আশিক আহমেদ:
প্রতিদিনই বাড়ছে আগুনে পোড়া রোগীদের সংখ্যা।ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিট রোগীতে উপচে পড়ছে।তিল ধরার ঠাই নেই।এরই মধ্যে ধারন ক্ষমতার ছয়গুণ রোগী ভর্তি হয়েছে। হিমশিম খাচ্ছেন নার্স ও ডাক্তাররা।অবস্থা বেগতিক দেখে অর্থাৎ রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় খোদ রাজধানীতেই আরও চারটি হাসপাতালে আগুনে পোড়া রোগীদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এছাড়াও দেশের বিভিন্ন হাসপাতাল থেকে চিকিৎসক এনে তাদের প্রশিক্ষণ দিয়ে হরতাল-অবরোধে পিকেটারদের দেওয়া আগুনে পোড়া রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সরকারিভাবে ১০০ জন রোগীর চিকিৎসার ব্যবস্থা রয়েছে। কিন্তু সেখানে পোড়া রোগীর সংখ্যা এখন ছয় শতাধিক। এই রোগীদের মধ্যে ৫২ জন সাম্প্রতিক হরতাল-অবরোধে বিভিন্ন যানবাহনে দেয়া আগুনে দগ্ধ। এত রোগীকে সামাল দিতে পর্যাপ্ত চিকিৎসক-নার্স-ওয়ার্ডবয়-পরিচ্ছন্নতাকর্মীর সংকট নিয়ে বার্ন ইউনিট নিজেই এখন বিপর্যয়ের মুখে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, হরতাল-অবরোধে দগ্ধদের জন্য বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের দোতলার একটি কক্ষ ও বারান্দায় নতুন একটি ওয়ার্ড খোলা হয়েছে। রোগীর চাপ সামলাতে জরুরি ভিত্তিতে বিভিন্ন সরকারি হাসপাতাল থেকে ৫০ জন নার্স আনা হয়েছে, চাওয়া হচ্ছে অভিজ্ঞতাসম্পন্ন চিকিৎসক। বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারির বিভাগীয় প্রধান আবুল কালাম সরকারের কাছে জরুরি ভিত্তিতে ৪৭ ধরনের সেবা সামগ্রী চেয়েছেন।
হাসপাতাল সূত্র জানায়, এ মুহূর্তে ইউনিটে ৩১ জন চিকিৎসক ৬০০ রোগীর জন্য তিন পর্বে কাজ করছেন। তাদের মধ্যে সরকারের অনুমোদিত চিকিৎসক ৯ জন, ১৯ জন চিকিৎসক স্নাতকোত্তর শিক্ষা নিচ্ছেন এবং তিনজন অবৈতনিক চিকিৎসক। তিনটি পালায় নার্স কাজ করছেন ৮০ জন। পরিচ্ছন্নতাকর্মী রয়েছেন ১৬ জন।
একজন চিকিৎসক বলেছেন, পরিস্থিতি সামাল দিতে তাঁরা ব্যক্তিগত চেম্বার বন্ধ করে দিয়েছেন। যাত্রাবাড়ীতে বাসে আগুনে পুড়ে যখন একসঙ্গে ২৯ দগ্ধ যাত্রী আসে, তখন নার্স ও ওয়ার্ডবয়দের সঙ্গে আনসারদেরও হাত লাগাতে হয়েছে বলে ওই চিকিৎসক জানান।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন চিকিৎসক বলেন, আমরা দিনরাত কাজ করলেও রোগীরা পর্যাপ্ত সেবা পাচ্ছেন, সে কথা জোর দিয়ে বলা যাচ্ছে না। প্রতি পালায় ১০ জন চিকিৎসক। তাঁরাই রোগী দেখছেন, তাঁরাই জরুরি অস্ত্রোপচার করছেন, ভিআইপিরা আসছেন, তাঁদের প্রটোকলও দিচ্ছেন। আমি গতকাল ঢাকার বাইরে গিয়েছিলাম। বাসায় ফিরতেই হাসপাতালের ফোন। ভোররাত সাড়ে চারটা পর্যন্ত হাসপাতালে থেকে দুপুরে আবার এসেছি।
ঢাকা মেডিকেলের বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটে শয্যা ১০০টি। গড়ে সাড়ে ৪০০ থেকে ৫০০ রোগী থাকেন। এই সংখ্যা এখন আরও বেড়েছে। যাত্রবাড়ীতে বাসে পেট্রলবোমা হামলায় ২৯ জনকে জায়গা দিতে বার্ন ইউনিটের দোতলায় গায়ে গায়ে বিছানা ফেলা হয়েছে। হরতাল-অবরোধে দগ্ধ রোগীদের চিকিৎসাকাজের সমন্বয় করছেন চিকিৎসক লুৎফর কাদের।
তিনি বলেন, এ মুহূর্তে আরও ছয়-সাতজন রোগীকে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে নেওয়া প্রয়োজন। কিন্তু নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রটি ১০ শয্যার। এর পাঁচটিতে আগে থেকেই হরতাল-অবরোধে দগ্ধ রোগীরা আছেন। আর কোনো শয্যা খালি নেই। ফলে বাকিদের জায়গা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।
চিকিৎসকেরা বলেন, শ্বাসতন্ত্র পুড়ে গেছে যেসব রোগীর, তাঁদের শয্যারপাশেই ভেন্টিলেশনের ব্যবস্থা থাকা প্রয়োজন। এখন সংকটাপন্ন রোগীদের মধ্য থেকে যাঁরা বেশি সংকটাপন্ন, তাঁদের বেছে জায়গা দেওয়া হচ্ছে।
রোগী বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বেড়েছে দর্শনার্থীদের ভিড়ও। পুরো বার্ন ইউনিট পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা।
জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের অবৈতনিক উপদেষ্টা সামন্ত লাল সেন ঢাকাটাইমসকে বলেন, হাসপাতালে পোড়া রোগীদের চাপ সামলাতে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে চিকিৎসক আনা হচ্ছে। তাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। এছাড়াও নার্স ওয়ার্ড বয়দের আন্তরিকতার কারণে এখনও পর্যন্ত ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে রোগীদের ভালোভাবে চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে।
তিনি জানান, তবে রাজধানীর মিডফোর্ডের স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, শহিদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতাল, কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল ও মুগদা সরকারি হাসপাতালেও আগুনে পোড়া রোগীদের চিকিৎসার ব্যবস্থা রয়েছে। সেখানকার চিকিৎসাও ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটের মতো অভিজ্ঞতা সম্পন্ন চিকিৎসকদের দিয়ে করানো হয়ে থাকে।
------ঢাকাটাইমস
খবর বিভাগঃ
সারাদেশ
0 comments:
পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়