গোয়াইনঘাট সংবাদদাতা : গোয়াইনঘাটে মসজিদের জায়গার উপর দিয়ে রাস্তা নির্মাণকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষে হত্যাকান্ডের ঘটনায় থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। এ ঘটনায় পুলিশ ৩ জন মহিলা আসামীকে গ্রেফতার করে জেল হাজতে প্রেরণ করে। লোমহর্ষক এ খুনের ঘটনায় এলাকায় থমথমে পরিবেশ বিরাজ করছে। বিক্ষুব্ধ গ্রামবাসী এ ঘটনার মূল হোতা অলিউর রহমানসহ তার সন্ত্রাসী বাহিনি ও ঘটনার কুশিলবদের বিচারের আওতায় আনার দাবী জানিয়েছেন।
নিহতের ছেলে কফিল উদ্দিন বাদী হয়ে ওলিউর রহমানকে প্রধান আসামী করে আর ১১জনের নাম উল্লেখ করে গোয়াইনঘাট থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন মামলা নং- (২৩) তাং ২৮-০৭-১৬ইং । অপর দিকে বুধবার বিকেলে পুলিশ অভিযান চালিয়ে অভিযুক্ত একই গ্রামের নুরুল হক‘র স্ত্রী হাওয়ারুন (৪০), রফিকুল‘র স্ত্রী মিনারা (৪০) তেরা মিয়ার স্ত্রী ফাতেমা (৪০) কে আটক কওে এবং বৃহস্পতিবাওে র্কোটহাজতে প্রেরন করে। সরজমিন বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টায় ২নং পশ্চিম জাফলং ইউনিয়নের নিবৃত পল্লী হাতিরখাল গ্রামে গেলে ক্ষুব্ধ মানুষের প্রতিক্রিয়া ও সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে জনমতের প্রতিফলন ফুটে উঠে। গ্রামের প্রধান ঐ মসজিদের মোতাওয়াল্লী, মুক্তিযোদ্ধা, মুরব্বী, যুবক-কিশোর সহ প্রতিবাদী মানুষ এ ঘটনার মূল হোতা কথিত আওয়ামী লীগ নেতা অলিউর রহমানকে দ্রুত গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবী জানিয়েছেন। সরজমিন পরিদর্শনকালে গ্রামের ইসরাক আলী, সফিকুর রহমান, আব্দুন নূর, সহ গ্রামবাসী জানান, মসজিদের পাশ দিয়ে রাস্তা নির্মাণ বিষয়ে বিরোধ নিষ্পত্তির লক্ষ্যে গোয়াইনঘাট উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবরে অভিযোগ দেওয়া সত্বেও বিষয়টি নিষ্পত্তি না হওয়ার পূর্বেই এই খুনের ঘটনায় হতবাক ও আতঙ্কিত। এসময় গ্রামবাসী অলিউর-এর অতীতের কার্যকলাপ গণমাধ্যম কর্মীদের সামনে তুলে ধরেন। তারা জানান, ১৯৯৮ সালে অপর একটি হত্যা মামলায় প্রধান আসামী ছিল অলিউর ও তার ছোট ভাই আলাউর। তারা জানান, অলিউর-এর খুঁটির জোর কোথায়? গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল জব্বার (৭০), জানান ঘটনার সময় মসজিদের পাশে অবস্থান করি। এসময় মাটি কাটার দৃশ্যও দেখি। হঠাৎ কিছু বুঝে উঠার আগেই অলিউর-এর ভাই আলাই ঝাঁটা, দা, এবং মঈন উদ্দিন লাঠি নিয়ে আসে। এসময় মহিলাদের হাতেও দেশীয় অস্ত্র ছিল। মসজিদের জায়গার উপর দিয়ে জোরপূর্বক রাস্তা তৈরী করে মাটি ফেলার সময় আব্দুল করিমসহ গ্রামবাসী বাধা প্রদান করেন। এসময় হঠাৎ পুলিশ দল উপস্থিত হয় এবং এসআই মিয়া নাছির উদ্দিন আহমেদকে মসজিদের জায়গার উপর দিয়ে অলিউর-এর রাস্তা নির্মাণ কাজ বন্ধ রাখার আহ্বান জানান গ্রামবাসী। কিন্তু তাদের কথা না শুনে পুলিশের উপস্থিতিতে অলিউর ও তার দলবল রাস্তা নির্মাণের কাজ চালিয়ে যান। এতে গ্রামবাসী পুনরায় বাধা প্রদানের চেষ্টা করলেই পুলিশ গুলিবর্ষণ শুরু করে। পুলিশের গুলিবর্ষণে আতঙ্কিত হয়ে গ্রামবাসী পালিয়ে যায়। এসময় নিহত আব্দুল করিমকে একা পেয়ে অলিউর ও তার দলবল সহ এলোপাতাড়ি কুপিয়ে গুরুতর রক্তাক্ত জখম করে ফেলে যায়। শাহজালাল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও স্থানীয় ২নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রব জানান, ঘটনার সময় কোনরকম উত্তেজনা বা উস্কানী দেয়নি গ্রামবাসী। অথচ পুলিশই নিরীহ গ্রামবাসীর উপর গুলিবর্ষণ করে। আতঙ্কে সবাই পালিয়ে গেলে আব্দুল করিমকে একা পেয়ে অলিউর ও তার অপরাপর সঙ্গীরা কুপিয়ে মারাত্মক আহত করে। এ ব্যাপারে এসআই নাছিরের সাথে মোবাইল ফোনে কথা বললে তিনি জানান, সংঘর্ষের সংবাদ পেয়ে ঘটনাস্থলে যাই এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ফাঁকা গুলিবর্ষণ করে পুলিশ। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ওসি তদন্ত জাহাঙ্গীর হোসেন সরদার জানান, খুনের ঘটনায় থানায় হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে । এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে ৩জন মহিলাকে আটক করা হয়েছে এবং অন্যান্য আসামীদের গ্রেফতার করতে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
উল্লেখ্য যে পশ্চিম জাফলং ইউনিয়নের হাতিরখাল গ্রামে মনু মিয়ার পুত্র ওলিউর রহমান তার ব্যাক্তিগত বাড়ীর রাস্তা গ্রামের বড় মসজিদ জমির উপর দিয়ে জোর পুর্বক নির্মানের উদ্যোগ নেন। এতে গ্রামবাসী বাধাঁ দিলে ওলিউরের লোকজনের হামলায় করিম গুরুতর আহত হয়ে চিকিৎসাধীনবস্থায় সিওমেক হাসপাতালে মৃত্যূবরণ করেন।
খবর বিভাগঃ
সারাদেশ
0 comments:
পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়