ঢাকা : যুগের সঙ্গে তাল মেলাতে দেশের পুরো আইন-শৃঙ্খলা ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজানো হচ্ছে। তারই ধারবাহিকতায় বৃহস্পতিবার দুপুরে র্যাবের ক্রিমিনাল ডাটাবেজ সিস্টেমের উদ্বোধন করা হয়েছে। এ ডাটাবেজে অপরাধীদের সম্পর্কে ১৫০ ধরনের তথ্য সংরক্ষিত থাকবে বলে জানা গেছে।
এ প্রসঙ্গে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেন, ‘র্যাব ইতোমধ্যেই মানুষের আস্থা অর্জনে সক্ষম হয়েছে। ডাটাবেজের এ পদ্ধতির মাধ্যমে কেউ নিজের নাম, বেশভূষা পরিবর্তন করেও পার পাবে না। এ পদ্ধতির মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর এক খুনিকে দেশে ফিরিয়ে আনারও চেষ্টা চলছে।’
বৃহস্পতিবার দুপুরে র্যাব সদর দপ্তরে আয়োজিত ক্রিমিনাল ডাটাবেজ সিস্টেমের উদ্ধোধনী অনুষ্ঠানে এ সম্পর্কে র্যাব কর্মকর্তারাও বিভিন্ন তথ্য দেন।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন ছিলেন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। এসময় পুলিশের মহাপরিদর্শক হাসান মাহমুদ খন্দকার, র্যাবের মহাপরিচালক মোখলেছুর রহমানসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও উপস্থিত ছিলেন।
র্যাব কর্মকর্তারা বলেন, ২০১১ সালে এই ডাটাবেজের কার্যক্রম শুরুর সাথে র্যাবের প্রশিক্ষিত অপারেটররা দেশের ৬৩ জেলার কারাগারে ফৌজদারি দন্ডপ্রাপ্তদের ডাটা এন্ট্রি করে। ডাটা এন্ট্রির কার্যক্রমে প্রথমে অপরাধীর ছবি নেওয়া হয়। অপরাধীর আঙুলের ছাপ ও চোখের মনির স্ক্যান চিত্রও নেওয়া হয়।
অনুষ্ঠানে বলা হয় ৪০ হাজার অপরাধীর ডাটাবেজ রয়েছে র্যাবের হাতে। ক্রিমিনাল ডাটাবেজ ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমস পদ্ধতিতে দেশের ৬৭টি কারাগারের মধ্যে ৬৪টি কারাগারে থাকা ও র্যাবের হাতে আটক অপরাধীদের ডাটাবেজ সংরক্ষণ করা হয়েছে। সিডিএমএস নামের এই পদ্ধতি ন্যাশনাল আইডি কার্ডের সঙ্গেও সম্পৃক্ত।
ভারতের বর্ধমান বিস্ফোরণের মূল হোতা সাজিদ তার নাম পরিচয় গোপন করে ভারতে অবস্থান করলেও এ পদ্ধতিতে সংরক্ষিত ডাটাবেজের মাধ্যমে তার আসল পরিচয়- রহমত উল্লাহ ওরফে মাসুম ওরফে সাজিদ পাওয়া যায়। এমনকি বঙ্গবন্ধুর এক খুনিকে এ পদ্ধতির মাধ্যমে শনাক্তের প্রক্রিয়া চলছে। এ পর্যন্ত র্যাবের বিভিন্ন ব্যাটালিয়নে যেসব অপরাধী আটক হয়েছে, তাদের তথ্য এই ডাটাবেজে প্রতিদিনই সংরক্ষণ করা হচ্ছে। র্যাবের সব ব্যাটালিয়ন ও তাদের অধীনস্থ ক্যাম্প অপটিক্যাল ফাইবার লাইনের মাধ্যমে র্যাব সদর দপ্তরের সঙ্গে যুক্ত বলেও জানান র্যাব কর্মকর্তারা।
ব্যাটালিয়ন কর্মকর্তারা আরও জানান, র্যাব সদর দপ্তরে স্থাপিত সার্ভারে প্রতিদিন সরাসরি ডাটা এন্ট্রির মাধ্যমে অপরাধীদের তথ্য সংরক্ষণ করা হয়। এর জন্য প্রতিটি ব্যাটালিয়ন ও তাদের কোম্পানির ওয়ার্ক স্টেশন এবং প্রশিক্ষিত জনবল রয়েছে। র্যাব নিজস্ব তত্ত্বাবধানে অপারেটরদের প্রশিক্ষণ দেয়। উল্লেখ্য, র্যাবের ক্রিমিনাল ডাটাবেজ বাংলাদেশে স্থাপিত এ যাবৎ কালের সবচেয়ে বড় ক্রিমিনাল ডাটাবেজ।
র্যাবের কর্মকর্তারা জানান, জঙ্গি নির্মূলে র্যাবের সাফল্যের নেপথ্যে অন্যতম বড় ভুমিকা রেখেছে এ তথ্যভান্ডার। জেএমবি, হুজিসহ বিভিন্ন সন্ত্রাসী ও জঙ্গি তৎপরতার সঙ্গে যুক্তদের তথ্য র্যাবের কাছে থাকায় সহজেই তাদের গ্রেপ্তার করা সম্ভব হচ্ছে। র্যাবের ধারাবাহিক তৎপরতার কারণে জঙ্গি তৎপরতা এখন অনেকটাই স্তিমিত হয়ে এসেছে। প্রত্যেক অপরাধীর নামে একটি কোড নম্বর খোলা হয়েছে। ওই কোড নম্বর চাপলেই বেরিয়ে আসবে সংশ্লিষ্ট অপরাধীর সংরক্ষিত সব তথ্য।
বিশ্বের অনেক উন্নত দেশ অপরাধীদের তথ্য সংরক্ষণের ব্যাপারে এ পদ্ধতিতে অনেক আগে থেকেই কাজ করছে। এ পদ্ধতিতে জঙ্গি ও দুধর্ষ অপরাধীদের তথ্য সংরক্ষণ করা হয়ে থাকে। বাংলাদেশও সে পথে এগোতে চায়। এছাড়া জঙ্গিদের ব্যাপারে ডাটাবেজে সব ধরনের তথ্য থাকছে। জঙ্গিদের পরস্পরের মধ্যে কী ধরনের সম্পর্ক ছিল, এ ধরনের বিবরণও যুক্ত করা হয়েছে। কোনো অপরাধী সম্পর্কে সর্বশেষ কোনো তথ্য পাওয়া গেলে তা ডাটাবেজে যুক্ত হবে। এছাড়া সম্প্রতি পাসপোর্ট ডাটাবেজ এমআরপি’র সঙ্গে সংযোগ স্থাপনের বিষয়টিও প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
ভবিষ্যতে বিআরটিএ’র ড্রাইভিং লাইসেন্স এবং ডিজিটাল রেজিস্ট্রেশনের প্রক্রিয়ার সঙ্গে এ ডাটাবেজের সংযোগ স্থাপনের বিষয়টিও প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। এই ডিজিটাল বা ইন্টারনেটভিত্তিক ডাটাবেজ সকল ধরনের ক্রিমিনাল অপতৎপরতা প্রতিহত করতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করবে।
র্যাবের কোনো অপরাধীকে গ্রেপ্তারেরর পর তার পরিচয় শনাক্ত ও অতীত অপরাধের রেকর্ড (পিসিআর) জানতেই অনেকটা সময় চলে যায়। জিজ্ঞাসাবাদে অপরাধীরা নিজেদের আড়াল করতে মিথ্যা তথ্যও দিয়ে থাকে। মামলার তদন্তের ক্ষেত্রে বিলম্বের এটি অন্যতম একটি বড় কারণ।
অপরাধ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধে এ তথ্যভান্ডার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। এ প্রযুক্তির ফলে একই ব্যক্তির বারবার অপরাধ ঘটানোর প্রবণতা কমে আসবে। কারণ সে জানবে অপরাধ করে তার পক্ষে পালিয়ে থাকা সম্ভব হবে না। মামলার তদন্তের ক্ষেত্রেও এই তথ্যভান্ডার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
র্যাবের এ তথ্যভান্ডারে প্রত্যেক অপরাধী সম্পর্কে ১৫০ ধরনের তথ্য সন্নিবেশিত করা হয়েছে। সর্বাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে অপরাধীর আঙ্গুলের ছাপ ও চোখের চিত্র নেওয়া হয়। এছাড়া অপরাধীর ডিএন সংক্রান্ত তথ্যও রাখা যাবে এ ডাটাবেজে। এর বাইরে ছবি, অতীত অপরাধ সংঘটনের সংখ্যা, অপরাধের ধরন, দন্ড সংক্রান্ত তথ্যও সন্নিবেশিত করা হয়েছে। এসব তথ্যের সঙ্গে অপরাধীর নাম, ঠিকানা, পেশা ইত্যাদি ব্যক্তিগত বিস্তারিত তথ্য রাখা হয়েছে। র্যাবের সম্পূর্ণ নিজস্ব সফটওয়্যার ব্যবহার করে এ তথ্য ভান্ডার তৈরি করা হয়েছে।
0 comments:
পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়