Sunday, July 29

কানাইঘাটে বালু উত্তোলনকারী ড্রেজারে আগুন,সিলিন্ডার বিস্ফোরণে ২জনের অবস্থা আশংকাজনক

নিজস্ব প্রতিবেদক: কানাইঘাটে সুরমা নদী থেকে ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলণ নিয়ে ফের রবিবার অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেছে। এলাকার কিছু বিক্ষুদ্ধ লোকজন বালু উত্তোলণের ২ টি ড্রেজারে আগুন ধরিয়ে দিলে একটি ড্রেজারে থাকা রান্নার গ্যাস সিলিন্ডার বিষ্ফোরিত হয়ে কয়েকজন রক্তাক্ত আহত হন। আহতদের মধ্যে নিজ দলইকান্দি নয়াগ্রামের দরিদ্র মৎস্যজীবি রঞ্জন দাসের পুত্র সুকান্ত দাস শিশু (১৮) একই গ্রামের পরিন্দ্র দাসের পুত্র অজয় দাস (১২) গুরুতর আহত হলে তাদেরকে আশংকাজনক অবস্থায় সিওমেক হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পর উন্নত চিকিৎসার জন্য সুকান্ত দাস শিশু কে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে বলে জানা গেছে। ২টি ড্রেজারে অগ্নি সংযোগের ফলে গ্যাস সিলিন্ডার বিকট শব্দে বিষ্ফোরিত হলে আশপাশ এলাকা কেঁপে উঠে বলে স্থানীয় লোকজন "কানাইঘাট নিউজকে" জানান। এ সময় বিষ্ফোরণে একটি ড্রেজারের কিছু যন্ত্রপাতি আশপাশ এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে কয়েকজন আহত হন। গাছবাড়ী বাজারের ব্যবসায়ী, পথচারী সহ আশপাশ গ্রামের লোকজন আতঙ্কিত হয়ে এদিক সেদিক ছুটাছুটি করতে থাকেন। জানা যায়, আজ রবিবার দুপুর ১২টার দিকে কানাইঘাট সুরমা নদীর মারাত্মক ভাঙ্গনপ্রবণ এলাকা গাছবাড়ী বাজার সংলগ্ন নিজ দলইকান্দি বালু মহাল এলাকা থেকে কয়েকটি ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলণের সময় বানীগ্রাম ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আফতাব উদ্দিন সহ নদীর তীরবর্তী এলাকার লোকজন বিক্ষুব্ধ হয়ে বালু উত্তোলণকারী শ্রমিকদের পিটিয়ে আহত করে ২টি ড্রেজার আটক করে রাখেন। এ খবর পেয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তানিয়া সুলতানা  দেড় টার দিকে ঘটনাস্থলে পৌঁছে সরেজমিন তদন্ত করেন। তদন্ত শেষে তিনি স্থানীয় ইউনিয়ন ভূমি অফিসের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদেরকে আটককৃত ২টি ড্রেজার যাতে বালু উত্তোলন করতে না পারে সেই জন্য আংশিক যন্ত্রপাতি ভেংগে ফেলার নির্দেশ দেন। কিন্তু নির্বাহী কর্মকর্তা ঘটনাস্থল থেকে চলে আসার পর ইউপি সদস্য আফতাব উদ্দিন সহ বেশ কিছু বিক্ষুব্ধ লোকজন ২টি ড্রেজারের ইঞ্জিনে আগুন ধরিয়ে দিলে ধীরে ধীরে আগুন সমস্ত ড্রেজারে ছড়িয়ে পড়ে। এক পর্যায়ে বিকেল ৪টার দিকে একটি ড্রেজারে থাকা গ্যাস সিলিন্ডার বিষ্ফোরিত হলে এ দূর্ঘটনাটি ঘটে। খবর পেয়ে সিলেট ফায়ার সার্ভিসের একটি দল সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে ঘটনাস্থলে এসে একটি ড্রেজারের আগুন নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসলেও পুড়িয়ে যাওয়া অপর ড্রেজারটি নদী গর্ভে তলিয়ে গেছে। ২টি ড্রেজারে অগ্নি সংযোগের ফলে প্রায় কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে মালিক পক্ষের লোকজন জানিয়েছেন। নিজ দলইকান্দি বালু মহাল থেকে বালু উত্তোলন নিয়ে পরস্পর বিরোধী বক্তব্য পাওয়া গেছে। রবিবার দুপুরের দিকে বালু মহালের বৈধ ইজারাদার দাবীদার জাবের আশরাফ চৌধুরীর পক্ষে সাবেক ইউপি সদস্য রফিক আহমদ সহ এলাকার কিছু প্রভাবশালী লোকজন মহাল থেকে ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলণ শুরু করলে নদী ভাঙ্গন কবলিত এলাকার লোকজন এবং স্থানীয় ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তা নুরুল আমিন জাবের আশরাফ চৌধুরী বালু মহালের বৈধ ইজাদার নয় বলে জানান। তিনি বলেন বালু ব্যবসায়ী আফতাব মিয়া উক্ত বালু মহালের বৈধ ইজারাদার। এজন্য জাবের আশরাফ চৌধুরীর লোকজনদের বালু উত্তোলণ বন্ধ করতে বলেন। এ সময় স্থানীয় লোকজন ২টি ড্রেজার জোর পূর্বক ভাবে আটক করে রাখলে সৃষ্ট ঘটনাটি ঘটে। অপর দিকে বালু ব্যবসায়ী জাবের আশরাফ চৌধুরী জানিয়েছেন, তিনি মহামান্য হাইকোর্টের একটি রীটের প্রেক্ষিতে তিনি নিজ দলইকান্দি বালু মহালের বৈধ ইজারাদার। তার লোকজন ড্রেজার নিয়ে বালু উত্তোলণ কালে ক্ষতিপয় লোকজন ২টি ড্রেজার আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেড়কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি সাধিত করেছে। এ ঘটনায় তিনি আইনের আশ্রয় নিবেন বলে জানান। এব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তানিয়া সুলতানার সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন নিজ দলইকান্দি বালু মহাল থেকে অবৈধভাবে ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলণ কালে ২টি ড্রেজার লোকজন আটক করেন। খবর পেয়ে আমি ঘটনাস্থলে গিয়ে শান্তি শৃংখলা রক্ষা করি এবং যাতে করে ড্রেজার দিয়ে পুণরায় সেখান থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলণ করতে না পারে এ জন্য ইউনিয়ন ভূমি অফিসের লোকজনদের ড্রেজারের আংশিক যন্ত্রপাতি ভেংগে ফেলার নির্দেশ দেই। পরবর্তীতে উত্তেজিত উশৃংখল কিছু সংখ্যক লোক ড্রেজারে আগুন ধরিয়ে দেওয়ার ঘটনাটি অত্যন্ত দুঃখ জনক। এ দুঃখজনক ঘটনায় যারা আহত হয়েছেন তাদের পরিবারের প্রতি তিনি সমবেদনা জানিয়ে বলেন তদন্ত পূর্বক এঘটনার সাথে জড়িত দোষি ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। 

 কানাইঘাট নিউজ ডটকম/২৯জুলাই ২০১৮ ইং।

শেয়ার করুন

0 comments:

পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়