Thursday, June 4

অন্যায় রক্তপাতের ভয়াবহ পরিণতি


শায়খ ড. উসামা বিন আবদুল্লাহ খাইয়াত: ধর্মভীরু মুত্তাকি লোকদের আখলাক ও চরিত্রে চরিত্রবান হওয়ার প্রবল আগ্রহ মোমিন ব্যক্তির মধুর আচরণ, সুন্দর চরিত্র ও মহৎ গুণাবলির অন্যতম পরিচায়ক। পাশাপাশি নীচু প্রকৃতির পাপাচারে লিপ্ত দুশ্চরিত্র শ্রেণীর লোকদের আচার-আচরণ সার্বক্ষণিকভাবে বর্জন করাও তাদের চরিত্রের মূল দিক। এসব পাপীর অন্তর কলুষিত। তাদের স্বভাব-চরিত্র নিকৃষ্ট। মনগুলো পাষাণ। তারা তাদের প্রতিপালকের নির্দেশ লঙ্ঘন করেছে। শয়তান তাদের কর্মকা-কে তাদের কাছে সুসজ্জিত করে দিয়েছে। আল্লাহ ও তাঁর রাসুল যেসব কাজকে সুন্দর বলে আখ্যায়িত করেছেন শয়তান সেগুলোকে তাদের কাছে নিকৃষ্টরূপে হাজির করেছে। তাদের প্রলোভন দিয়ে পাপ কাজে উদ্বুদ্ধ করেছে। ফলে পাপকর্মটি তাদের কাছে তুচ্ছ হয়ে মনের মধ্যে সুন্দরভাবে আসন গেড়ে বসেছে। তাই তারা অন্যায় ও গোনাহের প্রতিযোগিতায় নেমে ভ্রষ্টতা ও বাতিলের অতল খাদে ঝুলন্ত অবস্থায় আছে। সীমা লঙ্ঘন ও বাড়াবাড়িতে লিপ্ত হয়ে ভুল ও অপরাধের দুর্গন্ধ জগতে একাকার হয়ে গেছে। জঘন্য লালসা মেটাতে ও নিকৃষ্ট উদ্দেশ্য পূরণে পাপের সব পথে এ যেন এক অবাধ প্রতিযোগিতা। এ উদ্দেশ্য পূরণ করতে তারা সব পন্থাই অবলম্ব্বন করে, সব বাহনেই আরোহণ করে। তাদের বর্ণনা আল্লাহ তায়ালা এভাবে দিয়েছেন_ 'তারা মর্যাদা দেয় না কোনো মুসলমানের ক্ষেত্রে আত্মীয়তার, আর না অঙ্গীকারের। আর তারাই সীমা লঙ্ঘনকারী।' (সূরা তওবা : ১০)। অর্থাৎ মোমিনের ক্ষেত্রে তারা আত্মীয়তার হকের কোনো পরোয়া করে না, অঙ্গীকার রক্ষা করে না, তাদের হাতে ক্ষমতা চলে এলে অন্য কারও অস্তিত্ব বাকি রাখে না। রক্তপাত ঘটানোর ক্ষেত্রে তাদের মধ্যে এমন স্পর্ধা ও ঔদ্ধত্য দেখা যায়, যে স্পর্ধার কোনো নজির হয় না, নিরপরাধ মানুষের জান নিয়ে তারা ছিনিমিনি খেলে, যে জানকে অন্যায়ভাবে হত্যা করা আল্লাহ তায়ালা হারাম করে দিয়েছেন। জান নিয়ে এই ছিনিমিনির মতো অপরাধ আর দ্বিতীয়টি নেই। অন্যায় রক্তপাতের এ নমুনা অনেক প্রাচীন। নিজের লালসা পূরণ করতে গিয়ে শয়তানের প্ররোচনায় অন্যায়ভাবে নিজ ভাইকে হত্যার মাধ্যমে এ ধারার সূত্রপাত করেছিল হজরত আদম (আ.) এর এক ছেলে। আদমের ছেলেটির ঘটনাটি আল্লাহ তায়ালা মোমিনদের শিক্ষা গ্রহণের জন্য সূরা মায়েদায় বর্ণনা করেছেন_ 'আপনি তাদের আদমের দুই ছেলের বাস্তব অবস্থা পাঠ করে শোনান। যখন তারা উভয়েই কিছু উৎসর্গ নিবেদন করেছিল, তখন তাদের একজনের উৎসর্গ গৃহীত হয়েছিল এবং অপরজনের গৃহীত হয়নি। সে বলল_ আমি অবশ্যই তোমাকে হত্যা করব। সে বলল, আল্লাহ ধর্মভীরুদের পক্ষ থেকেই তো গ্রহণ করেন। যদি তুমি আমাকে হত্যা করতে আমার দিকে হস্ত প্রসারিত করো, তবে আমি তোমাকে হত্যা করতে তোমার দিকে হস্ত প্রসারিত করব না। কেননা, আমি বিশ্বজগতের পালনকর্তা আল্লাহকে ভয় করি। আমি চাই যে, আমার পাপ ও তোমার পাপ তুমি নিজের মাথায় চাপিয়ে নাও। অতঃপর তুমি দোজখিদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাও। এটাই অত্যাচারীদের শাস্তি। অতঃপর তার অন্তর তাকে ভ্রাতৃহত্যায় উদ্বুদ্ধ করল। অনন্তর সে তাকে হত্যা করল। ফলে সে ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে গেল।' (সূরা মায়েদা : ২৭-৩০)। হে আল্লাহর বান্দারা! সবচেয়ে নিকৃষ্ট ও জঘন্য জুলুম হলো অন্যায়ভাবে রক্তপাত করা, নিরপরাধ মানুষকে হত্যা করা, যে অন্যায় রক্তপাতকে আল্লাহ তায়ালা হারাম করে দিয়েছেন। নিরপরাধ প্রাণের ওপর হামলা করাকে আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার নামান্তর ঘোষণা করেছেন। আল্লাহর সঙ্গে শিরক করার পর এটিকেই সবচেয়ে মারাত্মক কবিরা গোনাহ ও জঘন্য অপরাধ হিসেবে গণ্য করেছেন। এ কারণেই রাসুলুল্লাহ (সা.) বিদায় হজের ভাষণে মানুষের জানমালের নিরাপত্তার বিষয়টিকে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হিসেবে নির্ধারণ করে উদাত্ত কণ্ঠে ঘোষণা করেন_ 'তোমাদের জীবন ও তোমাদের সম্পদ তোমাদের ওপর এমন পবিত্র, যেমন পবিত্র আজকের তোমাদের এই পবিত্র দিনটি, তোমাদের এই পবিত্র মাসে, তোমাদের এই পবিত্র নগরীতে।' জাবের ইবনে আবদুল্লাহ এ হাদিসটি বর্ণনা করেন। (মুসলিম)। এ ভাষণে নবী কারিম (সা.) উল্লেখ করেছেন_ 'প্রত্যেক মুসলিমের ওপর অপর মুসলিমের রক্ত, সম্পদ ও ইজ্জত হারাম।' (মুসলিম)। তাই এই প্রকাশ্য মারাত্মক অপরাধে জড়িত হওয়ার শাস্তিস্বরূপ আল্লাহর গজব ও অভিশাপ অবধারিত হয়ে যায়। আল্লাহর কঠিন আজাব জাহান্নামের আগুনে প্রবেশ করতে হয়। আল্লাহ তায়ালা বলেন_ 'যে ব্যক্তি স্বেচ্ছায় মুসলমানকে হত্যা করে, তার শাস্তি জাহান্নাম, তাতেই সে চিরকাল থাকবে। আল্লাহ তার প্রতি ক্রুদ্ধ হয়েছেন, তাকে অভিসম্পাত করেছেন এবং তার জন্য ভীষণ শাস্তি প্রস্তুত রেখেছেন।' (সূরা নিসা : ৯৩)। আল্লাহর কাছে অন্যায় রক্তপাতের বিষয়টি কত গুরুতর তা বোঝাতে গিয়ে রাসুল (সা.) বলেছেন_ 'যার হাতে আমার প্রাণ তার কসম করে বলছি, মুসলমানকে হত্যা করা আল্লাহর কাছে দুনিয়া ধ্বংস হওয়ার চেয়েও গুরুতর বিষয়।' (তিরমিজি ও নাসাঈ)। অন্যায়ভাবে মুসলমানকে হত্যা করার শাস্তি এতে জড়িত প্রত্যেককেই ভোগ করতে হবে। রাসুল (সা.) এরশাদ করেন_ 'যদি আসমান ও দুনিয়াবাসী কোনো মোমিনের রক্তপাতে জড়িত হয় আল্লাহ তায়ালা তাদের জাহান্নামে অধোমুখী করে নিক্ষেপ করবেন।' (নাসাঈ)। ১১ শাবান ১৪৩৬ হিজরি মসজিদে হারামে প্রদত্ত জুমার খুতবাটি সংক্ষেপে ভাষান্তর করেছেন মাহমুদুল হাসান জুনাইদ

শেয়ার করুন

0 comments:

পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়