Sunday, July 24

কানাইঘাট সুরমা নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন


নিজস্ব প্রতিবেদক: সিলেটের কানাইঘাট সুরমা নদীর মারাত্মক ভাঙ্গন কবলিত তালবাড়ী বাজারের পাশ থেকে আবারো সম্পূর্ণ অবৈধ ভাবে পরিবেশ বিধ্বংসি শক্তিশালী একাধিক ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলন করছেন এলাকার প্রভাবশালী জাবের আশরাফ চৌধুরী। সুরমা নদীর ভাঙ্গন কবলিত তীরবর্তী এলাকা থেকে অবৈধ ভাবে বালু উত্তোলনে যারা প্রতিবাদ করছেন তাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানী, হামলা, নির্যাতন করছেন জাবের আশরাফ গংরা। মামলার আসামী হয়ে স্থানীয় আ’লীগের নেতাকর্মীরা হয়রানীর স্বীকার হচ্ছেন। অবৈধ ভাবে বালু উত্তোলনের বিরুদ্ধে স্থানীয় প্রশাসন কোন ধরনের প্রদক্ষেপ গ্রহণ না করায় বালু উত্তোলনকারী জাবের আশরাফ চৌধুরী বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন। এলাকাবাসীর কাছ থেকে জানা যায়, সিলেট-৫ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য কেন্দ্রীয় জামায়াত নেতা অধ্যক্ষ মাওঃ ফরিদ উদ্দিন চৌধুরীর চাচাতো ভাই স্থানীয় তালবাড়ী গ্রামের বাসিন্দা এক সময় শিবিরের রাজনীতির সাথে জড়িত জাবের আশরাফ চৌধুরী একজন ভূমি খেকো বালু ব্যবসায়ী হিসাবে এলাকায় পরিচিত। অবৈধ ভাবে তিনি বিভিন্ন সময়ে শক্তিশালী পরিবেশ বিধ্বংসি একাধিক ড্রেজার মেশিন দিয়ে সুরমা নদী থেকে লক্ষ লক্ষ টাকার বালু উত্তোলন করে পূর্বে বিক্রি করেছিলেন। এর আগে ২০১১ সালে তালবাড়ী গ্রাম ও বাজার এলাকা থেকে অবৈধ ভাবে ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলনের দায়ে জাবের আশরাফ চৌধুরীর বিরুদ্ধে সরকারের রাজস্ব ফাঁকি দেওয়ায় ৪৪ লক্ষ টাকার মামলা দায়ের করেছিলেন স্থানীয় ঝিঙ্গাবাড়ী ইউনিয়ন ভূমি অফিসের সহকারী কর্মকর্তা সফিকুর রহমান। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তারেক মোহাম্মদ জাকারিয়া দুই বছর পূর্বে সুরমা নদীর তালবাড়ী গ্রাম থেকে অবৈধ ভাবে বালু উত্তোলনের দায়ে জাবের আশরাফ চৌধুরীর ড্রেজার মেশিনগুলো জব্দ করেছিলেন। কিন্তু রহস্য জনক কারনে অদ্যবধি পর্যন্ত অবৈধ ভাবে বালু উত্তোলনকারী জাবের আশরাফ চৌধুরীর বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ভাবে কোন ধরনের প্রদক্ষেপ গ্রহণ না করায় তিনি বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন বলে স্থানীয় এলাকাবাসী জানিয়েছেন। কোন কিছুর তোয়াক্কা না করে সম্প্রতি অনুমানিক ১৫দিন পূর্ব থেকে সুরমা নদীর মারাত্মক ভাঙ্গন কবলিত তালবাড়ী বাজারের পাশ থেকে আবারো ১০টি শক্তিশালী ড্রেজার মেশিন দিয়ে সম্পূর্ণ অবৈধ ভাবে প্রতিদিন হাজার হাজার ঘন ফুট বালু উত্তোলন করে বিক্রি করছেন জাবের আশরাফ চৌধুরী। অবৈধ ভাবে ভাঙ্গন কবলিত এলাকা থেকে বালু উত্তোলনের প্রতিবাদ করায় গত শুক্রবার তালবাড়ী জামে মসজিদে জুমআর নামাযের পর জাবের আশরাফ চৌধুরীর চাচাতো ভাই শিবির নেতা লিমন, আলম, সবুজ গংদের হাতে মসজিদে শারীরিক ভাবে নির্যাতনের শিকার হন তালবাড়ী গ্রামের নিরীহ বালু উত্তোলনে প্রতিবাদকারী বাবুল, জসীম, আবু সুফিয়ান সহ আরো কয়েকজন। এছাড়া অবৈধভাবে ভাঙ্গন কবলিত এলাকা থেকে বালু উত্তোলনে প্রশাসনের অনুমতি আছে কি না জাবের আশরাফ চৌধুরীর কাছে জানতে চাইলে স্থানীয় ৬নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আওয়ামীলীগ নেতা মাওঃ আফাজ উদ্দিন, ৬নং ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের সভাপতি গোলাম আলী সহ ৮ জনের বিরুদ্ধে জাবের আশরাফ চৌধুরী বাদী হয়ে মামলা দিয়ে স্থানীয় আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীদের হয়রানী করছেন। আ’লীগ নেতা মাওঃ আফাজ উদ্দিন জানান, আ’লীগ করেও তারা মিথ্যা মামলা থেকে রেহাই পাচ্ছেন না। প্রশাসনিক ভাবে বালু তোলার অনুমতি আছে কি না জানতে চাওয়ার অপরাধে মিথ্যা একাধিক অভিযোগ এনে আমি সহ আ’লীগের ৮ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে সাবেক শিবির নেতা জাবের আশরাফ চৌধুরী মামলা দিয়ে হয়রানী করছে। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, তালবাড়ী বাজার সহ আশপাশ এলাকা সুরমা নদীর অব্যাহত ভাঙ্গনের মুখে বাজারের দোকানপাট অনেক বাড়ী ঘর নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। এলাকার প্রাচীনতম তালবাড়ী বাজারে একাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, মসজিদ, মাদ্রাসা সহ কবরস্থান রয়েছে। আর মারাত্মক নদী ভাঙ্গন কবলিত তালবাড়ী গ্রাম ও বাজারের আশপাশ থেকে প্রভাবশালী বালু ব্যবসায়ী জাবের আশরাফ চৌধুরী সম্পূর্ণ অবৈধ ভাবে কোন ধরনের বালু উত্তোলনের কাগজপত্র ছাড়াই প্রতিদিন ১০টি শক্তিশালী ড্রেজার মেশিন দিয়ে রাতদিন হাজার হাজার ঘন ফুট বালু উত্তোলন করে সিলেট সহ বিভিন্ন জায়গায় বিক্রি করছে। স্থানীয় এলাকাবাসী ও বাজারের ব্যবসায়ী এবং আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীরা জানিয়েছেন। উক্ত ১০টি ড্রেজার মেশিন দিয়ে পূর্বে রাজাগঞ্জ বালু মহালের খালপার এলাকায় বালু উত্তোলন করেছিলেন জাবের আশরাফ চৌধুরী। সেখান থেকে কয়েক লক্ষ ফুট বালু উত্তোলনের পর সম্পূর্ণ অবৈধ ভাবে তালবাড়ী এলাকা থেকে বালু উত্তোলন শুরু করেছেন তিনি। যেভাবে জাবের আশরাফ চৌধুরী অবৈধ ভাবে বালু উত্তোলন অব্যাহত রাখলে এলাকার অনেক বাড়ীঘর নদীগর্ভে বিলীন এবং সুরমার ভাঙ্গন তীব্র আকার ধারন করবে। যখন ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলন করা হয় তখন পুরো আশপাশ এলাকার বাড়ী ঘর পর্যন্ত ক্ষেপে উঠে। বালু উত্তোলনের প্রতিবাদ করলেই জাবের আশরাফ চৌধুরীর লাঠিয়াল বাহীনি এবং তিনি নিরীহ লোকজনদের মামলা-হামলা দিয়ে হয়রানী করে থাকেন। প্রতিদিন কয়েক লক্ষ টাকার বালু উত্তোলন করা হচ্ছে বলে লোকজন জানান। অবিলম্বে বালু উত্তোলন বন্ধে প্রশাসনকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন নদীর তীরবর্তী লোকজন। এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তারেক মোহাম্মদ জাকারিয়ার সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, হাই কোর্টের প্রেক্ষিতে ৫ মাসের জন্য সুরমা নদীর রাজাগঞ্জ বালু মহাল জাবের আশরাফ চৌধুরীকে লীজ দেওয়া হয়েছে। তালবাড়ী এলাকা থেকে তিনি অবৈধ ভাবে ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলন করলে তার বিরুদ্ধে এ ব্যাপারে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। বালু উত্তোলনকারী জাবের আশরাফ চৌধুরীর সাথে যোগাযোগ করা হলেও তাকে পাওয়া যায় নি। তার সেলফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়।

শেয়ার করুন

1 comment:

  1. নিউজটি আমার দৃষ্টি আকর্ষন করেছে। আমি উক্ত নিউজের প্রেক্ষিতে মাননীয় উপজেলা নির্বাহী অফিসার মহোদয়- কানাইঘাট, মাননীয় অফিসার ইনচার্জ মহোদয়- কানাইঘাট ও সহকারী কমিশনার (ভুমি)- কানাইঘাট মহোদয়কে অবগত করতে চাই যে, বিগত ২০০৮ সাল থেকে সিলেট ৫ আসনের জামাত দলীয় সাবেক সংসদ সদস্য ফরিদ উদ্দিন চৌধুরীর ভাতিজা, জামাতের কেন্দ্রীয় শুরা সদস্য(বর্তমানে টাকা দিয়ে শুনেছি আওয়ামীলীগের সদস্য হয়ে একখানা পদও জোগাড় করেছেন) জাবির আশরাফ চৌধুরী দীর্ঘ ৮ বছর যাবত সিলেট জেলার অন্তর্গত কানাইঘাট থানাধীন "সুরমা নদী বালুমহাল রাজাগঞ্জ" নামীয় বালু মহালটি থেকে প্রতিদিন ১৬/১৮টি শক্তিশালী ড্রেজার দিয়ে অবৈধ-অনিয়মতান্ত্রিক ভাবে বালু উত্তোলন করে আসছে। প্রতি বছরই এলাকাবাসী অবৈধ অনিয়মতান্ত্রিকভাবে বালু উত্তোলনের শান্তিপুর্ন প্রতিবাদ করলে সে এলাকার প্রতিবাদী জনতার উপর তার পালিত শিবির ক্যাডারদের দিয়ে হামলা চালায় এবং প্রতিবাদী লোকজনের বিরুদ্ধে ডাকাতি, ছিনতাই, মারপিট কিংবা চাদাবাজির অহেতুক মিত্যা মামলা দিয়ে অযথা হয়রানিতে ফেলে দেয় যাতে কেউ আর মামলা হামলার ভয়ে প্রতিবাদ না করতে পারে। অবশ্য এই অযথা মামলা দায়েরের আরেকটি অসৎ উদ্দেশ্যও তার আছে। প্রতি বছর সে ঐ মামলার রেফারেন্স নিয়ে মহামান্য উচ্চ আদালত, সরকারের রাজস্ব শাখা কিংবা জেলা প্রশাসক মহোদয়ের নিকট আরতি জানায় যে, জনতার বাধার মুখে সে পুরোটা সময় বালু উঠাতে পারেনি! তাকে যেন পুনরায় লিজ দেয়া হয়। অথচ বালু উত্তোলন তার কোন বছরই একটা দিনের জন্যও মিস হয়নি। প্রতি বছরই সে বৈধ হোক আর অবৈধভাবে হোক, লিজ আনে "সুরমা নদী বালু মহাল রাজাগঞ্জ" নামীয় বালুমহালে কিন্তু ঐ মহাল ছাড়াও সে সম্পুর্ন অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে 'তালবাড়ী' ও 'খালপার' মৌজার অন্তর্গত অন্যান্য সকল বালুচর গুলিতেও। তালবাড়ী (এমপি ফরিদ চৌঃ ও জাবিরের নিজগ্রাম) এবং খালপার(তালবাড়ীর সাথে লাগোয়া গ্রাম) জামাত শিবিরের ঘাটি হওয়ায় লিজ ছাড়াই সে এই দুটি মৌজার বালুচর থেকে বছরের পর বছর বিপুল পরিমান রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে অবৈধ অনিয়মতান্ত্রিকভাবে কোটি কোটি টকার বালু উত্তোলন করে নিচ্ছে। তার প্রতিদিনকার উত্তোলিত বালুর পরিমান প্রায় ২৫/৩০ লক্ষ ঘনফুট যার আর্থিক বাজার মুল্য কমপক্ষে ৭০ লাখ টাকা। আবার অবৈধভাবে অর্জিত সেই টাকা সে বিনিয়োগ করতেছে জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদের পেছনে। তার অর্থায়নেই পরিচালিত হয় অত্র এলাকার জামাত শিবির নিয়ন্ত্রিত সব প্রতিষ্ঠানগুলি, অত্র এলাকায় সংগঠিত নাশকতা, সরকার বিরোধী ষড়যন্ত্র ও জামাত শিবিরের গোপন মিটিং। আপনারা খোজ নিলে জানতে পারবেন অত্র এলাকার প্রশিক্ষিত শিবির ক্যাডার ও জঙ্গি-সন্ত্রাসীদের নিয়ে গঠিত ৪৫/৫০ সদস্যের একটা বাহিনীও আছে। জাবিরের নেতৃত্ব ও অর্থায়নে পরিচালিত সেই বাহিনীকে বলা হয় "জাবির বাহিনী"।
    জনাব, প্রতি বছরের ন্যায় এই বছরও সে জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) শাখা, সিলেট কার্যালয়ের স্মারক নং- ০৫.৬০.৯১০০.০০৮.৫২.০২২.১১১২৮৮(৩)
    তাং- ০৫/০৫/২০১৬ ইং মুলে 'সুরমা নদী বালু মহাল রাজাগঞ্জ' মহালটি লিজ নেয়। গত চৈত্র মাস থেকে অদ্য ভাদ্র মাস পর্যন্ত নিয়মিতভাবে সে রাজাগঞ্জ বালু মহাল সহ অবৈধভাবে তালবাড়ী ও খালপার মৌজার অন্যান্য সব চরগুলি থেকেও ভোর রাত থেকে সন্ধ্যার একঘন্টা পর পর্যন্ত ১৬/১৮টি বড় আকারের ড্রেজার দিয়ে একটানা বালু উত্তোলন করে চলছে। নদীর কিনারে বাড়ী আছে এবং চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত এমন কয়েকজন প্রতিবাদ করেছিলেন বলে তাদেরকে শিবির ক্যাডার দিয়ে প্রথমে বেদম মারধর এবং পরে এদের উপরই আবার চাদাবাজির অভিযোগে মামলা করে। ঐ মামলার নং- ২০ তাং- ১৮/৭/২০১৬ ইং।
    উল্লেখ্য় যে, উক্ত বালু মহাল ও তার অবৈধ দখলীয় অন্যান্য চরগুলির অধীন বালুচরটির পাড় এলাকায় ৯০০/১০০০টি বসতবাড়ী ছাড়াও দুই পাড় মিলে প্রায় ১৫০০ একর আবাদী জমি, দুটি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, সরকারী ইজারাভুক্ত দুটি বাজার (তালবাড়ী ও রাজাগঞ্জ) ৪৯ শতক ওয়াক্ফ ভুমি ( শাহ সৈয়দ ইসহাকুর রহমান চিশতী সাহেবের মাজার), তিনটি মাদ্রাসা, ৫টি মসজিদ, ৬টি কবরস্থান, একটি শ্বশানঘাট, ২টি প্রাকৃতিক পাথরের চাক (স্তর) ও সরকারীভাবে নদীতে নির্মিত ৪টি পাকা ঘাট রহিয়াছে। এসমস্ত স্থাপনার সবটাই এখন নদীগর্ভে বিলিন হওয়ার অপেক্ষায়। তাছাড়া শীত মৌসুমে উক্ত চরে অত্র এলাকার সবজি চাষীরা সবজি চাষ করে জীবিকা নির্বাহ করে থাকেন যা অনিয়মতান্ত্রিকভাবে বালু উত্তোলনের ফলে বিগত ৪ বছর যাবত এই সবজি চাষও বন্ধ রয়েছে।
    অতএব মহোদয়গণ সমীপে প্রার্থনা, হাজারো গরীবের ভিটেমাটি, ফসলী জমি, সরকারী বেসরকারী বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ইজারাভুক্ত বাজার, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, ফসলী জমি, রাষ্ট্রীয় ও প্রাকৃতিক সম্পদ নদীগর্ভে বিলীন হওয়া থেকে রক্ষাকল্পে উল্লেখিত বালু মহালটির ইজারা চিরতরে বাতিল করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহন করিতে আপনাদের যেন মর্জি হয়।

    ReplyDelete

পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়