Saturday, June 6

শিশুকে নামাজ শিক্ষা দিন


আবু বকর সিরাজী: সন্তানকে আদর্শ মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে হলে নামাজ শিক্ষাদানের বিকল্প নেই। হাদিসে এ বিষয়ে খুবই তাগিদ দেয়া হয়েছে। এক হাদিসে এরশাদ হয়েছে, ‘তোমরা সন্তানদের সাত বছর বয়সে নামাজের তালিম দাও, আর ১০ বছর হলে প্রয়োজনে হালকা প্রহার করো।’ হাদিস বিশারদ ও ফকিহরা সন্তানদের নামাজ শিক্ষার আদেশ এবং এ কারণে ১০ বছর বয়সে প্রয়োজনে শাসন করার গুরুত্ব সম্পর্কে আলোকপাত করতে গিয়ে এর একাধিক কারণ উল্লেখ করেছেন। যথা- ১. আল্লাহ তায়ালা প্রতিটি মানুষকে এবং তার পরিবার-পরিজনকে জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচার আদেশ করেছেন। কোরআনে এরশাদ করেছেন, ‘হে ঈমানদাররা! তোমরা নিজেদের এবং নিজের পরিবার-পরিজনকে জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচাও।’ ২. জাহান্নাম থেকে বাঁচার উপায় হিসেবে উল্লেখ করেছেন, ‘আপনি পরিবারের লোকদের নামাজের আদেশ করুন এবং এ ব্যাপারে ধৈর্যধারণ করুন।’ কোরআন-হাদিসের এ আদেশ পালন না করলে মা-বাবা গোনাহের ভাগি হবেন। ইবনে তায়মিয়া (রহ.) বলেন, যার অধীনে শিশু, গোলাম, এতিম বা নিজ সন্তান রয়েছে আর সে তাদের নামাজের আদেশ করেনি, তাকে পাকড়াওয়ের সম্মুখীন হতে হবে। পরকালীন ব্যাপার তো আছেই, দুনিয়াতেই তাকে শাস্তি দিতে হবে। কেননা সে আল্লাহ তায়ালা ও তাঁর রাসুলের আদেশ লঙ্ঘন করেছে।’ ৩. সন্তানকে নামাজের আদেশ করায় শুধু পরকালীন লাভই নয়, ইহকালীন লাভও এখানে নিহিত। কেননা নামাজের মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালার সঙ্গে বান্দার সম্পর্ক তৈরি হয়। এ সম্পর্কের ফলে তারা ব্যক্তিজীবনের যাবতীয় হক আদায় করতে তৎপর থাকে। পক্ষান্তরে নামাজের মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালার সঙ্গে শিশুর সম্পর্ক ও বন্ধনই যদি তৈরি না হয় তবে সে পরিবার-পরিজনের সঙ্গে কীভাবে বন্ধন তৈরি করবে? তার দ্বারা পরবর্তী জীবনে অকল্যাণ, অবাধ্যতা তো প্রকাশ পাবেই। কেননা যে সৃষ্টিকর্তা ও রিজিকদাতার সঙ্গে সুসম্পর্ক তৈরি করে না, সে মাখলুকের সঙ্গেও সুসম্পর্ক তৈরি করতে সক্ষম হবে না, চাই সে তার মা-বাবা বা আত্মীয়-স্বজনই হোক না কেন। সুতরাং সন্তানের কাছ থেকে ভবিষ্যতে ভালো আচরণ, সদ্ব্যবহার এবং কল্যাণ পেতে হলে অবশ্যই বাল্যকাল থেকেই নামাজের আদেশ করতে হবে। তবেই তারা মা-বাবার চোখের প্রশান্তি এবং আত্মার শান্তির কারণ হবে। ৪. আমরা সন্তানের জাগতিক কষ্ট বা বিপদ মেনে নিতে প্রস্তুত থাকি না। তবে আখেরাতের ভয়াবহ শাস্তি ও জাহান্নামের পরিণতি মানতে পারি কী করে? আর নামাজ না পড়লে এবং দ্বীনের ওপর না চললে তো তার এ করুণ ও কঠিন পরিণতি ভোগের প্রায় নিশ্চিত সম্ভাবনা রয়েছে। কাউকে আল্লাহ তায়ালা মাফ করলে সেটা অবশ্য ভিন্ন কথা। ৫. নামাজ হচ্ছে নূর। কেয়ামত দিবসে এ নূর ছাড়া কেউ মুক্তির রাস্তা খুঁজে পাবে না। সুতরাং আমরা কি আমাদের সন্তানদের মুক্তির রাস্তা থেকে বিচ্যুত হওয়া বরদাশত করতে পারি? ৬. ছেলেসন্তান আমাদের কাছে আমানত। এ আমানতের বস্তু নেককার, সৎ এবং মহৎ হোক; তা কেনা কামনা করে? সুতরাং এ কামনা যথার্থ হওয়ার জন্য শর্ত হচ্ছে নামাজ ও দ্বীনের কাজে আদেশ করা। ৭. সন্তানের দেখভাল এবং তাদের ভালোমন্দের খবরাখবর রাখা মা-বাবার দায়িত্ব। আর প্রতিটি দায়িত্বশীল লোক তার ওপর অর্পিত দায়িত্বের ব্যাপারে জিজ্ঞাসিত হবে। হাদিসে এরশাদ হয়েছে, ‘তোমরা প্রত্যেকেই দায়িত্বশীল এবং প্রত্যেকে নিজ নিজ দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে।’ ৮. নামাজ আদায় করার বরকতে সন্তানের মধ্য থেকে মুনাফেকি, কুফরি এবং সব ধরনের গোমরাহি চিন্তার উচ্ছেদ ঘটে। বর্তমানে মানবশিশুর সবচেয়ে আতঙ্কের বিষয় হচ্ছে তাদের মনমস্তিষ্ক বেদ্বীনদের দ্বারা প্রভাবিত হওয়ার আশঙ্কা। কিন্তু এ বয়স থেকে নিয়মিত নামাজ আদায়ে অভ্যস্ত করে তুললে আশঙ্কা অনেকটাই কেটে যায়। সুতরাং সন্তানকে কুফরি ও নেফাকির হাত থেকে বাঁচাতে হলে অবশ্যই রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আদেশ অনুযায়ী সাত ও ১০ বছর থেকে নিয়মিত নামাজে অভ্যস্ত করাতে হবে। উল্লিখিত কারণগুলো ছাড়াও সন্তানকে নামাজি করে গড়ে তোলায় আরও অনেক ফায়দা রয়েছে। তাই মা-বাবার কর্তব্য হচ্ছে সন্তানকে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আদেশ ও সুন্নাহ মোতাবেক গড়ে তোলা।

শেয়ার করুন

0 comments:

পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়