Tuesday, November 11

সাগরের মাঝে ছোট্ট দ্বীপ


ছেড়া দ্বীপ সেন্টমার্টিনের একটি বিচ্ছিন্ন দ্বীপ। সাগরের মাঝে জেগে থাকা ছোট্ট এ দ্বীপটি প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে অনন্য। ঘুরে এসে লিখেছেন- গাজী মুনছুর আজিজ সর্বত্র ছোট-বড় পাথর। কিছু আছে কেয়া গাছ। আর এর চারপাশজুড়ে শুধুই নীল পানির ঢেউ। বলা যায়, সাগরের মাঝখানে ছোট্ট এক পাথুরে দ্বীপ। হ্যাঁ, এর নাম- ছেড়া দ্বীপ। এটি সেন্টমার্টিন দ্বীপের একটি বিচ্ছিন্ন অংশ। আর এ দ্বীপটিই বঙ্গোপসাগরের মাঝে জেগে থাকা বাংলাদেশের মানচিত্রের শেষ বিন্দু। সেন্টমার্টিন থেকে আমরা যখন ছেড়া দ্বীপে পৌঁছাই তখন বিকাল। সেন্টমার্টিন থেকে স্পিডবোটে মাত্র ২০ মিনিটের মাথায় আমরা সেখানে যাই। দ্বীপটিতে পাথরের ছড়াছড়ি। আর দ্বীপের মাঝ বরাবর রয়েছে কেয়া গাছের বন। দ্বীপের একেবারে শেষ মাথায়ও ছোট্ট কেয়া বন রয়েছে। বোট থেকে নেমে আমরা হাঁটতে শুরু করলাম দ্বীপের শেষ প্রান্তের উদ্দেশে। শেষ প্রান্তে পাথরের বড় বড় স্তূপ। যেন পাথরের বাঁধ। বাঁধের মতো সে পাথরের স্তূপের পরই সাগর। সাগরের বড় বড় ঢেউ আছড়ে পড়ছে স্তূপের পাড়ে। আমরা সবাই পাথরের স্তূপের ওপর দাঁড়িয়ে ছবি তুললাম যে যার মতো। তারপর সে পাথরের স্তূপে বসেই আমরা গল্প করতে লাগলাম। আমরা থাকতে থাকতেই সূর্য ডুব দিল সাগরে। সাগরের মাঝে দাঁড়িয়ে সূর্যোদয় দেখার এ অভিজ্ঞতা অসাধারণ। কক্সবাজার, কুয়াকাটা, সেন্টমার্টিনসহ বিভিন্ন স্থানে সূর্যোদয় দেখার অভিজ্ঞাতা হয়েছে। তবে ছেড়া দ্বীপের সূর্যোদয় দেখার অনুভূতি আসলেই অনন্য। এ দ্বীপে মানুষের বসতি নেই। ছোট্ট একটি চায়ের দোকান আছে। নাম- মৌসুমী হোটেল। এখানে চা খাওয়া যায়। এছাড়া আরেকজন ডাব বিক্রি করেন এখানে। আমাদের কেউ কেউ ডাব বিক্রেতার কাছ থেকে ডাব খেল। দ্বীপের চারপাশেই সাগর। আর যে কেয়া গাছের বন, এটা অনেকটা লম্বালম্বিভাবে দাঁড়িয়ে। ভাটার সময় সেন্টমার্টিন থেকে হেঁটেও আসা যায়। চাইলে যে কেউ এ দ্বীপটি প্রদক্ষিণ করতে পারেন। সময় লাগবে ঘণ্টাখানেক। সূর্যোদয় দেখে আমরা এসে উঠলাম বোটে। কিন্তু বোটের নোঙর তুলতে পারছে না চালক। নোঙর তুলতে তুলতে ঘণ্টাখানেক সময় লেগে গেল। তারপর অন্ধকারেই আমরা বোটে রওনা হলাম সেন্টমার্টিনের উদ্দেশে। নিরাপদেই পৌঁছালাম সেন্টমার্টিন। বোট থেকে নেমে বাজারে এসে চা-নাশতা খেলাম। তারপর যে যার মতো ছড়িয়ে গেলাম বাজারে। সেন্টমার্টিনে আজ আমাদের শেষ রাত। তাই সবাই যার যার মতো কেনাকাটা করতে লাগল। কেনাকাটা বলতে বার্মিজ চকোলেট, আচার, সাবান- এগুলোই এ বাজারে বেশি। আর আছে শুঁটকির দোকান। কমবেশি আমরা সবাই চকোলেট, আচার আর শুঁটকি কিনলাম। তারপর ফিরে এলাম রিসোর্টে। প্রয়োজনীয় তথ্য : ঢাকার ফকিরাপুল ও আরামবাগ থেকে টেকনাফের উদ্দেশে শ্যামলী, হানিফ, রিলাক্স, সৌদিয়া, সেন্টমার্টিন বাস ছেড়ে যায় সকাল ও রাতে। ভাড়া নন-এসি ৯৫০ ও এসি ১ হাজার ৪৫০ টাকা। টেকনাফ থেকে কেয়ারি সিন্দাবাদ, কেয়ারি ক্রুজ অ্যান্ড ডাইন, কুতুবদিয়া জাহাজ প্রতিদিন সকাল ৯টায় ছেড়ে যায় সেন্টমার্টিনের উদ্দেশে। ভাড়া যাওয়া-আসা ৫০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকা। সেন্টমার্টিন থেকে ট্রলারে বা স্পিডবোটে যাওয়া যাবে ছেড়া দ্বীপ। ট্রলারে প্রতিজন আসা-যাওয়া ২০০ টাকা। চাইলে স্পিডবোট বা ট্রলারও রিজার্ভ নেয়া যাবে। ছেড়া দ্বীপে থাকা-খাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। তাই ছেড়া দ্বীপে গেলে সেন্টমার্টিন থেকে খাবার নিয়ে যেতে হবে। থাকা-খাওয়ার জন্য সেন্টমার্টিনে রয়েছে বেশ কিছু হোটেল। ১ হাজার থেকে ৩ হাজার টাকায় থাকা-খাওয়া যাবে এসব হোটেলে। এছাড়া আমাদের মতো থাকতে পারেন নজরুলপাড়ার সায়রী ইকো রিসোর্টে। এখানে ৪ জনের কটেজ ভাড়া ৩ হাজার ও ২ জনের রুম ১ হাজার ৫০০ টাকা। খাওয়া খরচ গড়ে প্রতি বেলা প্রতি জন ২০০ থেকে ২৫০ টাকা। যোগাযোগ : ০১৭১১২৭৭২৫০। ঢাকা থেকে ছেড়া দ্বীপের প্যাকেজের জন্য যোগাযোগ করতে পারেন ০১৭১৪৪৪৪৩৩০ নম্বরে। ছবি : লেখক

শেয়ার করুন

0 comments:

পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়