Tuesday, October 8

গ্যাস উৎপাদন বাড়লেও ঘাটতি কমেনি

ঢাকা : বর্তমান সরকারের গত সাড়ে চার বছরে গ্যাসের উৎপাদন বেড়েছে ঠিকই কিন্তু ঘাটতি কমেনি। গত কয়েক বছরে (২০০৯ থেকে ২০১৩) ৬৮০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস জাতীয় গ্রীডে যোগ হয়েছে। একই সময়ে বিভিন্ন ক্ষেত্র থেকে ১৭০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উৎপাদন কমেছে। ফলে গত চার বছরে ৫১০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস জাতীয় গ্রীডে বাড়তি যোগ হয়েছে। কিন্তু বর্তমানে যে গ্যাসের চাহিদা সে তুলনায় প্রায় ২৫০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস ঘাটতি হচ্ছে। ২০১১-১২ অর্থবছরে বার্ষিক গড়ে ৯৬২ বিলিয়ন ঘনফুট চাহিদার বিপরীতে ৭১৩ বিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করা হয়েছে। ঐ বছর গ্যাস ঘাটতির পরিমান ছিল ২৪৯ বিলিয়ন ঘনফুট। সরবরাহের দিক থেকে এই পরিমান গ্যাস অন্য যে কোন সময়ের চেয়ে বেশি। গত সাড়ে চার বছরে গ্যাসের উত্তোলন এবং সরবরাহ বাড়ানো হয়েছে প্রায় ৭০০ মিলিয়ন ঘনফুট। বর্তমানে দুই হাজার ৫০০ মিলিয়ন ঘনফুট চাহিদার বিপরীতে সরবরাহ করা হচ্ছে দুই হাজার ২০০ মিলিয়ন ঘনফুট। ঘাটতি প্রায় ৩০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় গ্যাস সংকট তীব্র আকার ধারন করেছে। বিশেষ করে আবাসিক গ্রাহকরা চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। গ্যাস সংকট শুধু রাজধানী নয় সারাদেশেই একই অবস্থা বিরাজ করছে। হোটেল-রেস্তোরাঁয় রান্না ব্যাহত হচ্ছে। বাধ্য হয়ে অনেক হোটেলে ব্যবহার করা হচ্ছে এলপি গ্যাস। গ্যাস সংকটে শুধু আবাসিক গ্রাহকরাই নন, শিল্প ও বাণিজ্যিক গ্রাহকরাও দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন। রাজধানীর আশে পাশের শিল্প এলাকাগুলোতে গ্যাস সংকট মারাত্নক আকার ধারণ করেছে। সাভার, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জে গ্যাস সংকটের কারণে ছোট ছোট কারখানাগুলো বন্ধ হতে বসেছে। বড় কারখানাগুলোতে টার্গেট অনুযায়ি উৎপাদন করতে পারছে না। তিতাস কর্তৃপক্ষ জানায়, সিলেট থেকে যে গ্যাস ঢাকা আসছে তা এলেঙ্গা থেকে একটা অংশ আলাদা হয়ে যমুনা নদীর উপর দিয়ে বঙ্গবন্ধু সেতু দিয়ে উত্তরাঞ্চলে চলে যাচ্ছে। বাকী অংশ আসছে সাভার হয়ে মানিকগঞ্জ পর্যন্ত। ওদিকে ধনুয়া দিয়েও অন্য একটি পাইপে গ্যাস আসছে নারায়গঞ্জ হয়ে। দুই দিকেরই শেষ মাথায় সাভার শিল্প এলাকা। চাপ কমতে কমতে একবারে কমে যায় এখানে এসে। সাভার-গাজীপুর এলাকায় ৪৮৪টি শিল্প প্রতিষ্ঠান আছে। এছাড়া ২৫০টি ক্যাপটিভ বিদ্যুৎ কেন্দ্র, ২৫০টি সিএনজি স্টেশন এবং ২১৪টি বাণিজ্যিক শিল্প প্রতিষ্ঠান আছে। শিল্প ছাড়া গ্যাস সংকট আছে বিদ্যুৎ আর সার কারখানায়ও। দেশের সাতটি সার কারখানায় প্রায় ২৮০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের চাহিদার বিপরীতে সরবরাহ করা হচ্ছে প্রায় ১৭০ থেকে ১৮০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস। বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোতে প্রায় ১ হাজার মিলিয়ন ঘনফুট চাহিদার বিপরীতে সরবরাহ করা হচ্ছে সাড়ে ৯০০ মিলিয়ন ঘনফুটের মতো। এদিকে রাজধানীর সিএনজি স্টেশনগুলোতে গ্যাসের চাপ কমে যাওয়ায় যানবাহনের চালক ও মালিকদের কষ্টের শেষ নেই। যানবাহনে সিএনজি ভরতে লম্বা লাইনে তাদের ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হচ্ছে। গত কয়েক বছর প্রায় পুরো সময়টা জুড়ে নতুন গ্যাস সংযোগ দেয়া বন্ধ ছিল। নিয়ম অনুযায়ি নতুন সংযোগ না দিলেও চাহিদা বেড়েছে। যার পুরোটাই হয়েছে অবৈধ ভাবে। আর অবৈধভাবে এই চাহিদা বাড়ার ফলে গ্যাসের ব্যবহারে অগ্রাধিকার ঠিক করা যায়নি। অন্যদিকে গ্যাস আছে কি নেই তা বিচার না করেই এবং যথাযথ স্থান ঠিক না করে বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের অনুমতি দেয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে সরকারের নীতি নির্ধারনী পর্যায়ে দেখা দিয়েছে সমন্বয়হীনতার অভাব। গ্যাসের অনুমতি না নিয়ে এখন পর্যন্ত প্রায় দুই হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। গতকয়েক বছরে ৩০২টি বড় প্রতিষ্ঠানে অবৈধভাবে গ্যাস সংযোগ দেয়া হয়েছে। এরমধ্যে ২২১টি শিল্প কারখানা। সিএনজি স্টেশন দুইটি আর ক্যাপটিভ বিদ্যুৎ কেন্দ্র আছে ৫৯টি। এছাড়া আবাসিক বাড়িতে অবৈধ সংযোগ দেয়া হয়েছে এক লাখ ৬৪ হাজার ৮০৩টিতে। পেট্রোবাংলা জানায়, বর্তমানে যে গ্যাস উৎপাদন হচ্ছে তারমধ্যে ২৫০ মিলিয়ন ঘনফুট কম গ্যাস সরবরাহ করা হচ্ছে তিতাস গ্যাসে। গত বৃহস্পতিবার মোট গ্যাসের এক হাজার ৩৭৫ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস পেয়েছে তিতাস। এছাড়া বাংলাদেশ গ্যাস সরবরাহ কোম্পানি ৩৩৫ মিলিয়ন ঘনফুট, কর্ণফুলি ১৮৬ মিলিয়ন, জালালাবাদ ২১৯ মিলিয়ন এবং পশ্চিমাঞ্চল গ্যাস কোম্পানি ১১৩ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করেছে। দেশে প্রতিদিন উৎপাদিত মোট গ্যাসের সাড়ে ৪২ শতাংশ যাচ্ছে বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোতে। বাকী গ্যাস অন্যখাতগুলোতে ভাগ করে দেয়া হয়। শিল্প-বাণিজ্য, আবাসিক ও সিএনজি খাতে দেয়া হচ্ছে প্রায় ১ হাজার ১০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস। 

শেয়ার করুন

0 comments:

পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়