Wednesday, September 23

কোরবানির জরুরি মাসআলা


মুফতি মাহফূযুল হক : কোরবানি একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। অন্যান্য ইবাদতের মতো কোরবানি শুদ্ধ হওয়ার জন্য রয়েছে বেশ কিছু নিয়ম ও বিধি-বিধান। তাই পাঠকদের জন্য কোরবানির প্রয়োজনীয় কিছু মাসআলা উল্লেখ করা হলো- কোরবানি কবুল হওয়ার শর্ত সওয়াবের আশায় কোরবানি দেওয়া, কোরবানির অর্থ হালাল হওয়া এবং বিধানসম্মতভাবে কোরবানি দেওয়া। শুধুমাত্র গোশত খাওয়ার ইচ্ছায়, সামাজিক মান-মর্যাদা রক্ষায় কোরবানি দিলে তা কবুল হবে না। কোরবানির অর্থ যদি হালালপন্থায় অর্জিত না হয়- তাহলে ওই কোরবানি আল্লাহর দরবারে কবুল হয় না। যাদের ওপর কোরবানি ওয়াজিব যে মুসলিম নর-নারী জিলহজ মাসের ১০ তারিখ সুবহে সাদেক থেকে ১২ তারিখ সূর্যস্তের মধ্যে প্রাপ্তবয়ষ্ক, সুস্থমস্তিষ্কসম্পন্ন ও সম্পদের দিক দিয়ে নেসাবের মালিক হবে- তার ওপর কোরবানি করা ওয়াজিব। কোনো অপ্রাপ্ত বয়ষ্কের সম্পদ থাকলেও তার ওপর কোরবানি ওয়াজিব নয়। পাগল ধনী হলেও তার ওপর কোরবানি ওয়াজিব নয়। নেসাবের ব্যাখ্যা সোনার নেসাব ৮৭.৪৮ গ্রাম (সাড়ে সাত ভরি)। রূপার নেসাব ৬১২.৩৬ গ্রাম (সাড়ে বায়ান্ন ভরি)। অন্যান্য সম্পদের ক্ষেত্রে ৬১২.৩৬ গ্রাম রূপার মূল্যমান প্রযোজ্য হবে। সোনা-রূপা অথবা সোনা-রূপা ও অন্যান্য সম্পদ থাকলে সে ক্ষেত্রেও ৬১২.৩৬ গ্রাম রূপার মূল্যমান প্রযোজ্য হবে। অন্যান্য সম্পদের মধ্যে ধরা হবে- ব্যবসার পণ্য, বসবাস ও খোরাকির প্রয়োজনে ব্যবহৃত হয় না- এমন জমি, বাড়ি, ফ্ল্যাট, ফার্ণিচার, তৈজসপত্র, যে কোনোভাবে এবং যে কোনো উদ্দেশ্যে জমানো টাকা। কোরবানি ওয়াজিব হওয়ার জন্য নেসাব পরিমাণ সম্পদ এক বছর থাকা শর্ত নয়। পশুর বিবরণ কোরবানি দিতে হবে গৃহপালিত চতুষ্পদ জন্তু দিয়ে দিয়ে। বন্য প্রাণী দিয়ে কোরবানি আদায় হবে না। ছাগল, ভেড়া, দুম্বা, গরু, মহিষ ও উট দ্বারা কোরবানি দেওয়া যায়। নর ও মাদা যে কোনো পশু দিয়ে কোরবানি হবে। তবে হিজড়া পশু দিয়ে কোরবানি হবে না। এ ছাড়া হরিণ ও বন্যগরু ইত্যাদি দিয়েও কোরবানি হবে না। পশুর বয়স ছাগল, ভেড়া ও দুম্বার নূন্যতম বয়স ১ বছর হতে হবে। গরু-মহিষের নূন্যতম বয়স ২ বছর। উটের নূন্যতম বয়স ৫ বছর। পশুর ত্রুটি কোরবানির পশু ত্রুটিমুক্ত ও সুন্দর হওয়া বাঞ্চনীয়। তবে সামান্য পরিমাণের ত্রুটি থাকলে তা দ্বারা কোরবানি হবে। যদি পশুর একটি পা মাটিতে রাখতে না পারে বা মাটিতে রাখলেও তাতে ভর দিতে না পারে তবে ওই পশু দ্বারা কোরবানি হবে না। যে পশু এতটাই অসুস্থ্য ও দুর্বল যে নিজ স্থান থেকে জবাইয়ের স্থান পর্যন্ত নিজে হেঁটে যেতে পারে না- তবে ওই পশু দিয়ে কোরবানি আদায় হবে না। যে পশুর সবগুলো দাঁত পড়ে গেছে বা এত বেশি দাঁত পড়ে গেছে যে, সে খাদ্য চিবাতে পারে না- তা দ্বারা কোরবানি হবে না। শিং যদি সমূলে উপড়ে যায় বা গোড়া থেকে এমনভাবে ভেঙে যায় যে, মাথার খুলি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে বা খুলির হাড় দেখা যায়- তবে তা দ্বারা কোরবানি করা যাবে না। অন্যথায় কোরবানি হবে। শিং না উঠে থাকলেও কোরবানি হবে বয়স হলে। কান বা লেজের যদি অর্ধেক পরিমাণ বাকি থাকে তবে কোরাবানি হবে। দুটি বা একটি চোখ সম্পূর্ণ দৃষ্টিহীন হলে কোরবানি দেওয়া যাবে না। গর্ভবতী পশুর কোরবানি গর্ভবতী প্রাণী কোরবানি দিলে কোরবানি হবে। তবে জেনে-শোনে এমনটি করা মাকরূহ। জবাইয়ের পর গর্ভস্থ বাচ্চা জীবিত পাওয়া গেলে তা দান করে দিতে হবে। আর মৃত বা অসম্পূর্ণ পাওয়া গেলে বাচ্চা ফেলে দিতে হবে। এতে কোরবানির কোনো ক্ষতি হবে না বা গোশত খেতেও কোনো সমস্যা নেই। পশু ক্রয়ের পর পশু মারা গেলে ক্রেতা ধনী হলে আরেকটি পশু কোরবানি দিতে হবে। আর গরিব হলে তার আর কোরবানি দিতে হবে না। ক্রয়ের পর পশুতে ত্রুটি পরিলক্ষিত হলে যদি এমন ত্রুটি দেখা দেয় যাতে কোরবানি চলবে না, তবে ক্রেতা ধনী হলে অন্য পশু দিয়ে কোরবানি দিবে। ত্রুটিযুক্ত পশু বিক্রি করলে করতে পারবে। আর গরিব হলে ত্রুটিযুক্ত এই পশু দিয়েই কোরবানি দিবে। পশু ক্রয়ের পর হারিয়ে গেলে ক্রেতা গরিব হলে তাকে অন্য পশু কোরবানি দিতে হবে না। ধনী হলে অন্য পশু কোরবানি দিতে হবে। অন্য পশু ক্রয়ের পর যদি হারানো পশু ফিরে পাওয়া যায় তবে ধনী ব্যক্তি নিজ ইচ্ছেমতো যে কোনো একটি পশু দ্বারা কোরবানি দিতে পারবে। কিন্তু গরিব ব্যক্তিকে উভয়টাই কোরবানি দিতে হবে। কেননা, ধনীর ওপর কোরবানি ওয়াজিব ধনের কারণে। তাই পশু ক্রয় করার দ্বারা তার ওপর পশু নির্দিষ্ট হয় না। সে যে কোনোটা দিয়ে কোরবানি দিতে পারে। কিন্তু গরিবের ওপর ধনের কারণের কোরবানি ওয়াজিব না। সে যদি কোরবানির নিয়তে পশু ক্রয় করে তবে পশু ক্রয়ের কারণে তার ওপর কোরবানি ওয়াজিব হয়। তাই পশু ক্রয়ের দ্বারা তার জন্য পশু নির্দিষ্ট হয়ে যায়। সে যতগুলো ক্রয় করবে সবগুলো দিয়ে কোরবানি করা ওয়াজিব হবে। ভাগে কোরবানি ছাগল, ভেড়া, দুম্বা ভাগে কোরবানি দেওয়া যায় না। একাই দিতে হয়। গরু, মহিষ ও উট ভাগে কোরবানি দেওয়া যায়। ভাগের সংখ্যা সর্বোচ্চ সাত হতে পারে। এর বেশি হলে হবে না। সাত বা সাতের কম যে কোনো সংখ্যার ভাগ হতে পারে। বেজোড় হওয়ার কোনো বাধ্যবাধ্যকতা নেই। ভাগে কোরবানি শুদ্ধ হওয়ার শর্ত ভাগে কোরবানি শুদ্ধ হওয়ার জন্য গুরুত্বপূর্ণ তিনটি শর্ত রয়েছে- এক. প্রত্যেকেরই সওয়াবের নিয়তে কোরবানি দেওয়া। দুই. প্রত্যেকের অর্থ হালাল হওয়া। তিন. কারো টাকা এক সপ্তমাংশের কম না হওয়া। ভাগিদারদের কারো নিয়তে যদি ত্রুটি থাকে অথবা কারো উপার্জন যদি হারাম হয়- তবে সবার কোরবানিই নষ্ট হয়ে যাবে। ভাগিদারদের মধ্যে কারো কোরবানি আদায় হবে না। ইসলামি চিন্তাবিদরা তাই পরামর্শ দিয়ে থাকেন, ভাগে কোরাবানি দেওয়ার চেয়ে একা কোরবানি দেওয়াই অধিক নিরাপদ। ৬৯ হাজার টাকা দিয়ে ক্রয়কৃত গরুতে ৬ জনের টাকা ১০ হাজার করে ৬০ হাজার টাকা। আর বাকি ৯ হাজার টাকা একজনের। এমতাবস্থায় কারো কোরবানি আদায় হবে না। কেননা, শেষ ব্যক্তির টাকা এক সপ্তমাংশের কম। অনেক সময় দেখা যায়, চার ভাই মিলে সমানহারে টাকা দিয়ে পিতার নামে এক ভাগ নেয়। কোরবানির পর গোশতের ভাগ বাড়ি এনে আবার নিজেরা ভাগ করে নেয়। সে ক্ষেত্রে ওই গরুতে আরো যে ৬ জন শরিক হয়েছিলেন তাদেরসহ কারো কোরবানি আদায় হবে না। কেননা, চার ভাইয়ের প্রত্যেকের ভাগ এক সপ্তমাংশের কম হয়ে যাচ্ছে। যদি কয়েক ভাই মিলে পিতার নামে বা মায়ের নামে এক ভাগের কোরবানিতে অংশ নিতে চায় তবে সঠিক নিয়ম হলো- ভাইয়েরা সবাই নিজ নিজ টাকার স্বত্ত্বাধিকার ত্যাগ করে এবং গোশত প্রাপ্তির কোনো দাবি না রেখে একজনকে উপহার দিয়ে দিবে। সে পিতার নামে একভাগে কোরবানি দিবে। পরবর্তীতে কোরবানির গোশত সে তার নিজ ইচ্ছা ও খুশিমতো বণ্টন করবে। যদি পাঁচ ভাই মিলে একটি গরু ক্রয় করে এবং এরা সবাই মিলে বাকি দুই ভাগ পিতার নামে ও মায়ের নামে কোরবানি দিতে চায় তবে তা দিতে পারবে। কেননা, এ ক্ষেত্রে কারো ভাগ এক সপ্তমাংশের চেয়ে কম থাকছে না। দুই ভাগ পিতা-মাতার নামে দিলেও মালিকানার বিবেচনায় প্রত্যেকের ভাগ এক পঞ্চমাংশ থাকছে। অনেকে মনে করেন, গরুতে নাম ৭ টাই হতে হবে। তিনজনে মিলে গরু ক্রয় করলেও সাত নাম পূরণ করার চেষ্টা করা হয়। এ ধারণা ভুল। এর কোনো প্রয়োজন নেই। যারা কিনেছে শুধু তাদের নামে কোরবানি দেওয়াটাই যথেষ্ট। নামের সংখ্যা সাতের চেয়ে কম হলে কোনো অসুবিধা নেই। পশু ক্রয়ের আগেই ভাগ মিল করা শ্রেয়। ধনী ব্যক্তি একা কোরবানি দেওয়ার নিয়তে পশু ক্রয়ের পর অন্যকে ভাগ দিলে অনুত্তম হবে। আর গরিব ব্যক্তি এমনটি করলে তা নাজায়েয হবে। অন্যের নামে কোরবানি দেওয়া কারো ওপর কোরবানি ওয়াজিব হয়ে থাকলে তাকে নিজের নামেই কোরবানি দিতে হবে। নিজের নামে না দিয়ে অন্যের নামে দেওয়া যাবে না। অনেকে মনে করে কোরবানি মুরুব্বিদের নামে দিতে হয়। এটা প্রচলিত ভুল ধারণা। তবে কেউ যদি একাধিক কোরবানি দেয় তবে একটা নিজের নামে দিয়ে বাকি নফল কোরবানিগুলো জীবিত-মৃত যে কারো নামে দিতে পারে। কোরবানির সঙ্গে আকিকা গরু, মহিষ ও উট ইত্যাদিতে নিজের কোরবানির সঙ্গে সাত ভাগ মিল রেখে নিজের বা সন্তানদের আকিকার নিয়ত করা যাবে। আকিকার নিয়তে অন্যদের কোরবানির সঙ্গেও শরিক হওয়া যাবে। পশু ক্রয়ের পর শরিকদের কেউ মারা গেলে যদি মৃতের সকল ওয়ারিশ মৃতের পক্ষ থেকে কোরবানি করার অনুমতি দেয়- তবেই কেবল সবার কোরবানি আদায় হবে। আর যদি ওয়ারিশদের কেউ অপ্রাপ্ত বয়ষ্ক থাকে অথবা ওয়ারিশগণ অনুমতি না দেয় অথবা কোনো একজন ওয়ারিশের সঙ্গেও যোগাযোগ করে তার অনুমতি সংগ্রহ করা সম্ভব না হয়- এমতাবস্থায় কোরবানি দিলে কারো কোরবানি আদায় হবে না। এক্ষেত্রে করণীয় হলো- মৃতের ভাগের টাকা তার ওয়ারিশদের ফিরিয়ে দেওয়া। বাকি শরিকরা নিজ নিজ অংশ অনুপাতে এ টাকা পরিশোধ করতে পারে অথবা নতুন কাউকে শরিক করে নিতে পারে। কোরবানির সময় জিলহজ মাসের ১০ তারিখ এলাকার ঈদের প্রথম জামাত শেষ হওয়ার পর থেকে ১২ তারিখ সূর্যাস্ত পর্যন্ত সময়ের মধ্যে রাতে-দিনে যে কোনো সময় কোরবানি করা যাবে। কোরবানির পশু ও মালিক দুই শহরে বা দুই দেশে থাকলে পশুর স্থানের সময় ধর্তব্য হবে। বছরের অন্য কোনো সময় কোরবানির নিয়তে পশু জবাই করলে তা কোরবানি হবে না। কোনো সওয়াবও পাওয়া যাবে না। জবাই কোরবানির পশু নিজেই জবাই করা উত্তম। তবে অন্যকে দিয়েও জবাই করানো যায়। জবাইয়ের সময় যে কয়জন ছুরিতে হাত লগাবে তাদের সবাইকে অবশ্যই বিসমিল্লাহ বলতে হবে। নচেৎ গোশত হালাল হবে না, কোরবানি শুদ্ধ হবে না। জবাইয়ের পর কোরবানির দোয়া বলা সুন্নত। তা না বললেও কোরবানি হবে। খাদ্যনালী, শ্বাসনালী এবং এর দুই পাশের দু’টি শাহরগ- এই মোট চারটি রগ থেকে কম করে হলেও যে কোনো তিনটি রগ কাটা আবশ্যক। এর কম হলে কোরবানি হবে না, গোশত হালাল হবে না। জবাইকারী ও কসাইয়ের পারিশ্রমিক তাদের ন্যায্য পারিশ্রমিক নিজের থেকে দিতে হবে। কোরবানি চামড়া বা গোশত দিয়ে তাদের পারিশ্রমিক আদায় করা জায়েয নেই। হ্যাঁ, নিজের থেকে ন্যায্য পারিশ্রমিক পরিপূর্ণ পরিশোধ করার পর উপহার হিসেবে গোশত, চামড়া দেওয়া যেতে পারে। গরিব হলে চামড়া বিক্রির টাকা দান করা যেতে পারে। গোশত কোরবানির গোশত নিজে খাওয়া যায়। যে কাউকেই দেওয়া যায়। তবে তিন ভাগ করা মোস্তাহাব। এক ভাগ নিজের পরিবারের জন্য। এক ভাগ আত্মীয়-স্বজনের জন্য। এক ভাগ গরিবদের জন্য। কোনো কোরবানি দাতা যদি নিজেই অভাবি হয় এবং তার পরিবারের সদস্য সংখ্যা বেশি হয় তবে সম্পূর্ণ গোশত নিজ পরিবারের জন্য রেখে দিলে দিতে পারবে। অমুসলিমদেরও কোরবানির গোশত দেয়া জায়েয আছে। তবে স্থানীয় মুসলিমদের বা পৌঁছানো সম্ভব এমন দূরবর্তী স্থানের মুসলিমদের অভাব অপূরণ থাকতে অমুসলিমদের প্রাধান্য দেওয়া অনুত্তম। কোরবানির গোশত ফ্রিজিং করে, রোদে শুকিয়ে বা যে কোনো উপায়ে বহুদিন পর্যন্ত সংরক্ষণ করা ও খাওয়া জায়েয আছে। এমনকি পরবর্তী ঈদ পার হয়ে গেলেও কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু তিন ভাগের দু’ভাগ বিলি না করে অনেক দিন পর্যন্ত খাওয়ার জন্য সংরক্ষণ করা ইসলামের চেতনা, আদর্শ ও বৈশিষ্ট্য বিরোধী। কৃপণতা ও ভোগবাদী মানসিকাতর লক্ষ্যণ। এতে ত্যাগ, উৎসর্গ ও বিসর্জনের কোনো ছাপ বুঝা যায় না। তাই এমনটি না করাই উত্তম। যে কোরবানি মৃতের ওসিয়ত অনুযায়ী তার পরিত্যক্ত সম্পদ থেকে দেওয়া হয়েছে ওই কোরবানির গোশত নিজেরা খাওয়া যাবে না, ধনীদের দেওয়া যাবে না। মান্নতের কোরবানির গোশতের বিধানও অনুরূপ। কিন্তু ওয়ারিশরা যদি নিজেদের সম্পদ থেকে মৃতের নামে কোরবানি দিয়ে থাকে তবে এ গোশত নিজেরাও খেতে পারবে এবং ধনীদেরও দিতে পারবে। গোশতের সামাজিক ভাগ অনেকে মনে করে কোরবানির গোশতের তিন ভাগের এক ভাগ সমাজের মানুষের জন্য। এ ভিত্তিতে অনেক স্থানেই মহল্লার সবার কোরবানির এক তৃতীয়াংশ সামাজিক চাপের মাধ্যমে একত্রিত করা হয়। এর পর তা সমানভাগে ভাগ করে মহল্লার ধনী-গরিব নির্বিশেষে সবখানাকে এক ভাগ করে দেয়। এ পদ্ধতিটি ভুল ধারণার ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত একটি ভুল প্রথা। কেননা, কোরবানির গোশতে সমাজের কোনো ভাগ নেই। আগের প্যারাতে আমরা আলোচনা করেছি ভাগ কাদের প্রাপ্য। যদি কোনো উপকারের প্রতি লক্ষ্য রেখে গোশতের সামাজিক ভাগ করতেই হয় তবে আবশ্যিকভাবে ৩টি শর্ত রক্ষা করতে হবে। যথা- এক. গোশত জমা দিতে অথবা এক তৃতীয়াংশ দিতে কাউকে সামাজিকভাবে বাধ্য করা যাবে না। দুই. গোশতের ভাগ শুধুমাত্র গরিবদের দিতে হবে। তিন. গোশতের ভাগ পাওয়ার জন্য মহল্লার মসজিদ, ঈদগাহ, স্কুল, সভা ইত্যাদিতে কোনো ধরণের চাঁদা-অনুদান-মুষ্টির চাল দান করার শর্ত আরোপ করা যাবে না। এ ক্ষেত্রে মহল্লার বাইরের অনাথ, দরিদ্র ও অসহায়দের প্রতি বিশেষ বিবেচনা করার প্রয়োজন আছে। গৃহকর্মীকে কোরবানির গোশত দিয়ে খেতে দেওয়া গৃহকর্মীকে তার কাজের পারিশ্রমিক হিসেবে হিসেবে, কাজের ওপর খুশি হয়ে কাঁচা গোশত দেওয়া যাবে না। অবশ্য পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের মতো তাদেরও কোরবানির গোশত দিয়ে ভাত-রুটি খাওয়ানো যাবে। কেননা, কোরবানির গোশতকে খাওয়ার উপযোগী করতে মালিককে বাড়তি পরিশ্রম ও অর্থ ব্যয় করতে হয়েছে। চামড়া, চর্বি, গোশত ও হাড় বিক্রি করা কোরবানির পশুর কোনো অংশ নিজে বিক্রি করা নাজায়েয। নিজে ভোগ করা যায়, যে কাউকে উপহার দেয়া যায়। তবে কোনো কারণে বিক্রি করলে তা করতে হবে দান করার নিয়তে এবং বিক্রিলব্ধ সম্পূর্ণ টাকা জাকাত প্রদানের খাতে দান করতে হবে। গোশত, চামড়া, চর্বি কাউকে উপহার দেওয়ার পর গ্রহীতা যদি নিজ প্রয়োজনে বা যে কোনো কারণে বিক্রি করে তা করতে পারবে। ফেলে দেওয়া হাড় অন্য কেউ কুড়িয়ে নিয়ে বিক্রি করলে করতে পারবে। কোরবানি দিতে না পারলে যার ওপর কোরবানি ওয়াজিব সে যদি কোরবানির নিয়তে পশু ক্রয় করে থাকে আর কোনো কারণে ১২ তারিখ সূর্যাস্তের আগে কোরবানি করতে না পারে তবে উক্ত পশু জীবিত দান করবে। যদি জবাই করে তবে সম্পূর্ণ অংশ গরিবদের দান করতে হবে। আর জবাইয়ের কারণে যদি মূল্যমান হ্রাস পায় তবে যে পরিমাণ মূল্যমান হ্রাস পেয়েছে সে পরিমাণ টাকাও দান করতে হবে। আর সে যদি কোরবানির নিয়তে পশু ক্রয় না করে থাকে, তবে মধ্যম মানের একটি ছাগলের মূল্য দান করবে। কাজা কোরবানি আদায় পিছনের কোনো বছরের কাজা কোরবানি আদায়ের নিয়তে কোরবানি দিলে এটা নফল কোরবানি হবে। কাজা আদায় হবে না। কাজা আদায়ের জন্য মূল্য দান করতে হবে।

শেয়ার করুন

0 comments:

পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়