Monday, October 27

বাংলার প্রাচীন রাজধানী ঈশা খাঁর স্বপ্নের নগরী সোনারগাঁও


এম আর কামাল, নারায়ণগঞ্জ: ঢাকার খুব কাছাকাছি যারা বেড়াতে যেতে চান, তাদের জন্য সোনারগাঁও হতে পারে প্রথম পছন্দ। বাংলার প্রাচীন রাজধানী ঈশা খাঁর স্বপ্নের নগরী সোনারগাঁও। এখানে দেখার মতো অনেক কিছু রয়েছে। শুধু ভ্রমণ নয়, দলবেঁধে বনভোজন আয়োজনেরও সুযোগ রয়েছে এখানে। সোনারগাঁওয়ে প্রথমেই আপনি খোঁজ নেবেন, আবহমান গ্রামবাংলার লোক সংস্কৃতির ধারাকে পুনরুজ্জীবন, সংরক্ষণ ও বিপণনের জন্য গড়ে ওঠা বাংলাদেশ লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশন ভবনটি কোথায়। ১৯৭৫ সালের ১২ মার্চ শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন এই ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা করেন। এখানে একটি জাদুঘর রয়েছে। জাদুুঘরের পাশেই রয়েছে শতবর্ষী অট্টালিকা। এটি বড় সর্দার বাড়ি নামে খ্যাত। এই ভবনে রয়েছে ১০টি গ্যালারি। গ্যালারিগুলো কাঠ খোদাই কারুশিল্প, পটচিত্র ও মুখোশ, আদিবাসী জীবনভিত্তিক নিদর্শন, গ্রামীণ লোক জীবনের পরিবেশ, তামা কাসা পিতলের লোকজ বাদ্যযন্ত্র ও পোড়া মাটির নিদর্শন ইত্যাদি দিয়ে সাজানো। ভবনের পূর্বে রয়েছে লোকজ স্থাপত্যকলায় সমৃদ্ধ জয়নুল আবেদীন স্মৃতি জাদুুঘর। জাদুুঘর ছাড়াও এখানে আছে লাইব্রেরি, ডকুমেন্টেশন সেন্টার, ক্যান্টিন, সেমিনার হল, ময়ুর পংক্ষী কারুমঞ্চ, গ্রামীণ উদ্যান, হরেক রকম বৃক্ষ, মনোরম লেক, লেকে ঘুরে বেড়ানোর জন্য নৌকা এবং শৌখিনদের মৎস্য শিকারের ব্যবস্থা। জাদুুঘরের পূর্ব প্রান্তে রয়েছে মনোরম পার্ক ‘প্রেম কুঞ্জ’। জাদুুঘরের পশ্চিম প্রান্তে বিশাল এলাকাজুড়ে তৈরি করা হয়েছে কারুশিল্প গ্রাম। এখানে কারুপণ্য প্রদর্শন এবং বিক্রি করা হয়। প্রতি বছর শীতে লোক ও কারুশিল্প জাদুুঘরের বিশাল চত্বরে বসে মাসব্যাপী মেলা। লোক কারুশিল্প জাদুুঘর প্রতি বুধবার এবং বৃহস্পতিবার বন্ধ থাকে। অন্যান্য দিন সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত এটি খোলা থাকে। জাদুুঘরে প্রবেশ ফি ১৫ টাকা মাত্র। জাদুুঘর থেকে বেরিয়ে ঠিক উত্তর দিকে গেলেই ঐতিহাসিক পানাম নগরী। এখানে রয়েছে হাজার বছরের প্রাচীন স্থাপত্যকলা ও শিল্পের অনুপম নিদর্শন। পানাম নগরের রাস্তার দু’পাশে শত শত বছরের পুরনো অট্টালিকা আপনাকে ইতিহাস সন্ধানে অনুপ্রাণিত করবে। এর চারদিক পরিখাবেষ্টিত। নগরের দু’দিকে রয়েছে ফটক। একপাশ দিয়ে বয়ে গেছে পংক্ষীরাজ খাল। একটু উত্তর দিকে রয়েছে পংক্ষীরাজ সেতু (পানাম সেতু) ও নীলকুঠি। ঈশা খাঁর সময়কালে এই নগরী বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য ছিল। কেননা রাজকার্য পরিচালিত হতো এই পানামনগরী থেকেই। এর প্রমাণ এখানকার স্থাপত্য নিদর্শনগুলোর মধ্যেই পাওয়া যায়। আর এ কারণে পানাম গড়ে উঠেছিল বিশেষ নান্দনিক বৈশিষ্ট্য নিয়ে, যা বর্তমান প্রজন্মের কাছে ইতিহাসের স্বাক্ষরস্বরূপ। এ নগরীতে আরো রয়েছে খাজাঞ্চিখানা, ঠাকুর ঘর, গুপ্তপথ, মঠ, মন্দির, পুরনো লোক কারুশিল্প জাদুুঘর ভবন, পোদ্দার বাড়ি, ৪০০ বছরের প্রাচীন টাকশাল বাড়ি, বিনোদন পিকনিক স্পট, টুরিস্ট হোম এবং ১১১ বছরের প্রাচীন বিদ্যাপীঠ সোনারগাঁও জি আর ইনস্টিটিউশন। আরও যা রয়েছে সোনারগাঁওয়ে আরও অনেক কিছু রয়েছে যা দেখে পর্যটকের মনে বিস্ময়বোধ জাগে। লোক কারুশিল্প জাদুুঘরের ২নং প্রবেশপথ দিয়ে বেড়িয়ে পশ্চিম দিকে গেলে দেখতে পাবেন প্রাচীন মুসলিম স্থাপত্যকীর্তি গোয়ালদী আলাউদ্দিন হোসেন শাহী মসজিদ। সোনারগাঁও মোগড়াপাড়া চৌরাস্তা থেকে একটু দক্ষিণ দিকে গেলে দেখা যাবে প্রাচীন সব ইমারতরাজি এবং বারো আউলিয়ার মাজার। হজরত শাহ ইব্রাহিম দানিশ মন্দ এবং তার বংশধরদের মাজার রয়েছে এখানে। ইউসুফগঞ্জের মসজিদ, দমদমা গ্রামে দমদম দুর্গ, সুলতান গিয়াস উদ্দিন আযম শাহের সমাধি, পাঁচ পীরের মসজিদ ও মাজারও এখানেই। জাদুুঘরে যাওয়ার পথে দিঘীর পাড় গ্রামের পূর্বে রয়েছে ঐতিহাসিক মসলিনের স্মৃতি বিজড়িত গ্রাম খাসনগর। এই সোনারগাঁওয়ে বারদীতেই হিন্দু সমপ্রাদায়ের তীর্থভূমি লোকনাথ ব্রহ্মাচারী আশ্রম। আশ্রমের একটু পূর্বদিকে ভারতের পশ্চিম বঙ্গের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতিবসুর পৈত্রিক বাড়ি। কোথায় থাকবেন ঢাকার খুব কাছাকাছি বলে সারাদিন ঘুরে সন্ধ্যায় ফিরে আসা যায়। এ কারনে সোনারগাঁও ভ্রমণের ক্ষেত্রে সাধারণত কেউ রাতে থাকার পরিকল্পনা করেন না। কিন্তু ব্যতিক্রমও আছে। দুটো দিন থেকে যেতে চান কেউ কেউ। বেসরকারি উদ্যোগে গড়ে ওঠা রেস্টহাউসই তাদের ভরসা। এছাড়া এখানে রাত্রীযাপনের তেমন ভালো কোনো হোটেল কিংবা মোটেল নেই। রেস্টহাউসে থাকতে হলে, ০১৭১২০০২৩০৪, ০৬৭২৩-৫৬৩৭০ নম্বরে আগে থেকে যোগাযোগ করে যেতে হবে। এছাড়া সরকারি অতিথিদের জন্য জাদুঘরের নিজস্ব গেস্টহাউস রয়েছে। যেভাবে যাবেন রাজধানী ঢাকা থেকে ২৬ কিলোমিটার পূর্বে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক দিয়ে মোগড়াপাড়া চৌরাস্তা হয়ে উত্তর দিকে পর্যটন নগরী সোনারগাঁয়ের অবস্থান। রাজধানীর গুলিস্তান থেকে বাসে যাওয়া যাবে। সময় লাগবে এক থেকে দেড় ঘণ্টা। ভাড়া ৩৫ টাকা। বাসে এলে মোগড়াপাড়া চৌরাস্তায় নেমে রিকশা নিয়ে সোনারগাঁও লোক কারুশিল্প ফাউন্ডেশনে যেতে হবে। রিকশাভাড়া নেবে ২০-২৫ টাকা। সোনারগাঁওতে পিকনিকের জন্য মনোরম পরিবেশে বিভিন্ন পিকনিক স্পট রয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো, ঈশা খাঁ ট্যুরিস্ট হোম, সূর্বণগ্রাম পিকনিক স্পট, ছায়া নীড়, নয়ন, বেইস পিকনিক স্পট, সামিয়া সোনালি পিকনিক স্পট, নিরিবিলি, বৈশাখী এবং অঙ্গন।

শেয়ার করুন

0 comments:

পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়