Friday, June 9

রোজা রাখার ফল

রোজা রাখার ফল

কানাইঘাট নিউজ ডেস্ক: বুখারী শরীফে বর্ণিত এক হাদিসে আছে, হজরত আবূ হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, রোজা ঢাল স্বরূপ।

সুতরাং রোজা অবস্থায় যেন অশ্লীলতা থেকে বিরত থাকে এবং অজ্ঞ মূর্খের মতো কাজ না করে। কেউ যদি ঝগড়া-ফ্যাসাদ করতে চায় অথবা গালি দেয় তবে সে যেন দুইবার বলে, আমি রোজাদার। অবশ্যই রোজাদারের মুখের দুর্গন্ধ আল্লাহর নিকট মিশকের ঘ্রাণের চেয়েও অধিক উৎকৃষ্ট।

সে আমারই জন্য পানাহার এবং কাম প্রবৃ্িত্ত পরিত্যাগ করে। রোজা আমারই জন্য, তাই এর পুরষ্কার আমি নিজেই দান করব। আর প্রত্যেক নেক কাজের বিনিময় দশগুণ।

অপর এক হাদীসে আছে, নবী করীম (সা.) বলেন, জান্নাতের মধ্যে রাইয়্যান নামক একটি দরজা আছে। এ দরজা দিয়ে কেবলমাত্র কিয়ামতের দিন রোজাদার লোকেরাই প্রবেশ করবে। তাদের ছাড়া আর কেউ এ দরজা দিয়ে প্রবেশ করবে না।

ঘোষণা দেওয়া হবে, রোজাদার লোকেরা কোথায় তখন তারা দাঁড়াবে। তাদের ছাড়া আর কেউ এ দরজা দিয়ে প্রবেশ করবে না। তাদের প্রবেশের পরই দরজা বন্ধ করে দেওয়া হবে। যাতে এ দরজা দিয়ে আর কেউ প্রবেশ না করে।

এছাড়া হজরত আবদুল্লাহ্ ইবন আমর (রা.) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ্ (সা.) বলেন, রোজা এবং কুরআন বান্দার জন্য সুপারিশ করবে। রোজা বলবে, ‘হে রব! আমি তাকে দিনের বেলা পানাহার ও যৌনক্রিয়া থেকে বিরত রেখেছি। তার সম্পর্কে আমার সুপারিশ কবুল করুন।’ কুরআন বলবে, ‘আমি তাকে রাতে নিদ্রা থেকে বিরত রেখেছি। তার সম্পর্কে আমার সুপারিশ কবুল করুন।’ তখন এদের সুপারিশ কবুল করা হবে।

রোজা রাখার উপকারিতা: রোজার মধ্যে অনেক উপকারিতা নিহিত আছে। এগুলো সম্পর্কে মাওলানা আশরাফ আলী থানভী (র.) ‘আহ্কামে ইসলাম আকল কী নযর মে’ নামক গ্রন্থে দীর্ঘ আলোকপাত করেছেন। এর মধ্যে থেকে কিছু বিষয় নিম্নে উল্লেখ করা হল:-

১. রোজার দ্বারা প্রবৃত্তির উপর আকলের পরিপূর্ণ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠিত হয়। অর্থাৎ এর দ্বারা মানুষের পাশবিক শক্তি অবদমিত হয় এবং রূহানী শক্তি বৃদ্ধি পায়। কেননা ক্ষুধা ও পিপাসার কারণে মানুষের জৈবিক ও পাশবিক ইচ্ছা হ্রাস পায়। এতে মনুষ্যত্ব জাগ্রত হয় এবং অন্তর বিগলিত হয় মহান আল্লাহ্ রাব্বুল আলামীনের প্রতি কৃতজ্ঞতায়।

২. রোজা দ্বারা মানুষের অন্তরে আল্লাহর ভয়-ভীতি এবং তাক্ওয়ার গুণ সৃষ্টি হয়। এ কারণেই আল্লাহ্ তাআলা বলেছেন, যাতে তোমরা তাক্ওয়ার গুণ অর্জন করতে সক্ষম হও।

৩. রোজার দ্বারা মানুষের স্বভাবে নম্রতা ও বিনয় সৃষ্টি হয় এবং মানব মনে আল্লাহর আজমত ও মহানত্বের ধারণা জাগ্রত হয়।

৪. মানুষের দূরদর্শিতা আরো প্রখর হয়।

৫. রোজার দ্বারা মানব মনে এমন এক নূরানী শক্তি সৃষ্টি হয়, যার দ্বারা মানুষ সৃষ্টির এবং বস্তুর গুঢ় রহস্য সম্বন্ধে অবগত হতে সক্ষম হয়।

৬. রোজার বরকতে মানুষ ফেরেশতা চরিত্রের কাছাকাছি পৌঁছতে পারে।

৭. রোজার বরকতে মানুষের মধ্যে ভ্রাতৃত্ব ও মমত্ববোধ এবং পরস্পরের প্রতি ভালবাসা সৃষ্টি হয়। কেননা যে ব্যক্তি কোনোদিনও ক্ষুধার্ত ও পিপাসিত থাকেনি সে কখনো ক্ষুধার্ত মানুষের দুঃখ, কষ্ট বুঝতে পারে না। অপর দিকে কোনো ব্যক্তি যখন রোজা রাখে এবং উপবাস থাকে তখন সে যথাযথভাবে উপলব্ধি করতে পারে যে, যারা অনাহারে-অর্ধাহারে দিন কাটাচ্ছে, তারা যে কত দুঃখ-কষ্টে দিনাতিপাত করছে। আর তখনই অনাহারক্লিষ্ট মানুষের প্রতি তার অন্তরে সহানুভূতির উদ্রেক হয়।

৮. রোজা পালন করা আল্লাহর প্রতি গভীর মহব্বতের অন্যতম নিদর্শন। কেননা কারো প্রতি মহব্বত জন্ম নিলে, তাকে লাভ করার জন্য প্রয়োজনে প্রেমিক পানাহার বর্জন করে এবং সব কিছুকে ভুলে যায়। ঠিক তেমনিভাবে রোজাদার ব্যক্তিও আল্লাহর মহব্বতে দেওয়ানা হয়ে সবকিছু ছেড়ে দেয়। এমনকি পানাহার পর্যন্ত ভুলে যায়। তাই রোজা হলো, আল্লাহর মহব্বতের অন্যতম নিদর্শন।

৯. রোজা মানুষের জন্য ঢালস্বরূপ। তাই রোজা মানুষকে শয়তানের আক্রমণ থেকে হিফাজত করে।

১০. রোজা দ্বারা মানুষের শরীরিক সুস্থতা হাসিল হয়। স্বাস্থ্যবিজ্ঞানীদের মতে, প্রত্যেক মানুষের জন্য বছরে কয়েকদিন উপবাস থাকা অবশ্যক। তাদের মতে, স্বল্প খাদ্যগ্রহণ স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী।

শেয়ার করুন

0 comments:

পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়