Thursday, November 6

মা-বাবার সেবায় জান্নাত


শায়খ আলী বিন আবদুর রহমান হুজাইফী যাবতীয় অধিকার ও কর্তব্য সঠিকভাবে আদায় করলে এর ইহ ও পরকালীন লাভ পরিশেষে বান্দার নিজের দিকেই ফিরে আসে। আল্লাহ বলেন, 'যারা বিশ্বাস স্থাপন করে এবং সৎকর্ম সম্পাদন করে আমি সৎকর্মশীলদের পুরস্কার নষ্ট করি না।' (সূরা কাহ্ফ : ৩০)। যে অধিকার ও কর্তব্য সঠিকভাবে আদায় না করে তাহলে সে নিজেই ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তার নিজেকেই শাস্তি ভোগ করতে হবে। এতে আল্লাহ তায়ালার কোনো ক্ষতি হবে না। আল্লাহ তায়ালা জগদ্বাসী থেকে অমুখাপেক্ষী। আল্লাহ তায়ালা বলেন, 'হে মানুষ, তোমরা আল্লাহর গলগ্রহ। আর আল্লাহ, তিনি অভাবমুক্ত, প্রশংসিত।' (সূরা ফাতির : ১৫)। বান্দার ওপর আল্লাহর অধিকার হচ্ছে তার তাওহিদের সংরক্ষণ করা। এর জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে রয়েছে অনেক বড় সওয়াব। আর যে শিরকের মাধ্যমে এবং বিপদাপদে ও প্রয়োজন পূরণে আল্লাহ ব্যতীত অন্য কাউকে ডেকে এবং তাদের ইবাদতের মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালার এ অধিকারকে নষ্ট করবে, তাদের ওপর ভরসা করবে সে ক্ষতিগ্রস্ত ও বিফল। আল্লাহ তার কোনো আমলই গ্রহণ করবেন না। পরকালে তাকে বলা হবে, 'জাহান্নামিদের সঙ্গে এতে প্রবেশ করো। তবে তওবার মাধ্যমে আল্লাহর সঙ্গে শিরকের অপরাধ ব্যতীত।' যদি কেউ তার ওপর অর্পিত কোনো হক বা কর্তব্য ছেড়ে দেয়, সে দুনিয়া ও আখেরাতের সওয়াব থেকে বঞ্চিত হবে। যদি ত্রুটি করে তাহলে তার ত্রুটির পরিমাণ অনুপাতে কল্যাণ থেকে বঞ্চিত হবে। আনন্দ-বেদনা, সুখ-দুঃখ ও প্রাপ্তি -অপ্রাপ্তির মাঝেই মানুষের জীবন। একে অপরের অধিকার কেড়ে নিলেও জীবন থেমে থাকে না। তবে সব বিচার হবে আল্লাহ তায়ালার কাছে। রাসূল (সা.) বলেন, 'কেয়ামতের দিন সব হক স্ব-স্ব ব্যক্তির কাছে প্রদান করা হবে। এমনকি সিংওয়ালা ছাগলের কাছ থেকে সিংমুক্ত ছাগলের হক নেয়া হবে।' (সহিহ মুসলিম)। আল্লাহ তায়ালার অধিকারের পর সবচেয়ে বড় ও প্রধান অধিকার হচ্ছে মাতাপিতার অধিকার। এ অধিকার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও প্রধান হওয়ায় কোরআনে আল্লাহ তায়ালা তাঁর অধিকারের সঙ্গে মাতাপিতার অধিকারকে যুক্ত করে উল্লেখ করেছেন। আল্লাহ তায়ালা বলেন, তোমার পালনকর্তা আদেশ করেছেন যে, "তাঁকে ছাড়া অন্য কারও ইবাদত করো না এবং পিতামাতার সঙ্গে সদ্ব্যবহার করো। তাদের মধ্যে কেউ অথবা উভয়েই যদি তোমার জীবদ্দশায় বার্ধক্যে উপনীত হয়, তবে তাদের 'উহ' শব্দটিও বলো না এবং তাদের ধমক দিও না এবং বল তাদের সঙ্গে শিষ্টাচারপূর্ণ কথা। তাদের সামনে ভালোবাসার সঙ্গে, নম্রভাবে মাথানত করে দাও এবং বল, হে পালনকর্তা, তাদের উভয়ের প্রতি রহম করো, যেমন তারা আমাকে শৈশবকালে লালনপালন করেছেন।" (সূরা বনি ইসরাঈল : ২৩-২৪)। মাতাপিতার অধিকারকে আল্লাহ তায়ালা বড় করে দিয়েছেন এ জন্য, তিনি তাদের মাধ্যমে তোমাকে অস্তিত্বে এনেছেন এবং সৃষ্টি করেছেন। আর মা তো গর্ভে ধারণসহ বিভিন্ন স্তরে অনেক বড় বড় কষ্ট স্বীকার করেছেন। বাস্তবে বিভিন্ন ধরনের ধ্বংস ও ভয়াবহতার সম্মুখীন হয়েছেন। আল্লাহ তায়ালা বলেন, 'আমি মানুষকে তার পিতামাতার সঙ্গে সদ্ব্যবহারের আদেশ দিয়েছি। তার জননী তাকে কষ্টসহকারে গর্ভে ধারণ করেছে এবং কষ্টসহকারে প্রসব করেছে।' (সূরা আহকাফ : ১৫)। আর দুধপান করানো, সে তো আল্লাহ তায়ালার নিদর্শনগুলোর একটি। অন্যদিকে পিতা সন্তানকে লালনপালন করে। তার রিজিক ও জীবিকার জন্য প্রচেষ্টা করে। অসুস্থ হলে চিকিৎসার ব্যবস্থা করে। সন্তানের ঘুমের জন্য মাতাপিতা রাত জাগরণ করে। তার প্রশান্তির জন্য তারা কষ্ট করে। তার সব ধরনের সুব্যবস্থার জন্য নিজেদের ওপর সার্বিক চাপ সহ্য করে। সন্তানের সুখের জন্য বিভিন্ন কষ্ট স্বীকার করে। তার পরিপক্বতা ও পরিপূর্ণতার জন্য তাকে শিক্ষা প্রদান করে। মাতাপিতার অধিকার ও কর্তব্য আদায় করা কখনও সম্ভব নয়। তবে একটি অবস্থা আছে যার মাধ্যমে তাদের প্রতি কর্তব্য আদায় করা সম্ভব। রাসূল (সা.) বলেন, 'সন্তান তার পিতার অবদানের মূল্য তখন দিতে পারবে যখন সে তার পিতাকে দাস পেয়ে ক্রয় করে মুক্ত করবে।' (সহিহ মুসলিম)। মাতাপিতা জান্নাতপ্রাপ্তির প্রধান মাধ্যম। যে তাদের সঙ্গে সদ্ব্যবহার করবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। রাসূল (সা.) বলেন, 'তার নাক ধুলায় ধূসরিত হোক, তার নাক ধুলায় ধূসরিত হোক, তার নাক ধুলায় ধূসরিত হোক। বলা হলো_ কার ইয়া রাসূলুল্লাহ? তিনি বলেন, যে তার মাতাপিতাকে অথবা দুইজনের একজনকে বৃদ্ধাবস্থায় পেল অথচ জান্নাতে যেতে পারল না। (সহিহ মুসলিম)। যদি মাতাপিতাকে সন্তুষ্ট করা যায় তাহলে আল্লাহ তায়ালাও সন্তুষ্ট। রাসূল (সা.) বলেন, 'আল্লাহর সন্তুষ্টি পিতার সন্তুষ্টিতে এবং আল্লাহ তায়ালার অসন্তুষ্টি পিতার অসন্তুষ্টিতে।' (তিরমিজি)। মাতাপিতার প্রতি সদ্ব্যবহার হচ্ছে গোনাহ ও পাপ ব্যতীত সব ক্ষেত্রে তাদের আনুগত্য করা। তাদের নির্দেশ ও অসিয়ত পূরণ করা। তাদের সঙ্গে কোমল আচরণ করা। তাদের হৃদয়ে আনন্দ দেয়া। হাত খুলে তাদের জন্য খরচ করা। তাদের সঙ্গে দয়া ও রহমতের আচরণ করা। তাদের চিন্তায় চিন্তিত হওয়া। তাদের বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে সুন্দর আচরণ করা। তাদের আত্মীয়দের সঙ্গে সদয় আচরণ করা। তাদের কোনো ধরনের কষ্ট ও সমস্যা দূর করা। আজীবন তাদেরে ভালোবাসা। তাদের জীবদ্দসায় ও মৃত্যুর পরে তাদের জন্য এস্তেগফার করা। আর উপরোলি্লখিত যে কোনো বিষয়ের বিপরীত করাই হচ্ছে তাদের সঙ্গে অবাধ্যতা ও অসদাচরণ। মাতাপিতার সঙ্গে অবাধ্যতা বেড়ে যাওয়া কেয়ামতের আলামত। আর মাতাপিতার সঙ্গে সবচেয়ে বড় অবাধ্যতা হচ্ছে, সন্তান আপন মাতাপিতার ভরণ-পোষণ ও খেদমত বাদ দিয়ে তাদের বৃদ্ধাশ্রমে পাঠিয়ে দেয়া। এটা ঈমানদারের চরিত্র নয়। এমনকি অনুপম চরিত্রও নয়। এছাড়া বড় অবাধ্যতা হচ্ছে, মাতাপিতার সঙ্গে অহঙ্কার করা। তাদের মারধর করা। গালাগাল, অপমান ও তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করা। রাসূল (সা.) বলেন, '৫০ হাজার বছরের দূরত্বে জান্নাতের ঘ্রাণ পাওয়া যায়। আর অবাধ্য (সন্তান) এ ঘ্রাণও পাবে না।' (তাবরানি)। ৭ মহররম মদিনার মসজিদে নববিতে প্রদত্ত জুমার খুতবার সংক্ষিপ্ত অনুবাদ করেছেন মদিনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র মহিউদ্দীন ফারুকী

শেয়ার করুন

0 comments:

পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়