Friday, January 8

তাবলিগের ছয় নম্বর


জাওহার ইকবাল খান: আজ শুক্রবার। পবিত্র জুমার দিন। দেশ-বিদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে আগত লাখো মানুষ আজ টঙ্গীর তুরাগ নদের তীরে ইজতেমা মাঠে জুমার নামাজ আদায় করবেন। তাবলিগ জামাতের 'ছয় নম্বর বা ছয় সিফাত' কোরআন ও হাদিস থেকেই গৃহীত ছয়টি পয়েন্ট বা বৈশিষ্ট্য। এ ছয়টি নম্বরের মধ্যে কোনো পরিবর্তন হয়নি। কারণ কালেমা, নামাজ, এলম ও জিকির, ইকরামুল মুসলিমিন, তাসহিহে নিয়ত এবং তাবলিগ- এ বৈশিষ্ট্যগুলো গুরুত্বপূর্ণ। মহান আল্লাহ বলেন, 'আর তোমাদের মধ্যে এমন একটা দল থাকা উচিত যারা আহ্বান জানাবে সৎকর্মের প্রতি, নির্দেশ দেবে ভালো কাজের এবং বারণ করবে অন্যায় কাজ থেকে, আর তারাই হলো সফলকাম।' (সূরা আলে ইমরান : ১০৪)। মহানবী (সা.) এর তিরোধানের পর উম্মতে ওসাত বা শ্রেষ্ঠ জাতি হিসেবে কাজটি এসেছে উম্মতে মুহাম্মদির ওপর। এজন্যই বলা হয়, 'দাওয়াতি কাজ মোমিন জীবনের মিশন।' সেই দাওয়াতি কাজের মিশন শুরু করেছিলেন তাবলিগ জামাতের রূপকার হজরত মাওলানা ইলিয়াস কান্ধলভী (রহ.)। ১৯১০ সালে ভারতের এক জনবিরল অঞ্চল মেওয়াত থেকে হাতেগোনা ক'জন মানুষ নিয়ে তিনি তাবলিগের দাওয়াতি মেহনত শুরু করেন। তাবলিগের এ মেহনত এখন বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে। হজরত মাওলানা ইলিয়াস (রহ.) বলেছেন, দাওয়াত ও তাবলিগের মূল উদ্দেশ্য হলো, ঈমানের আন্দোলন। এ আন্দোলন নিজের সংশোধন তথা সমগ্র মানবজাতির মুক্তির আন্দোলন। মানবজীবনে এ আন্দোলনের প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। কারণ এ আন্দোলনের মাধ্যমে একজন মানুষ খাঁটি মানুষে পরিণত হয়। আজ মানুষ আল্লাহ ও রাসুলকে ভুলে গিয়ে অন্যায়, পাপাচারে লিপ্ত হচ্ছে। যার ফলে জান্নাত থেকে দূরে সরে জাহান্নামের দিকে ধাবিত হচ্ছে। আর সেজন্য সমাজ, জাতি আজ অশান্তির দাবানলে দাউ দাউ করে জ্বলছে। দাওয়াতে তাবলিগের সার্বিক কর্মকা- প্রধান ছয়টি বুনিয়াদি শিক্ষা বা বৈশিষ্ট্যের ওপর পরিচালিত হয়। তাবলিগের সেই ছয় সিফাতকে সাধারণত ছয় নম্বর বলা হয়। বিষয়গুলো হচ্ছে- ১. কালেমা ২. নামাজ ৩. এলম ও জিকির ৪. ইকরামুল মুসলিমিন ৫. তাসহিহে নিয়ত এবং ৬. তাবলিগ (দাওয়াত ও আল্লাহর রাস্তায় বের হওয়া)। এ ছয় সিফাত কালেমা, নামাজ, রোজা, হজ, জাকাতের বিকল্প নয় কিংবা এর মধ্যে কোনো বিতর্কও সৃষ্টি করা হয় না। ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ মৌলিক শিক্ষাগুলো সাধারণ মানুষের জীবনে প্রতিফলিত করার লক্ষ্যে সহজবোধ্য করে তোলার জন্য এ ছয় সিফাতের শিক্ষা প্রদান করা হয়। আরও অধিকতর শিক্ষা এবং আলেমকে শ্রদ্ধা করার কথা গুরুত্বসহকারে শেখানো হয়। কালেমা : 'আল্লাহ এক, তার কোনো শরিক নেই এবং মুহাম্মদ (সা.) আল্লাহর বান্দা ও রাসুল'- এ কথার ওপর বিশ্বাস করার নামই হচ্ছে ঈমান। পৃথিবীতে যা কিছু আছে তার সবই আল্লাহর হুকুমে হয়। সৃষ্টিজগতের কোনো শক্তি নেই, তারা নিজ ইচ্ছায় কোনোকিছুই করতে পারে না আল্লাহ তায়ালার হুকুম ছাড়া আর আল্লাহ সবকিছু করতে পারেন সৃষ্টিজগতের সাহাজ্য ছাড়া। এ কথার ওপর সবাইকে দৃঢ়বিশ্বাস স্থাপন করতে হবে। নামাজ : আল্লাহ তায়ালা প্রত্যেক মুসলমান প্রাপ্তবয়স্ক নর-নারীর ওপর নামাজ ফরজ করেছেন। তাই ঈমানের পরে প্রত্যেক মুসলমানের ওপর নামাজ আদায় করা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ফরজ। পবিত্র কোরআন ও হাদিসে নামাজের যেসব ফজিলত ও মর্যাদার কথা বলা হয়েছে তা হাসিলের জন্য রাসুল (সা.) যেভাবে নামাজ আদায় করতেন এবং সাহাবাদের পড়তে শেখাতেন সেভাবে নামাজ আদায়ের মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টি হাসিলের চেষ্টা করা এর অন্তর্ভুক্ত। এলম ও জিকির : মানুষকে তার দায়িত্ব ও কর্তব্য বুঝতে হলে তার সম্পর্কে, সৃষ্টিকর্তা সম্পর্কে এবং দুনিয়া সম্পর্কে জ্ঞানার্জন করতে হবে। তাই আল্লাহ তায়ালা জ্ঞানার্জনকে ফরজ করেছেন। রাসুল (সা.) তার সাহাবিদের জ্ঞানার্জনের জন্য গুরুত্বারোপ করেছেন। তাই তাবলিগ জামাতের কার্যক্রমের অন্যতম প্রধান অঙ্গ হচ্ছে জ্ঞানার্জন। জিকির হলো, সর্বাবস্থায় আল্লাহর ধ্যান-খেয়াল নিজের ভেতর জাগ্রত রাখা। ইকরামুল মুসলিমিন : একজন মুসলমান তার অপর মুসলমান ভাইয়ের কিমাত জেনে কদর করার নাম ইকরামুল মুসলিমিন। আমাদের সমাজের সাধারণ মানুষ পরোপকারের মতো মহান চরিত্রকে পরিহার করতে শুরু করেছে। কিন্তু মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) যে শান্তির ধর্ম প্রচার করে গেছেন সেখানে একজন মুসলমান কর্তৃক অপর মুসলমানের সম্মানকে অত্যন্ত ফজিলতের কাজ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। মুসলমানদের মাঝে ভ্রাতৃত্বের বন্ধনকে আরও দৃঢ় করার মাধ্যমে দাওয়াত ও তাবলিগের কাজকে আরও বেগবান করতে ইকরামুল মুসলিমিন বা মানুষকে সমীহ করার বিধানকে তাবলিগের ছয় বৈশিষ্ট্যের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। তাসহিহে নিয়ত : মানুষের সার্বিক ইবাদত-বন্দেগির পুরস্কার বা প্রতিদান নির্ভর করে ব্যক্তির নিয়ত বা ইচ্ছার ওপর। তাই বাহ্যিক কার্যক্রম পরিচালনার পাশাপাশি তাবলিগ জামাতের কার্যক্রমে সর্বাধিক গুরুত্ব দেয়া হয় খালেস নিয়তের ওপর। একমাত্র আল্লাহকে রাজি-খুশি করার জন্য ইহজাগতিক কোনো লক্ষ্য বা স্বার্থবিবর্জিতভাবে সবকিছু করতে হবে। এটা হচ্ছে এখলাসের মূল কথা। দাওয়াত ও তাবলিগ : দাওয়াত হলো এ কার্যক্রমের অন্যতম প্রাথমিক কাজ। তাবলিগ মানে পৌঁছে দেয়া আর দাওয়াত হলো ইসলামের শিক্ষা ও জীবনধারার অনুশীলন পৌঁছে দেয়ার আহ্বান। এ দাওয়াতি কার্যক্রম পরিচালিত হয় একটি বিধিবদ্ধ পদ্ধতির মাধ্যমে। এটা নবী-রাসুলদের প্রধান শিক্ষা, নবীয়ানা কাজ।

শেয়ার করুন

0 comments:

পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়