মুনশি মুহাম্মদ উবাইদুল্লাহ:
গে যুগে তাবলিগের দায়িত্ব পালন করেছেন নবী ও রাসূলরা (আ.)। তাদের অব্যাহত সে মেহনতের ফলে মরক্কো থেকে চীনের প্রাচীর পর্যন্ত পৃথিবীর বিভিন্ন জনপদ ইসলামের আলোকে উদ্ভাসিত হয়। মুবালি্লগদের মানবীয় মূল্যবোধ, চারিত্রিক দৃঢ়তা ও সহমর্মিতাসুলভ গুণাবলি বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর মানুষকে একে অপরের কাছে নিয়ে আসতে অনুপ্রাণিত করে। শুধু উপমহাদেশ নয়, এখন বিশ্বের প্রায় অনেক অঞ্চলেই ছড়িয়ে গেছে এর সক্রিয় কার্যক্রম।
আরব
শায়খুল হাদিস মাওলানা জাকারিয়া (রহ.) লেখেন, 'বিদেশে তাবলিগ কর্মীরা দাওয়াত ও তাবলিগের কাজ হারামাইন শরিফাইন থেকে শুরু করতেন। তা অধিবাসীরা আরবি হোক কিংবা অনারবি। এতে আধ্যাত্মিক উপকার লাভ হওয়ার পাশাপাশি কারেন্সির ব্যাপারে কিছুটা হলেও নিরাপত্তা মিলত। তাছাড়া হজের আগে যেহেতু সারা বিশ্বের হাজিরা মক্কায় একত্রিত হতেন এবং তাবলিগের কাজ নিজের চোখে দেখে নেয়ার সুযোগ পেতেন, তাই তাদের মাঝেও এ কাজের বেশ আগ্রহ সৃষ্টি হতো। ফলে তাবলিগের উদ্দেশ্যে বিভিন্ন দেশে গমনকারী কর্মীরা তাদের পক্ষ থেকে সহযোগিতা লাভ করতেন। এতকিছুর পরও এ কাজ করতে গিয়ে তাবলিগ কর্মীদের অনেক সাধনা করতে হয় সেখানে। হাঁটাহাঁটি, খেজুর খেয়ে জীবনধারণ করা, কখনও বা ক্ষুধার্ত অবস্থায় দিন কাটানো ইত্যাদি। আল্লাহর পক্ষ থেকে অকল্পনীয় সাহায্যও ছিল পাশে। এভাবে সুদান, ইরাক, মিসর, সিরিয়া, জর্ডান, ফিলিস্তিন, লেবানন, আবুধাবি, হাজরামাউত, লিবিয়া, ইয়েমেন, তিউনেসিয়া, আলজেরিয়া, মরক্কোসহ বেশ কয়েকটি আরব দেশে তাবলিগের কাজ ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে।
আফ্রিকা
আরব দেশগুলোতে তাবলিগের কাজ পুরোপুরিভাবে আরম্ভ হওয়ার পর ১৯৫৫ সালে আফ্রিকা ও ইউরোপের দেশগুলোতেও ব্যাপক আকারে দাওয়াত ও তাবলিগের কাজ শুরু হয়। আফগানিস্তান, ইন্দোনেশিয়া, মায়ানমার, মালয়, সিলন এবং আফ্রিকার দূর-দূরান্তের দেশগুলোতে তাবলিগের জামাত পেঁৗছে যায়। গুজরাটের তাবলিগ কর্মীদের উদ্যোগে কেনিয়া, উগান্ডা, তাঞ্জানিয়া, জাম্বিয়া ইত্যাদি দেশে তাবলিগের কাজে ব্যাপক সফলতা আসে।
ইউরোপ
এশিয়া ও আফ্রিকার পর দাওয়াত এবং তাবলিগের কাজ ইউরোপের আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে পড়ে। বস্তুবাদের জয়জয়কার ছিল সেখানকার দেশগুলোতে তখন। আধুনিক মনগড়া বেহায়াপনার সভ্যতা মানবীয় চরিত্রকে প্রায় রসাতলে নিয়ে গিয়েছিল। তাবলিগ কর্মীরা সেখানেও জ্বালিয়েছেন হেদায়েতের বাতি। আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (সা.) এর সুমহান বাণী পেঁৗছে দিতে সক্ষম হয়েছেন লন্ডন, ম্যানচেস্টার ও ব্র্যাডফোর্ড শহরে। প্রচুর কাজও হয়েছে সেখানে। এখনও পুরোদমে হচ্ছে। এছাড়াও আমেরিকার ওয়াশিংটন, বাফেলো, নিউইয়র্ক, ডেট্রয়েট, ডারবান, শিকাগো, মেরিল্যান্ড ও সানফ্রান্সিসকো শহরে দাওয়াত ও তাবলিগের কাজের পরিবেশ এখন সরগরম।
জাপান
আবদুর রশিদ আরশাদ নামক জনৈক তাবলিগ কর্মীর একনিষ্ঠ মেহনতের ফলেই জাপানে তাবলিগের কাজের সূচনা হয়। পরবর্তী সময়ে তারই কঠোর সাধনায় এর গতিও বৃদ্ধি পায়। তার একান্ত প্রচেষ্টায়ই সেখানের বৌদ্ধ মন্দিরগুলোতে কালেমার আওয়াজ গুঞ্জরিত হয়; অসংখ্য জাপানি ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত হয়। এদের মাঝে হাজি উমর মিতা, আবদুল করিম সিতু ও বোসানের নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। তাদের ইসলাম গ্রহণের কাহিনী খুবই রোমাঞ্চকর ও শিক্ষণীয়। সেসব ঘটনা পড়লে মনে হয়, সত্যিই ইসলাম এক সর্বজনীন ও বিশ্বজনীন ধর্ম।
Sunday, January 18
এ সম্পর্কিত আরও খবর
আল্লাহর পরিচয় লাভের উপায়ই ইহকাল ও পরকালে সাফল্য!হাফিজ মাছুম আহমদ, দুধরচকী :পবিত্র কোরআনে আল্লাহতায়ালা নিজের পরিচয় দিয়েছেন এভাবে, আল্লাহ ছাড়া অন্য ক
বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপ ফাইনালে খেলবে খুলুরমাটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়নিজস্ব প্রতিবেদক :বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপ প্রাথমিক বিদ্যালয় ফুটবল টুর্নামেন্ট-২০২৩ এর বিভাগীয় পর্যায়ের ফ
অহংকার আর অহংকারীর ভয়ানক পরিণতি সম্পর্কে ইসলাম যা বলছে আমাদের সমাজে একটি কথা বহুল প্রচলিত, তা হলো- ‘অহংকার পতনের মূল’। প্রতিটি মানুষের মধ্যে দুটি শক
আকস্মিক মৃত্যু থেকে বাঁচার দোয়া মহান রাব্বুল আলামিন আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘প্রত্যেক প্রাণীকে মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হবে। আর কে
জন্মদিন পালন: ইসলামী আইন ও ফেকাহশাস্ত্রবিদরা কী বলেন? বর্তমান সময়ে বিশ্বজুড়ে জন্মদিন পালনের প্রবণতা বেড়েছে ব্যাপকহারে। জন্মদিন পালন করেন না, অথবা জ
মিসরের মুত্তাসিল সনদ পেলেন বাংলাদেশের নেছার আহমাদ আন নাছিরী আন্তর্জাতিক সনদ ও পুরস্কারপ্রাপ্ত হিফজ প্রতিষ্ঠান মারকাজুত তাহফিজ ইন্টারন্যাশনাল মাদরাসার প্র
0 comments:
পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়