Saturday, June 17

ইতেকাফের গুরুত্ব ও ফজিলত

ইতেকাফের গুরুত্ব ও ফজিলত
কানাইঘাট নিউজ ডেস্ক: পবিত্র মাহে রমজানের শেষ দশকের কোন এক রজনীতে পবিত্র কুরআন মাজিদ নাযিল করা হয়। আর এ রজনীই লাইলাতুল কদর নামে পরিচিত। তবে ঠিক কোর তারিখে কুরআন নাযিল হয়েছে এটি রাসুল (দ) স্পষ্টভাবে বলে যাননি। শুধু এটুকু বলে গেছেন শেষ দশকের কথা। আল্লাহ বলেছেন, ‘নিশ্চয় আমি ইহা (কুরআন ) নাযিল করেছি পবিত্র রজনীতে (কদরের রাতে)।’

আর এ রাতের গুরুত্ব আল্লাহ নিজেই বর্ণনা করেছে সুরা কদরে। তিনি বলেন, ‘লাইলাতুল কদর হচ্ছে এমন রজনী যা হাজার মাসের চেয়েও উত্তম।’ এতে বুঝা যায় এ রজনীতে ইবাদত করলে সাধারন হাজার মাস ইবাদত করার চেয়ে উত্তম।

এখন প্রশ্ন হচ্ছে এ রজনী যেহেতু নির্ধারিত কোন তারিখ বলা হয়নি, তাই রমজানের শেষ দশ দিনের কোন এক রজনী হতে পারে। তাই এ রজনীর সুভাগ্য পেতে আল্লাহর রাসুল রমজান মাসের শেষ দশ দিন ইতেকাফ করতেন। এ রজনী তালাশ করা প্রত্যেক উম্মতের জন্য কর্তব্য। তবে ইতেকাফ করা সুন্নতে মুয়াক্কাদা আল কেফায়া। এটি সবাইকে পালন না করলেও মহল্লাবাসীদের মধ্যে কোন একজনকে আদায় করা ওয়াজিব। অন্যথায় সবাই গোনাগার হবেন।

ইতেকাফের ফজিলত ও গুরুত্ব :
ইতেকাফের গুরুত্ব সম্পর্কে রাসূল (সা.) ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি মাহে রমজানের শেষ ১০ দিন ইতেকাফ করবে, সে ব্যক্তি দুটি পবিত্র হজ ও দুটি পবিত্র উমরার সমপরিমাণ সওয়াব লাভ করবে।

রাসূল (সা.) আরও বলেছেন, ইতেকাফকারী গুনাহ থেকে বেঁচে থাকে এবং আমল না করেও তারা আমলকারীদের নেকির পরিমাণ নেকির মালিক হয়।–তিরমিযি

হজরত আয়েশা (রা.) বর্ণনা করেন, রাসূল (সা.) দুনিয়াতে যতদিন জীবিত ছিলেন, ততদিন রমজানের শেষ ১০ দিন মসজিদে ইতেকাফ করেছেন। জীবিত থাকাকালীন কোনো রমজানের শেষ ১০ দিন ইতেকাফ বাদ দেননি। -বুখারি, মুসলিম।

ইতেকাফের প্রকারভেদ:
ইতেকাফ প্রধানত তিন প্রকার। যেমন- ১. ওয়াজিব ইতেকাফ, ২. সুন্নাত ইতেকাফ ও ৩. মুস্তাহাব ইতেকাফ। ক. ওয়াজিব ইতেকাফ : মান্নতের ইতেকাফ ওয়াজিব। চাই তা শর্তে হোক কিংবা হোক বিনা শর্তে। শর্তে হবার অর্থ হচ্ছে, কারো একথা বলা, আমার অমুক উদ্দেশ্য হাসিল হলে আমি ইতেকাফ করবো। ওয়াজিব ইতেকাফ কমপক্ষে একদিন হতে হবে। ওয়াজিব ইতেকাফের জন্য রোজা রাখা শর্ত।

হাদিসে আছে, হযরত ওমর (রা.) একদিন রাসূলকে (সা.) বললেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ! জাহেলী যুগে আমি মসজিদে হারামে এক রাত ইতেকাফ করার মান্নত করেছিলাম। হুজুর (সা.) বললেন, তোমার মান্নত পূর্ণ করো। (বুখারী) খ. সুন্নাত ইতেকাফ : রমজান মাসের শেষ দশদিনের ইতেকাফ হচ্ছে সুন্নত। (কেবলমাত্র হানাফী মাযহাবে রমজানের শেষ দশ দিনের) এ ইতেকাফ হচ্ছে সুন্নতে মুয়াক্কাদা। তবে কিছু সংখ্যক লোক ইতেকাফ করলে অন্যরা দায়িত্বমুক্ত হবে বলে এ মযহাবের রায়। হযরত আয়েশা (রা.) বলেন, হুযুর (স) সব সময় রমজানের শেষ দশদিন ইতেকাফ করতেন। ইন্তেকাল পর্যন্ত এ নিয়ম তিনি পালন করেছেন।

তার ইন্তেকালের পর তার স্ত্রীগণ ইতেকাফের সিলসিলা জারি রাখেন। (বুখারী) গ. মুস্তাহাব ইতেকাফ : রমজানের শেষ দশ দিন ব্যতীত অন্য যে কোনো সময় ইতেকাফ করা মুস্তাহাব। মুস্তাহাব ইতেকাফের জন্য কোনো সময় নির্দিষ্ট নেই। এ ইতেকাফ সামান্য সময়ের জন্যও হতে পারে কিংবা এক দিন বা একাধিক দিনের জন্যও হতে পারে।

ইতেকাফের শর্তাবলী : ১. মুসলমান হওয়া। ২. বালেগ ও আকেল হওয়া। ৩. পবিত্র থাকা। ৪. ইতেকাফের নিয়ত করা। ৫. পূর্ণাঙ্গ সময় (আবশ্যকীয় প্রয়োজন ব্যতীত) মসজিদে অবস্থান করা ইত্যাদি।

ইতেকাফ অবস্থায় করণীয়: ইতেকাফ অবস্থায় আল্লাহর জিকির, তাসবিহ, ইস্তেগফার, দরূদ, কুরআন তিলাওয়াত ও জ্ঞানচর্চা করা মুস্তাহাব। মসজিদে থেকে করা সম্ভব এমন সব ইবাদতই ইতেকাফ অবস্থায় করা যায়।

নারীদের ইতেকাফ : হাদিস থেকে জানা যায, নারীরাও ইতেকাফ করতে পারে। নারীদের ইতেকাফ গৃহকোণে (নামাজের স্থানে) বাঞ্ছনীয়। নারীদের ইতেকাফের জন্য স্বামীর অনুমতি আবশ্যক। সন্তান প্রসব করলে বা গর্ভপাত হলে কিংবা ঋতুরাব দেখা দিলে ইতেকাফ ছেড়ে দিতে হবে।

ইতেকাফ বাতিল হয়ে যায় যেসব কারণে : ১. মসজিদ বা ইতেকাফের স্থান থেকে নিস্প্রয়োজনে বের হলে। ২. ইসলাম পরিত্যাগ করলে। ৩. অজ্ঞান, পাগল বা মাতাল হলে| ৪. মাসিক দেখা দিলে। ৫. সন্তান ভূমিষ্ট হলে বা গর্ভপাত হলে। ৬. সহবাস করলে। ৭. বীর্যপাত ঘটালে। ৮. মুতাকিফকে কেউ জোরপূর্বক মসজিদে থেকে বের করে দিলেও ইতেকাফ বাতিল হয়ে যাবে।

শেয়ার করুন

0 comments:

পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়