Friday, October 31

অপচয় রোধ করুন


মাওলানা বায়েজীদ হোসাইন সালেহ আজ বিশ্ব মিতব্যয়িতা দিবস। মিতব্যয় মানে পরিমিত ব্যয়, আয় বুঝে ব্যয়। আর আয় অনুসারে যিনি ব্যয় করেন বা পরিমিতভাবে ব্যয় করেন, তাকে বলা হয় মিতব্যয়ী। মিতব্যয়ী হওয়া মোমিনের বৈশিষ্ট্য। মিতব্যয়িতা বা ব্যয়ের ক্ষেত্রে মধ্যপন্থা অবলম্বন করা এবং অপচয় পরিহার করা ইসলামের নির্দেশ। ইসলামের মধ্যে যেসব কাজ বা অভ্যাস নিন্দনীয় ও ঘৃণিত তার মধ্যে অপচয় অতিশয় একটি নিন্দনীয়, অপছন্দনীয় ও ঘৃণিত কাজ। অপচয়কারীকে আল্লাহ পছন্দ করেন না। তাই তো পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ তায়ালা তাঁর প্রিয় বান্দাদের অপচয় করতে নিষেধ করেছেন। আল্লাহ তায়ালা এরশাদ করেন, 'আত্মীয়স্বজনকে তার হক দান করো এবং অভাবগ্রস্ত মুসাফিরকেও, এবং কিছুতেই অপচয় করো না। নিশ্চয় অপচয়কারীরা শয়তানের ভাই। শয়তান স্বীয় প্রতিপালকের প্রতি অতিশয় অকৃতজ্ঞ।' (সূরা বনি ইসরাইল : ২৬-২৭)। অন্যত্র আল্লাহ তায়ালা ঘোষণা করেছেন, 'তোমরা খাও ও পান করো এবং অপচয়-অপব্যয় করো না। নিশ্চয় আল্লাহ অপচয় ও অপব্যয়কারীদের পছন্দ করেন না।' (সূরা আরাফ : ৩১)। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত, একদা প্রিয় নবী (সা.) হজরত সাদ (রা.) এর কাছ দিয়ে যাচ্ছিলেন, তিনি তখন অজু করছিলেন। প্রিয় নবী (সা.) বললেন, হে সাদ! এ অপচয় কেন? সাদ বললেন, অজুর মধ্যেও কি অপচয় আছে? তিনি বললেন, হ্যাঁ, তুমি প্রবহমান নদীর তীরেই থাক না কেন। (আহমদ)। ব্যয়ের ক্ষেত্রে মিতব্যয়ী হওয়া অত্যন্ত উত্তম কাজ। অন্যদিকে অপচয় করা কবিরা গোনাহ। একটি জাতির উন্নতি ও অগ্রগতির পেছনে অপচয় বিরাট প্রতিবন্ধক। আমাদের পরিবার, সমাজ ও দেশে অপচয় করা একটি নিয়মিত অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। বাসাবাড়িতে, অফিস-আদালতে, কলকারখানায়, রাস্তাঘাটে, মসজিদ-মাদরাসাসহ সর্বত্র পানি, গ্যাস, বিদ্যুৎ ও জাতীয় সম্পদের মারাত্মক অপচয় হচ্ছে। সরকারি সম্পদের আমরা অনেক অপচয় করে থাকি। যেমন_ বিবাহ একটি অতি উত্তম কাজ। কিন্তু দেখা যায়, অপচয় দিয়েই এ কাজটি শুরু করা হয়। অতিরিক্ত সাজসজ্জা করে, লাইটিং করে বিকাল থেকে শুরু করে সকাল ৭টা থেকে ৮টা পর্যন্ত বিদ্যুৎ জ্বালিয়ে, সীমাহীন অপচয় করে জাতীয় সম্পদের ধ্বংস সাধন করছি। এক্ষেত্রে সরকারকে ফাঁকি দিতে সক্ষম হলেও এ অপচয়ের জন্য একদিন আল্লাহর কাছে জবাবদিহি করতে হবে। এছাড়া অতিরিক্ত খাওয়া, খেতে না পেরে খানা ফেলে দেয়া, অযথা খানা নষ্ট করা_ খাদ্যের ক্ষেত্রে অপচয়। প্রিয় নবী (সা.) এরশাদ করেছেন, আদম সন্তান তার নিজের পেটের চেয়ে নিকৃষ্টতর কোনো পাত্র পূর্ণ করেনি। দেহকে সুস্থ-সবল, কর্মক্ষম রাখতে যতটুকু খাদ্য প্রয়োজন ততটুকুই একজন মানুষের জন্য যথেষ্ট। যদি কোনো মানুষের খাদ্যস্পৃহা প্রবল হয় অর্থাৎ বেশি খাওয়ার ইচ্ছা দমন করতে না পারে, তবে পেটের এক-তৃতীয়াংশ খাদ্যের জন্য, এক-তৃতীয়াংশ পানীয়র জন্য ও এক-তৃতীয়াংশ শ্বাস-প্রশ্বাসের জন্য রাখবে। (সহিহ বোখারি)। বেশি কথা বলা, বাজে কথা বলা কথার ক্ষেত্রে অপচয়। অতিরিক্ত পোশাক ব্যবহার করা, আয় বুঝে ব্যয় না করা, স্বীয় পরিজন, বাবা-মার জন্য ব্যয় না করে পরের জন্য খরচ করা মারাত্মক অপচয়। বিশেষ করে আল্লাহ প্রদত্ত ধনসম্পদ দ্বীনি পথে ব্যয় না করে দুনিয়াবি সুনাম-সুখ্যাতির জন্য ব্যয় করাটাও বড় অপচয়। এ পৃথিবীতে আগত সব নবী-রাসূল, সাহাবায়ে কেরাম এবং যারাই যুগে যুগে আল্লাহর প্রিয়ভাজন হয়েছেন, তারা কেউই অপচয়কারী ছিলেন না। অপচয় করা একটি শয়তানি স্বভাব। আমাদের প্রিয় জন্মভূমি সোনার বাংলাদেশের আয়তনের তুলনায় জনসংখ্যা অনেক বেশি। কিন্তু সম্পদ কম। অথচ সেই তুলনায় আমরা অপচয় করি অনেক বেশি। এখন প্রশ্ন হলো, এ অপচয় রোধে আমাদের করণীয় কি? কী করলে আমরা অপচয় রোধ করে সহজেই মিতব্যয়ী হতে পারব? এর জন্য সর্বাগ্রে নিজের বিবেককে জাগ্রত করতে হবে এবং নিজ পরিবার থেকেই তা শুরু করতে হবে। স্বামী-স্ত্রীকে সচেতন হতে হবে, অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সজাগ থাকতে হবে, মসজিদে নামাজ পড়তে গেলে মুসলি্লকে সতর্কতার সঙ্গে পানি ও বিদ্যুৎ খরচ করতে হবে। সর্বোপরি অপচয় রোধে একে অন্যকে বোঝাতে হবে। বিশেষ করে পবিত্র জুমার দিন দেশের তিন লক্ষাধিক মসজিদের মিম্বার থেকে ইমাম-খতিবরা যদি মিতব্যয়িতার উপকার এবং অপচয়-অপব্যয়কারীর পরকালীন শাস্তির কথা তুলে ধরে এ ব্যাপারে জোরালো ভূমিকা রাখতে পারেন, তাহলে কোটি কোটি ধর্মপ্রাণ মুসলমান অপচয় রোধে এগিয়ে আসবেন নিঃসন্দেহে। আমরা খাদ্যদ্রব্যের মধ্যে বেশি অপচয় করে থাকি। অথচ বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের লাখ লাখ মানুষ প্রতি বছর খাদ্যের অভাবে মারা যাচ্ছে। এসব অসহায়, বুভুক্ষ, অন্ন-বস্ত্রহীন মানুষের দিকে তাকিয়েও কি আমরা আমাদের বিবেককে জাগ্রত করতে পারি না? আমরা কি সজাগ ও সচেতন হব না? অপচয় রোধে কি আমরা এগিয়ে আসব না? অবশ্যই আমাদের এগিয়ে আসতে হবে। আমাদের দেশকে বিশ্ব দরবারে একটি উন্নত রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে হলে দল-মত-জাতি, ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।

শেয়ার করুন

0 comments:

পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়