারি মিলিয়ন মিলিয়ন মাইলব্যাপী বিস্তৃত। এরপরে আরো যা আছে সেটার হিসেব হয়তো সংখ্যা দিয়ে প্রকাশ করা যাবে না। আসলে সবই হচ্ছে একমাত্র মহান রাব্বুল আলামিনের ইচ্ছা আর তার ক্ষমতা। 

শেয়ার করুন

0 comments:

পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়