Monday, July 6

মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনা!কানাইঘাটে এক পরিবারের স্বপ্ন তছনছ


নিজস্ব প্রতিবেদক: গত রবিবার বিয়ানীবাজার সিলেট সড়কের চারখাইয়ের নাটেশ্বর এলাকায় মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় কানাইঘাটের একটি প্রবাসী পরিবারের সাজানো স্বপ্ন ধুমড়ে মুছড়ে গেছে। কানাইঘাট থানায় দায়েরকৃত একটি ডাকাতি মামলার ব্যাপারে সিলেটের পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে স্বাক্ষী দিতে গিয়ে লাশ হলেন উপজেলার সাতবাঁক ইউপির লালারচক গ্রামের সৌদি প্রবাসী রফিক আহমদ চৌধুরীর স্ত্রী তিন সন্তানের জননী গৃহবধূ জেসমিন আক্তার চৌধুরী (৩২) কে। মর্মান্তিক এ সড়ক দুর্ঘটনায় জেসমিন আক্তার চৌধুরীর অকাল মৃত্যুতে তার পরিবারের সদস্য ও আত্মীয় স্বজনদের গগণ বিরোধী কান্নায় এলাকার বাতাস ভারী হয়ে উঠেছে। এলাকার কেউ এ অনাকাংখিত মৃত্যু মেনে নিতে পারছেন না। নিহতের বাড়ীতে গিয়ে পরিবারের সদস্যদের শান্তনা দিচ্ছেন সবাই। সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত জেসমিন আক্তার চৌধুরীর লাশ বর্তমানে সিলেট ওমেক হাসপাতালে হিমাঘারে রাখা হয়েছে। তার সৌদি প্রবাসী স্বামী রফিক আহমদ চৌধুরী ২/১ দিনের মধ্যে দেশে ফেরার পর লাশ দাফন করা হবে বলে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত জেসমিন আক্তার চৌধুরীর দেবর একটি ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির উর্ধ্বতন কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম চৌধুরী জানিয়েছেন। তবে পরিবারের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত বিয়ানীবাজার থানায় নিহতের পরিবারের পক্ষ থেকে কোন মামলা দায়ের করা হয়নি। মামলা প্রক্রীয়াধীন রয়েছে বলে নিহতের পরিবারের পক্ষ থেকে জানা গছে। জানা যায়, কয়েকমাস পূর্বে লালারচক গ্রামের সৌদি প্রবাসী রফিক আহমদ চৌধুরীর বাড়ীতে দুর্ধর্ষ ডাকাতি সংঘটিত হয়। অস্ত্রধারী ডাকাতরা সে সময় প্রবাসীর স্ত্রী জেসমিন আক্তার চৌধুরী ও তার সন্তানদের মারধর করে জিম্মি করে নগদ টাকা স্বর্ণালংকার, দামি কয়েকটি মোবাইল সেট সহ অনুমান ১৫ লক্ষাধিক টাকার মালামাল লুট করে নিয়ে যায়। ডাকাতির ঘটনায় মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত জেসমিন আক্তার চৌধুরী সে সময় থানায় ডাকাতি মামলা দায়ের করলে সে সময় পুলিশ ডাকাতির মামলা নেয় নি। বাধ্য হয়ে জেসমিন আক্তার চৌধুরী সিলেটের আদালতে ডাকাতি মামলা দায়ের করলে বিজ্ঞ আদালত মামালটি এফ.আই.আর করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য কানাইঘাট থানার অফিসার ইনচার্জ আব্দুল আউয়াল চৌধুরীকে নির্দেশ প্রদান করেন। মামলাটি রেকর্ড করে তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয় থানার এস.আই তাপস চন্দ্র রায়কে। তিনি ডাকাতি ঘটনার সাথে জড়িত ৩ ডাকাতকে গ্রেফতার করলেও কোন লুন্ঠিত মালামাল উদ্ধার কিংবা এ ডাকাতি ঘটনার সাথে জড়িত অন্যান্য অপরাধীদের গ্রেফতারে ব্যর্থ হওয়ায় এ নিয়ে প্রবাসী পরিবারের সদস্য ও মামলার বাদীর তদন্ত নিয়ে অনীহার সৃষ্টি হয়। মামলাটি অধিকতর তদন্ত করে ডাকাতি ঘটনার সাথে জড়িত অপরাধীদের তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে চিহ্নিত করে গ্রেফতার ও লুন্ঠিত মালামাল উদ্ধারের জন্য সম্প্রতি মামলার বাদী প্রবাসীর স্ত্রী নিহত জেসমিন আক্তার চৌধুরী সিলেট রেঞ্জ পুলিশের ডিআইজি বরাবরে একটি অভিযোগ দেন। অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে বিষয়টি তদন্ত করার জন্য ডিআইজি সিলেট রেঞ্জ সিলেটের পুলিশ সুপার নূরে আলম মিনাকে নির্দেশ প্রদান করলে তিনি অভিযোগের প্রেক্ষিতে তদন্ত পূর্বক ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সিলেট উত্তর সার্কেলের এএসপি ধীরেন্দ্র চন্দ্র মহাপাত্রকে নির্দেশ প্রদান করেন। গত শনিবার জেসমিন আক্তার চৌধুরীকে কানাইঘাট থানা পুলিশ সূত্রে জানানো হয় তাঁর অভিযোগের প্রেক্ষিতে স্বাক্ষী দেওয়ার জন্য গত রবিবার সকাল ১০টার মধ্যে পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে উত্তর সার্কেলে এএসপি ধীরেন্দ্র চন্দ্র মহাপাত্রের অফিসে যাওয়ার জন্য। পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে স্বাক্ষী দেওয়ার জন্য গত রবিবার সকাল ৭টার সময় একটি অটোরিক্সা (সিলেট-থ-১২-১৯৬৯) সিএনজি গাড়ী নিয়ে নিজ বাড়ী থেকে বইনপো শাহরিয়ার চৌধুরী (২৬) কে নিয়ে বের হন জেসমিন আক্তার চৌধুরী। পথিমধ্যে বিয়ানীবাজার-সিলেট সড়কের নাটেশ্বর এলাকায় সকাল ৯টার দিকে পৌঁছামাত্র বিপরীত থেকে আসা সিলেট থেকে জকিগঞ্জগামী যাত্রীবাহী বাস (সিলেট-জ-১১-০৭০৫) অটোরিক্সাকে স্বজোরে ধাক্কা দিলে অটোরিক্সাটি ধুমড়ে মুছড়ে গিয়ে ঘটনাস্থলেই নিহত হন প্রবাসীর স্ত্রী জেসমিন আক্তার চৌধুরী। গুরুতর আহত অবস্থায় অটোরিক্সা চালক শরিফ উদ্দিন ও নিহতের বইনপো শাহরিয়ার চৌধুরীকে সিলেট ওমেক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। স্থানী এলাকাবাসী জানিয়েছেন নিজ বাড়ীতে ডাকাতির ঘটনার পর থেকে নিহত জেসমিন আক্তার চৌধুরী মামলার বাদী হয়ে নিরাপত্তাহীনতায় ভোগছিলেন। এরপরও এ ঘটনার সাথে জড়িত ডাকাতদের গ্রেফতার ও লুন্ঠিত মালামাল উদ্ধার করার জন্য তিনি সাহসিকতার সহিত মামলা পরিচালনা করছিলেন। কিন্তু, সেই মামলার অধিকতর তদন্তের জন্য পুলিশের কাছে স্বাক্ষী দিতে গিয়ে না ফেরার দেশে চলে গেলেন জেসমিন আক্তার চৌধুরী।

শেয়ার করুন

0 comments:

পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়