Monday, January 26

ভরসা করি চেষ্টাও করি


রোমানা আক্তার: একজন মুসলিমের অন্যতম সেরা বৈশিষ্ট্য আল্লাহ তায়ালার ওপর ভরসা বা তাওয়াক্কুল। এর গুরুত্ব ও মর্যাদা অপরিসীম। আল্লাহর প্রতি ভরসা ছাড়া কোনো বান্দাই এক মুহূর্তও অতিবাহিত করতে পারে না। কেননা এর মাধ্যমে আল্লাহর তাওহিদের সঙ্গে সম্পর্ক গাঢ় ও গভীর হয়। আল্লাহ বলেন, 'আর ভরসা করো সেই জীবিত সত্তার (আল্লাহর) ওপর, যিনি কখনও মৃত্যুবরণ করবেন না।' (সূরা ফোরকান : ৫৮)। এ আয়াতে আল্লাহ তায়ালা নবী (সা.) কে তাঁর ওপর ভরসা করার আদেশ করেছেন। তিনি ছাড়া অন্য কারও কাছে নিজেকে পেশ করবেন না। কেননা তিনি চিরঞ্জীব, তাঁর মৃত্যু নেই। তিনি পরাক্রমশালী, কোনো কিছুই তাঁকে পরাজিত করতে পারে না। যে ব্যক্তিই তাঁর ওপর নির্ভর করবে তার জন্য তিনিই যথেষ্ট- তাকে সাহায্য ও সমর্থন করবেন। আর যে ব্যক্তি আল্লাহ ছাড়া অন্য কারও ওপর ভরসা করবে, সে তো এমন কিছুর ওপর ভরসা করল, যে মৃত্যুবরণ করবে, বিলীন ও ক্ষয় হয়ে যাবে। দুর্বলতা ও অপারগতা তাকে চারদিক থেকে ঘিরে রয়েছে। এ কারণে তার প্রতি ভরসাকারীর আবেদন বিনষ্ট হয়ে যায়, সে হয়ে যায় দিশেহারা। এ থেকেই বোঝা যায়, আল্লাহর ওপর ভরসা করার মর্যাদা কী? তাঁর সঙ্গে হৃদয়ের সম্পর্ক গভীর করার গুরুত্ব কতটুকু? তাওয়াক্কুল তথা আল্লাহর ওপর ভরসা করার অর্থ- দুনিয়া ও আখেরাতের যাবতীয় বিষয়ের কল্যাণ লাভ ও ক্ষতি থেকে বাঁচার জন্য সঠিকভাবে অন্তর থেকে আল্লাহর ওপর নির্ভর করা। বান্দা তার প্রতিটি বিষয় আল্লাহর ওপর সোপর্দ করবে। ঈমানে এ দৃঢ়তা আনবে, কোনো কিছু দান করা না করা, উপকার-অপকার একমাত্র তিনি ছাড়া আর কারও অধিকারে নেই। আল্লাহ তায়ালা মোমিন বান্দাদের তাওয়াক্কুলের প্রতি উদ্বুদ্ধ করে পবিত্র কোরআনে অনেক আয়াত উল্লেখ করেছেন। এর মর্যাদা ও ফলাফল তুলে ধরেছেন। 'তোমরা যদি মোমিন হয়ে থাক তবে আল্লাহর উপরেই ভরসা করো।' (সূরা মায়েদা : ২৩)। তিনি আরও এরশাদ করেন, 'যে ব্যক্তি আল্লাহর ওপর ভরসা করবে, তিনিই তার জন্য যথেষ্ট হবেন।' (সূরা তালাক : ৩)। হাদিস গ্রন্থগুলোতেও তাওয়াক্কুলের গুরুত্ব ও এতে উদ্বুদ্ধ করে অনেক হাদিস বর্ণিত হয়েছে। ওমর বিন খাত্তাব (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, 'তোমরা যদি সঠিকভাবে আল্লাহর ওপর তাওয়াক্কুল করতে তবে তিনি তোমাদের রিজিক দান করতেন, যেমন- পাখিকে রিজিক দান করে থাকেন, তারা খালি পেটে সকালে বের হয় এবং পেটভর্তি করে সন্ধায় ফিরে আসে।' (তিরমিজি)। হাফেজ ইবনে রজব (রহ.) বলেন, তাওয়াক্কুলের ক্ষেত্রে এ হাদিসটিই অনেক তাৎপর্যপূর্ণ। এ থেকে জানা গেল, তাওয়াক্কুলই জীবিকা পাওয়ার অন্যতম মাধ্যম। আল্লাহ তায়ালা বলেন, 'আর যে আল্লাহকে ভয় করে, আল্লাহ তার জন্য নিষ্কৃতির পথ করে দেন এবং তাকে তার ধারণাতীত জায়গা থেকে রিজিক দেন। যে ব্যক্তি আল্লাহর ওপর ভরসা করে তার জন্য তিনিই যথেষ্ট।' (সূরা তালাক : ২-৩)। জাবের বিন আবদুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী (সা.) এরশাদ করেন, 'কোনো প্রাণী তার নির্দিষ্ট রিজিক পরিপূর্ণরূপে না পাওয়া পর্যন্ত সে মৃত্যুবরণ করবে না। সুতরাং তোমরা আল্লাহকে ভয় করো এবং রিজিক অনুসন্ধানের জন্য সুন্দর (বৈধ) পন্থা অবলম্বন করো, যা তোমাদের জন্য হালাল করেছেন তা গ্রহণ করো, আর যা হারাম করেছেন তা পরিত্যাগ করো।' (সহিহ ইবনে হিব্বান)। ওমর (রা.) বলেন, 'বান্দা এবং তার রিজিকের মধ্যে একটি পর্দা রয়েছে। সে যদি অল্পে তুষ্ট হয় এবং তার আত্মা সন্তুষ্ট হয় তবে তার রিজিক তার কাছে সহজে আগমন করবে। আর যদি সীমালঙ্ঘন করে এবং ওই পর্দাকে ফেড়ে ফেলে, তবে তার নির্দিষ্ট রিজিকের অতিরিক্ত কোনো কিছু তার কাছে পৌঁছবে না।' এখানে একটি গুরুত্বপূর্ণ কথা স্মরণ রাখতে হবে, বিশুদ্ধভাবে আল্লাহর ওপর ভরসার সঙ্গে আবশ্যক হলো, জীবিকার উপায়-উপকরণ অনুসন্ধান করা ও কাজ করা- ভরসা করে বসে না থাকা। এখানে ভরসা করার সঙ্গে সঙ্গে আল্লাহকে ভয় করার কথা বলা হয়েছে। আর তা নির্দেশিত যাবতীয় বিষয়ের উপকরণকে শামিল করেছে। সুতরাং নির্দেশিত উপকরণ অবলম্বন না করে বা কাজ না করে শুধু ভরসা করে বসে থাকা বিরাট ধরনের অপারগতা- যদিও এতে তাওয়াক্কুল পাওয়া যায়। সুতরাং ভরসাকে অপারগতায় কিংবা অপারগতাকে ভরসায় রূপান্তরিত করা উচিত নয়। বরং যেসব উপকরণ সে অবলম্বন করবে তার মধ্যে ভরসাও শামিল থাকবে। এ অর্থে একটি হাদিসও বর্ণিত হয়েছে। আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, জনৈক ব্যক্তি জিজ্ঞেস করল, হে আল্লাহর রাসূল! উটটিকে বাঁধার পর আল্লাহর ওপর ভরসা করব? নাকি আল্লাহর ওপর ভরসা করে (না বেঁধেই) ছেড়ে দেব? তিনি (সা.) বললেন, 'আগে তা বেঁধে দাও, তারপর আল্লাহর ওপর ভরসা করো।' (তিরমিজি)। পরিতাপের বিষয় হলো, আল্লাহর নির্দেশ পালন যেখানে পৃথিবীতে আল্লাহ প্রদত্ত জীবিকা লাভের মাধ্যম, সেখানে আমরা জীবিকার সন্ধানে গিয়ে আল্লাহকে সম্পূর্ণ ভুলে যাই। নামাজের সময় বের করতে পারি না।

শেয়ার করুন

0 comments:

পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়