Monday, November 30

শিশু সাঈদ হত্যা মামলায় পুলিশ সদস্যসহ ৩ জনের ফাঁসি


সিলেট, সোমবার, ৩০ নভেম্বর ২০১৫ :: সিলেটে স্কুলছাত্র আবু সাঈদকে অপহরণ ও হত্যা মামলায় এক পুলিশ সদস্যসহ ৩ জনকে ‘ডাবল মৃত্যুদন্ড’ প্রদান করেছেন আদালত। সোমবার বিকেল পৌনে ৪টায় সিলেট নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক আবদুর রশিদ এ রায় ঘোষণা করেন। রায়ে ফাঁসির দন্ডপ্রাপ্তরা হচ্ছেন নগরীর বিমানবন্দর থানার কনস্টেবল (বরখাস্তকৃত) এবাদুর রহমান পুতুল, র‌্যাবের কথিত সোর্স আতাউর রহমান গেদা ও সিলেট জেলা ওলামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নূরুল ইসলাম রাকিব। উপরোক্ত আসামিদের প্রথমে অপহরণ ও মুক্তিপণ দাবির জন্য দন্ডবিধির ৭ ও ৮ ধারায় মৃত্যুদন্ড প্রদান করা হয়। একইসাথে এক লাখ টাকা করে জরিমানাও করা হয়েছে। অন্যদিকে সাঈদকে অপহরণ করে হত্যার জন্য দন্ডবিধির ৩০২/৩৪ ধারায়ও তাদেরকে মৃত্যুদন্ড প্রদান করা হয়েছে। একইসাথে আরো এক লাখ টাকা করে জরিমানাও করা হয়েছে। সিলেট নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের এ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানিয়েছেন, আসামিরা আগামী ৭ দিনের মধ্যে এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করতে পারবে। এছাড়া জেলা ওলামালীগের প্রচার সম্পাদক মাহিব হোসেন মাসুমকে বেকসুর খালাস প্রদান করেছেন আদালত। চলতি বছরের ১১ মার্চ সকাল সাড়ে ১১টার দিকে সিলেট নগরীর রায়নগর থেকে স্কুলছাত্র আবু সাঈদকে (৯) অপহরণ করা হয়। এরপর ১৪ মার্চ রাত সাড়ে ১০টায় নগরীর বিমানবন্দর থানার পুলিশ কনস্টেবল এবাদুর রহমান পুতুলের কুমারপাড়াস্থ ঝর্ণারপাড় সবুজ-৩৭ নং বাসার ছাদের চিলেকোঠা থেকে সাঈদের বস্তাবন্দি লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। স্কুল থেকে ফেরার পথে সিলেট নগরীর দর্জিবন্ধ বসুন্ধরা এলাকার ৭৪ নং বাসার বাসিন্দা আবদুল মতিনের ছেলে রায়নগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৪র্থ শ্রেণির ছাত্র সাঈদকে (৯) অপহরণ করা হয়। অপহরণের পর সাঈদের বাবা ও মামার কাছে ফোন করে ৫ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে অপহরণকারীরা। অন্যথায় সাঈদকে হত্যা করা হবে বলেও হুমকি দেয় তারা। এরপর সাঈদের বাবা ও মামা কোতোয়ালি থানায় গিয়ে জিডি দায়ের করেন। একইসাথে অপহরণকারীদের সাথেও চলতে থাকা কথাবার্তা। পাঁচ লাখ টাকা দেয়ার সামর্থ্য নেই জানিয়ে চলে দর কষাকষি। শেষ পর্যন্ত ২ লাখ টাকায় সম্মত হয় অপহরণকারীরা। টাকা নিয়ে সিলেট নগরীর বাইশটিলা এলাকায় যাওয়ার পর ফোন দিয়ে অপহরণকারীরা বলে, ‘বিষয়টি পুলিশকে কেন জানানো হলো?’ তারা সাঈদকে হত্যার হুমকি দিয়ে ফোন রেখে দেয়। অপহরণের ৪ দিন পর ১৪ মার্চ দিবাগত রাতে পুলিশ কনস্টেবল এবাদুরের ভাড়া বাসা থেকে সাঈদের লাশ উদ্ধার করা হয়। সাঈদের বাবা ও মামার কাছে যে মোবাইল দিয়ে ফোন দেয়া হয়েছিল, তা ট্রাক করে কনস্টেবল এবাদুরের বলে নিশ্চিত হয় পুলিশ। পরে তাকে আটক করা হয়। তার স্বীকারোক্তির ভিত্তিতেই র‌্যাবের কথিত সোর্স আতাউর রহমান গেদা, সিলেট জেলা ওলামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নূরুল ইসলাম রাকিবকেও আটক করে পুলিশ। তবে পলাতক থাকে জেলা ওলামী লীগের প্রচার সম্পাদক মাহিব হোসেন মাসুম। কনস্টেবল (বর্তমানে বরখাস্ত) এবাদুর রহমান একসময় সাঈদদের পাশের বাসায় ভাড়া থাকতেন। সে সুবাধে সাঈদের পরিবারের সবার সাথে পরিচয় ছিল তার। আবু সাঈদ তাকে ‘মামা’ বলে ডাকতো। সাঈদ হত্যাকান্ডের ঘটনায় তার বাবা মতিন মিয়া বাদি হয়ে হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলায় আটককৃত তিনজনকে গ্রেফতার দেখানো হয়। হত্যাকান্ডের প্রায় ৬ মাস পর গত ২৩ সেপ্টেম্বর সিলেট মহানগর হাকিম ১ম আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন মহানগর পুলিশের সহকারি কমিশনার (প্রসিকিউশন) আবদুল আহাদ চৌধুরী। মামলাটি তদন্ত করেন কোতোয়ালী থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মোশাররফ হোসাইন। গত ৭ অক্টোবর অভিযোগপত্রের উপর শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। গত ২৯ অক্টোবর সাঈদ অপহরণ ও হত্যা মামলা সিলেট মহানগর হাকিম প্রথম আদালত থেকে সিলেট নারী ও শিশু নির্যাতন ট্র্যাইব্যুনালে স্থানান্তর করা হয়। ওইদিন আলোচিত এই হত্যা মামলায় ৮ নভেম্বর চার্জ গঠনের তারিখ নির্ধারণ করেন আদালত। কিন্তু ৮ নভেম্বর চার্জ গঠিত হয়নি। তবে ওইদিন পলাতক থাকা মাহিব হোসেন মাসুমের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা এবং মালামাল ক্রোকের নির্দেশ দেন আদালত। পরে ১০ নভেম্বর আদালতে আত্মসমর্পণ করে মাসুম জামিন আবেদন জানালেও আদালত তাকে জেলহাজতে প্রেরণের নির্দেশ দেন। পরে ১৭ নভেম্বর সাঈদ অপহরণ ও হত্যা মামলায় ৪ জনের বিরুদ্ধে আদালত অভিযোগ গঠন করেন। ওই ৪ জন হচ্ছেন নগরীর বিমানবন্দর থানার কনস্টেবল (বরখাস্তকৃত) এবাদুর রহমান পুতুল, র‌্যাবের কথিত সোর্স আতাউর রহমান গেদা, সিলেট জেলা ওলামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নূরুল ইসলাম রাকিব ও প্রচার সম্পাদক মাহিব হোসেন মাসুম। গত ১৯ নভেম্বর থেকে আলোচিত সাঈদ হত্যা মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়। টানা ৬ কার্যদিবসে সাক্ষ্যগ্রহণের মধ্য দিয়ে গত ২৬ নভেম্বর শেষ হয় মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ কাজ। গতকাল রোববার যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে রায়ের তারিখ ধার্র্য্য করেন আদালত। --সিলেটভিউ২৪ডটকম

শেয়ার করুন

0 comments:

পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়