Wednesday, July 15

ব্রাজিলের মুসলিমরা সাহরি ও ইফতার করেন একসঙ্গে


মোঃ আবুসালেহ সেকেন্দার: লাতিন আমেরিকার সবচেয়ে বড় দেশ ব্রাজিলে ইসলাম ধর্মের প্রবেশ ঘটে ১৫০০ শতাব্দীতে আফ্রিকার কৃতদাসদের মাধ্যমে। ঐতিহাসিক সূত্রে জানা যায়, সমসাময়িক সময়ে ব্রাজিল শাসন করত পর্তুগাল। এ অঞ্চল ছিল পর্তুগিজদের উপনিবেশ। ব্রাজিল থেকে পর্তুগিজদের আয়ের অন্যতম উৎস ছিল আখ চাষ। এ আখ চাষের জন্য প্রয়োজনীয় শ্রমিক ব্রাজিলে ছিল না। ফলে পর্তুগিজরা আখ চাষের শ্রমিক হিসেবে আফ্রিকা থেকে নিগ্রোদের ব্রাজিলে নিয়ে আসে। এ নিগ্রোদের অনেকে মুসলিম ছিলেন। আফ্রিকার নিগ্রোদের মাধ্যমে ব্রাজিলে ইসলাম প্রচার শুরু হলে অল্প সময়ের মধ্যেই ইসলামের উদারতা ও সাম্যের সৌন্দর্যে আকৃষ্ট হয়ে বহু মানুষ ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন। ১৮ শতকে ব্রাজিলে মুসলিমদের নেতৃত্বেই প্রথম বড় দাস বিদ্রোহ সংঘটিত হয়। পরবর্তী সময়ে আরব, সিরিয়া ও লেবাননের অনেক মুসলিম অভিবাসী হিসেবে ব্রাজিলে বসবাস শুরু করেন। ১৯ শতকের শুরুতে পরিচালিত এক আদমশুমারি থেকে জানা যায়, ওই সময়ে ব্রাজিলে মুসলিমদের সংখ্যা ছিল ১০ লাখ। তবে ২০০১ সালের আদমশুমারিতে ব্রাজিলের মুসলিমের সংখ্যা ২৭ হাজার ২৩৯ জন বলে উল্লেখ করা হয়েছে। যদিও ২০১০ সালের শুমারি অনুযায়ী, ৩৫ হাজার ২০৭ জন। ব্রাজিলের ফুমিনেস ফেডারেল বিশ্ববিদ্যালয়ের প-িত পাওয়েল পিন্টোর মতে, ব্রাজিলে মুসলিমদের সংখ্যা প্রায় ১ মিলিয়ন। তবে ব্রাজিল ফাউন্ডেশনের তথ্যমতে, ওই সংখ্যা দেড় মিলিয়ন ছাড়িয়ে যাবে। এদেশের বেশিরভাগ মুসলিমই ব্যবসা-বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িত। ব্রাজিলে মুসলমানদের সংখ্যা কত, তা নিয়ে বিতর্ক থাকলেও বিশ্বের মুসলমানদের মতো ব্রাজিলের মুসলিমরাও মাহে রমজান পালন করে- সেই বিষয়ে কোনো বিতর্ক নেই। যদিও এদেশের তাপমাত্রা অনেক বেশি উষ্ণ। ফলে ব্রাজিলে রমজান পালন করা সহজ নয়। অমুসলিম দেশ হওয়ায় মাহে রমজানে অধিকাংশ কফি হাউস, রেস্তোরাঁ ও খাবারের দোকানগুলো দিনে খোলা থাকে। প্রকাশ্যে ধূমপান করা ব্রাজিলিয়ানের সংখ্যাও কম নয়। ফলে মাহে রমজানে এ বিষয়গুলো একজন মুসলিমকে বেশ বিব্রতকর অবস্থায় ফেলে। মুসলিম সেলিব্রেট রামাদান ইন ব্রাজিল প্রবন্ধ অনুসারে 'রমজানে ব্রাজিলের মুসলিমরা প্রার্থনার সময় উল্লেখ সংবলিত বড় বড় ক্যালেন্ডার ঝুলিয়ে রাখে এবং তারা মসজিদের নিকটবর্তী স্থানে বাস করে।' তিউনিসিয়ার মুসলিমদের মতো ব্রাজিলের মুসলিমরাও পরিবারের সব সদস্যের সঙ্গে একত্রে সাহরি ও ইফতার করতে ভালোবাসেন। পরিবারের সদস্য ও বন্ধুবান্ধব নিয়ে ইফতার করতে তারা স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। ব্রাজিলে প্রায় ১২৭টি মসজিদ রয়েছে। সাও পাওলোতে মসজিদের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। রমজানে এখানকার মুসলিমরা একত্রে মসজিদে নামাজ আদায় করেন। নিয়মিত তারাবি পড়েন। এমনকি সাহরি ও ইফতার করেন একত্রে। সাও পাওলোর মতো সান্তোস পারানা স্টেটসহ বহু অঞ্চলের মসজিদে রমজানে ২০০ থেকে ৪০০ মুসলি্লকে নিয়মিত নামাজ পড়তে দেখা যায়। অন্য সময়ে মুসলমানরা মসজিদে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়তে গেলেও রমজানে তারা মসজিদে কোরআন তেলাওয়াত ও আলোচনার আয়োজন করে। 'রামাদান চেঞ্জ ফর মুসলিমস টু বি রিকোনাইজড ইন ব্রাজিল প্রবন্ধ মতে, ব্রাজিলে মুসলিমরা ইফতার করার জন্য মসজিদে গমন করে; যেখানে গরিবদের জন্যও ইফতারের আয়োজন থাকে। এদেশের মুসলিমরা একে অপরের সঙ্গে ইফতার ভাগ করে খেতে পছন্দ করে। তারা মাহে রমজানকে শুধু উপবাস পালন করা হিসেবে গণ্য না করে এ সময়ে ইসলামের বিধিবিধান ও অনুশীলনগুলো চর্চার বা প্রশিক্ষণের মাস হিসেবে বিবেচনা করে প্রতিটি সময় নিজেকে ইবাদতে নিয়োজিত রাখে। তারা নিজেদের সম্পদ থেকে গরিবদের দান করার জন্য রমজানই সবচেয়ে উপযুক্ত সময়- এমনটি মনে করে। ফলে রমজানে দান করার পরিমাণ বেড়ে যায়। মুসলিম শিশুদের দেখাশোনার জন্য ডে কেয়ার সেন্টার স্থাপন করা হয় এবং বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবারও আয়োজন করা হয় বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের পক্ষ থেকে মাহে রমজানে। ব্রাজিলের অন্যতম ব্যস্ত শহর রিও ডি জেনেইরোতে বড় মসজিদ আছে কয়েকটি। এখানে আরও আছে ইসলামিক সেন্টার। আমাজনের দেশ খ্যাত ব্রাজিলের রাজধানী ছাড়াও অন্য শহরগুলোয় এমন মুসলিম বা ইসলামিক সেন্টার চোখে পড়ে। রমজান এলেই এ মুসলিম বা ইসলামিক সেন্টারগুলো আরও সক্রিয় হয়। তারা রমজানে মুসলিমদের জন্য নানা প্রশিক্ষণ-কর্মশালার আয়োজন করে। ইসলাম ধর্ম-সম্পর্কিত ওইসব প্রশিক্ষণ-কর্মশালা থেকে মুসলমানরা ইসলামের মৌলিক বিষয় সম্পর্কে জ্ঞানার্জন করতে পারে। প্রকৃতপক্ষে, মাহে রমজান ব্রাজিলের মুসলিমদের জন্য উৎসবমুখর পরিবেশ তৈরি করে। সহকারী অধ্যাপক, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়

শেয়ার করুন

0 comments:

পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়