আবু বক্কর সিদ্দিক, সুন্দরগঞ্জ (গাইবান্ধা): আমি রংপুর যাচ্ছিলাম বিশেষ এ কাজে। সুন্দরগঞ্জ পেরিয়ে ৬ কিঃ মিঃ (সুন্দরগঞ্জ- রংপুর মিনি বিশ্বরোড) অতিক্রম করতে না করতেই দুর থেকে লক্ষ করলাম নৌকার পাল। চমকে উঠলাম; এখানে আবার নৌকা এলো কোথায় থেকে! একটু বিমোহিত হতেই মটর সাইকেলে পালের কাছাকাছি এসে বুঝতে পারলাম এটি একটি স্কুলের সাইনবোর্ড, যেটি অব্যশই ব্যতিক্রমী। এর ৪ কিঃ মিঃ দুরে বামনডাঙ্গা রেলওয়ে স্টেশন। স্কুলের নামের নীচে লেখাগুলো আমায় আরও বেশী অভিভুত করল, লেখাগুলো দেখুন আপনাকেও চমৎকৃত করবে -“বিনয়ের সঙ্গে অতি মধুর বচনে, সতত করিবে তুষ্ট ছোট বড় জনে, হইবে জগত জন বান্ধবে তোমার, ভালবাসিবেক সবে অন্তরে অপার”। উপরের কথাগুলো মধ্যযুগীয় সংস্কৃতির কথা হলেও বর্তমান অবক্ষয়ের এই সময়ও একটি শিশু মনের জন্য প্রয়োজনীয় উপাদান। যদি একটি শিশুর মন এই কথাগুলো ধারণ করতে পারে, তবে অবশ্যই সে একজন আর্দশবান দেশপ্রেমিক রূপে গড়ে উঠতে পারবে। মনে মনে এত কিছু চিন্তার উদ্বেগ যখন হল, তখন তো আমায় ভিতরে প্রবেশ করতেই হবে। আসলেই প্রতিষ্ঠানটির ভিতর দেখার কৌতুহল আমার বাড়ল। ভিতরে প্রবেশ করতেই হাতের ডানে মস্তবড় এক পদ্ম ফুল দেখে আমার মনে আবারও একটি কবিতার দু’টি লাইন ভেসে আসল- “বড় হও দাদা ঠাকুর, তোমায় আমি তিল প্রহরের বিল দেখাতে নিয়ে যাবে, যেখানে পদ্মফুলের পাতার উপর সাপ আর ভোমর খেলা করে”। আসলে আজ একটি শিশুর প্রাকৃতিক পরিবেশে পদ্ম ফুলের রূপ আশ্বাদনের সুযোগ খুবই সীমিত আর কর্তৃপক্ষের এমন আয়োজন সত্যিই আমি তৃপ্ত। সামনে তাঁকাতেই আর একটি ভাষ্কর্য। যেখানে স্বাধীনতার জন্য লড়াকু বীর-বাঙ্গলী। এতে ও একটি শিশু স্বাধীনতার ত্যাগ ও তার মর্যাদা স¤পর্কে জানতে পারবে। অন্যপাশে না তাকিয়ে বাগানের পাশ দিয়ে আমি যখন প্রবেশ করছিলাম তখন একটি অভিবাদন ÒWel Come to our child in Heaven” যেটি আমার শিরোনাম করতে বাধ্য করেছে। কারণ-এত নান্দনিকতা কার্টুনের মাঝে! একটি শিশুর স্বর্গই বলা যায় একে। ডানে আমার খুব প্রিয় গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্য “গোলঘর ” (খানা ঘর)। যেখানে আমার পরিচয় পর্ব সেরে নিলাম। তো যাই হোক দেখুন এখন পর্যন্ত আমি আপনারদের এই বিদ্যাপীঠের নাম বলিনি। বিদ্যালয়টির নাম “নজরুল প্রি-ক্যাডেট স্কুল, শিবরাম” ভিতরে প্রবেশ করে হাতের ডানে ছাত্রাবাস এবং বামে ছাত্রীনিবাস। সামনে তাকাতে আর এক চমৎকৃত হলাম একটি মুরাল চিত্র দেখে। মনে হচ্ছিল প্রথমে ঐ জায়গায় যাব। মনের অদম্য ইচ্ছাকে চেপে রাখলাম। প্রথমে ছাত্রাবাস তারপরে ছাত্রীনিবাস পরিদর্শন করে বের হতে-হতে এর পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা দেখে মনে হচ্ছিল প্রকৃতিতে যেমন বৃষ্টি হয়ে যায়, অর্থাৎ বৃষ্টির পর গাছের সবুজ পাতায় সূয়লোক যেভাবে খেলা করে, ঠিক সে রকম চকচকে, তকতকেই এর পরিবেশ দেখতে বসলাম এর সামগ্রী চিত্র, অর্থাৎ স্কুলের শিক্ষা কার্যক্রামের অংশ বিশেষ। আমি আশ্চর্য হলাম বিদ্যালয়টির প্রতিষ্ঠাকাল ২০০৮ খ্রিঃ। প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষা ২০১০ খ্রিষ্ঠাব্দে প্রথম অংশ গ্রহণ করে সে বছরই ১৪ জন পরীক্ষায় অংশ গ্রহনকারী শিক্ষার্থীর মধ্যে উপজেলা মেধায় ১ম, ২য়, ৩য় ও ৪র্থ স্থানসহ ৯ জন বৃত্তি লাভ করে। যা রাজশাহী বিভাগের সেরা দশের স্কুলের সম্মান বহন করে। প্রতিষ্ঠাকাল থেকে অদ্যবধি সুন্দরগঞ্জ উপজেলা প্রশাসন কর্তৃক আয়োজিত বিভিন্ন প্রতিযোগিতা মুলক ডিসপ্লে, কুচকাওয়াজে প্রথম পুরস্কার লাভ করে। এর পরবর্তীতে রেজাল্টের ধারাবাহিকতাও একইরূপ ২০১৩ খ্রিঃ। মোট পরীক্ষার্থী ২৭ জনের মধ্যে জিপিএ- ৫, সহ ১৪ জনের বৃত্তি লাভ করে। নিভৃত পল্লীর মাঝে এর রেজাল্ট আকষর্ণীয়। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে বুঝলাম সহকার্যক্রম, অর্থাৎ সঙ্গীত, নৃত্য, অভিনয়সহ প্রতিটি বিষয়ে প্রতিষ্ঠানটি অত্যন্ত সচ্ছল। ওই যে বললাম প্রথমে-যেখানে যেতে চেয়েছিলাম মুর্যাল চিত্রের সেই ঘরে এতক্ষণে সেখানে পৌঁছিলাম। দেখলাম মানচিত্রে বাংলাদেশ ও ভৌগলিক কক্ষ। এই কক্ষের ভিতরে বাংলাদেশর অভ্যুদয়, মুক্তিযুদ্ধ, বিভিন্ন জেলা পরিচিতিসহ দেশের মানচিত্রকে একনজরে জানার চমৎকার উপায়। যেখানে সুন্দরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবু রাফা মোহাম্মদ আরিফ মন্তব্য দিয়েছেন- “ ভৌগলিক কক্ষ ও মানচিত্রে বাংলাদেশ সত্যিই শিক্ষা কার্যক্রমে বাস্তবমুখী শিক্ষা প্রদানের জন্য একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ”। আমিও তার সাথে একমত। এতক্ষণ থেকে যে আলোকবর্তীকা প্রতিষ্ঠানের চুলচেড়া বিশ্লেষণ করলাম। অর্থাৎ একটি আলো ছাড়া যেমন অন্য আলো জ্বালানো সম্ভব নয়, তেমনি প্রদান যে আলোকণা থেকে আমরা এত আলোর ছড়া ছড়ি দেখছি, সেই আলোকবর্তীকা প্রতিষ্ঠাতা ও অধ্যক্ষ খ.ম.রাশেদুল ইসলাম। আমি তাকে সাদা মনের মানুসই বলব। কারণ এই ব্যক্তিটি শিক্ষা জীবন শেষ করতে না করতেই মানব সন্তানকেউ আদর্শ মানবরূপে গঠনের কাজ শুরু করে অর্থাৎ শিক্ষকতাই পেশায় শিবরামের দ্বীপশিখা ছাত্রাবাসে যোগ দেন । এরপর কমিটি, তারপর তিনি শিবরামের দায়িত্ব পালন করেন ৭ বছর। আর যেখানকার চুলচেড়া বিশ্লেষণের ফসল “নজরুল প্রি-ক্যাডেট স্কুল, শিবরাম”। প্রতিষ্ঠানটির মান আমার কাছে অত্যন্ত আকষর্ণীয় ও গ্রহণ যোগ্য হয়েছে। আপনি তা পরখ করে নিতে পারেন। এব্যাপারে প্রতিষ্ঠাতা ও অধ্যক্ষ খ.ম. রাশেদুল ইসলামের সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন- বেকারের পরিবর্তে প্রতিটি মানুষ হক মেকার (কারিগর) ও কামনা ও প্রত্যয়ে’র ধারা অব্যাহত রাখবে ইনশাল্লাহ্।
খবর বিভাগঃ
ফিচার
0 comments:
পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়