Wednesday, December 17

শেয়ার ব্যবসায় শরয়ি দৃষ্টিভঙ্গি


মোঃ মোজাম্মেল হক: শেয়ার ক্রয়-বিক্রয় একটি বহুল প্রচলিত আয়ের মাধ্যম। বর্তমানে শেয়ার ক্রয়-বিক্রয়কে পার্টনারশিপ ব্যবসা বলা যেতে পারে। কোনো কোম্পানির শেয়ারকে আরবিতে সাহম বলে। সাহম অর্থ অংশ। অর্থাৎ শেয়ার হচ্ছে শেয়ারহোল্ডারদের মালিকানাধীন কোম্পানির সম্পদের অংশবিশেষের নাম। কেউ যদি কোনো কোম্পানির শেয়ার ক্রয় করে তবে শেয়ার সার্টিফিকেটের কাগজটি এ কথাই প্রমাণ করে যে, ওই ব্যক্তি কোম্পানিটির একটি অংশের মালিকানার দাবিদার। যেসব প্রতিষ্ঠান শিল্প ও কৃষি যন্ত্রপাতি উৎপাদন ও ক্রয়-বিক্রয়ের সঙ্গে জড়িত এবং নীতিগতভাবে সুদি কারবার বা সুদের লেনদেন করে না, সেসব প্রতিষ্ঠানের শেয়ার বেচা-কেনা করা জায়েজ। তবে যেসব কোম্পানি সাধারণত সুদ দেয় ও সুদ গ্রহণ করে, তাদের শেয়ার বেচা-কেনা করা বৈধ নয়। কোনো কোম্পানি সুদের সঙ্গে জড়িত হয়ে পড়লে এবং কোনো কারণে আয়ের সঙ্গে সুদের সংমিশ্রণ ঘটলে তা যদি আলাদা করার ব্যবস্থা থাকে তাহলে এ জাতীয় কোম্পানির শেয়ার বেচা-কেনা করা যেতে পারে। কোনো কোম্পানির শেয়ার তখনই ক্রয়-বিক্রয় করা যাবে, যখন সে কোম্পানির কিছু দ্রব্যগত সম্পদেরও মালিক থাকবে। যদি কোম্পানির যাবতীয় সম্পদ তারল্যের আকৃতিতে হয় তাহলে এর শেয়ার প্রকৃত গায়ের মূল্য অনুযায়ী ক্রয়-বিক্রয় করা যাবে। কেননা, এক্ষেত্রে শেয়ার শুধু নগদ মুদ্রার প্রতিনিধিত্ব করে, আর মুদ্রার ক্রয়-বিক্রয় শুধু উভয়দিকে সমান সমান হলেই করা যায়, কম-বেশি হলে সুদ হিসেবে গণ্য হবে। যেসব কোম্পানির মোট মূলধনের (Capital) কিয়দংশ জড়সম্পদ (Non Liquid) আকারে বিদ্যমান থাকে শরিয়া অনুযায়ী সেসব কোম্পানির শেয়ার ক্রয়-বিক্রয় করা যাবে। তা স্থাবর সম্পত্তি বিক্রির মতো গণ্য হবে। এ ব্যাপারে জড়সম্পদ কমপক্ষে ৫১ শতাংশ হওয়া আবশ্যক। তবে কোনো কোনো আলেমের দৃষ্টিভঙ্গি হলো জড়সম্পদ যদি ৩৩ শতাংশ হয় তাহলেও ওই কোম্পানির শেয়ার ক্রয় করা যাবে। এক্ষেত্রে হানাফিদের রীতি হলো যদি কোনো কোম্পানির সম্পদ নগদ অর্থ এবং পণ্য মিশ্রিত হয় তাহলে তার নগদ অংশের অনুপাতের ওপর দৃষ্টিপাত না করেই তার শেয়ার ক্রয়-বিক্রয় করা যাবে। অবশ্য 'জড়সম্পদ আছে' এর প্রমাণ থাকতে হবে। ইসলামী ব্যাংকগুলোর ব্রোকার হাউসের মাধ্যমে শেয়ার ক্রয়-বিক্রয় সম্পর্কে বলা যায় যেসব প্রতিষ্ঠান সরাসরি সুদি কারবারে জড়িত এবং যেসব কোম্পানি হারাম পণ্য উৎপাদন করে কিংবা হারাম পণ্য বা সেবার ব্যবসা করে সেসব প্রতিষ্ঠান বা কোম্পানির শেয়ার ক্রয়-বিক্রয়ে সহায়তা করা বৈধ হবে না। তবে যেসব আর্থিক প্রতিষ্ঠান শরিয়া নীতিমালা অনুসরণ করে চলে এবং যেসব প্রতিষ্ঠান মূলত হালাল পণ্য উৎপাদন করে অথবা হালাল পণ্য বা সেবার ব্যবসা করে তাদের শেয়ার ক্রয়-বিক্রয়ে সহায়তা বা ব্রোকারেজ সার্ভিস দেয়া যেতে পারে। যেমন শরিয়া মোতাবেক পরিচালিত ইসলামী ব্যাংক-বীমা ও এমন কোম্পানি যা সুদের সঙ্গে কোনোভাবে জড়িত নয় তার শেয়ার ক্রয়-বিক্রয়ে ইসলামী ব্যাংকগুলো ব্রোকারের ভূমিকা পালন করতে পারে। নতুন বাজারে অন্তর্ভুক্ত কোনো কোম্পানির শেয়ার এ শর্তে খরিদ করা বৈধ যে, ওই কোম্পানিটি কোনো হারাম কাজের উদ্দেশ্যে গঠিত হয়নি। যেমন- মদ তৈরির কারখানা, সুদভিত্তিক ব্যাংক-বীমা ইত্যাদি। তবে কোম্পানিটি যদি হালাল কাজের উদ্দেশ্যে গঠিত হয় তবে তাতে বিনিয়োগ করা কিছু শর্ত সাপেক্ষে বৈধ হতে পারে- ক. কোম্পানির যাবতীয় কাজ হালাল হতে হবে এবং কোনোরূপ হারাম কাজে জড়িত হবে না। যে কোম্পানি হারাম কারবারে লিপ্ত তার প্রাথমিক শেয়ার বা স্টক মার্কেট থেকে শেয়ার ক্রয় করা বৈধ নয়। খ. কোম্পানির সম্পূর্ণ অর্থ নগদ টাকা না হওয়া। বরং কোম্পানির কিছু স্থায়ী সম্পদ থাকা আবশ্যক। কোম্পানির যদি স্থায়ী সম্পদ না থাকে তবে শেয়ারগুলো তার অভিহিত মূল্যের চেয়ে কম বা বেশি মূল্যে বিক্রি করা জায়েজ হবে না। গ. কোম্পানি যদি নিজেদের ফান্ড বৃদ্ধির জন্য ব্যাংক থেকে সুদভিত্তিক ঋণ নেয় বা নিজেদের অতিরিক্ত অর্থ সুদি ব্যাংকে জমা রাখে, তবে এ কোম্পানির শেয়ার ক্রয়-বিক্রয়ের ব্যাপারে আলেমদের মতভেদ রয়েছে। কোনো কোনো আলেমের মতে, এ জাতীয় কোম্পানির শেয়ার ক্রয় বৈধ নয়। তবে কারও কারও মতে, যদি কোনো শেয়ারহোল্ডার তাদের সুদি কারবারের বিরোধিতা করে বিশেষ করে বার্ষিক সাধারণ সভায় জোরালোভাবে প্রতিবাদ করে বলেন যে, 'সুদি লেনদেন জায়েজ নেই, কাজেই তা বন্ধ কর' সে ক্ষেত্রে তার জন্য এ শেয়ার খরিদ করা জায়েজ বিবেচিত হবে এবং তিনি দায়মুক্ত হবেন। লেখক : মুরাকিব, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড

শেয়ার করুন

0 comments:

পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়